অতি সম্প্রতি, ২০১৭ সালে গণতন্ত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী সেটা প্রকাশ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবনতি ঘটেছে। গত ৩১ জানুয়ারি ‘দি ইকোনমিস্ট’-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক প্রস্তুত করা এই সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্রের সূতিকাগার, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন মহানগরী থেকে এ ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয়। এটি বহুলপ্রচারিত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ (ইআইইউ) হচ্ছে, ‘দি ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট গ্রæপের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ। তাদের ২০১৬ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৪তম; ২০১৭ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম; অর্থাৎ মাত্র এক বছরে এই সূচকে আট ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ দেশের অবস্থান ১৭তম। সূচক প্রকাশকারীরা দেশগুলোকে কিছু ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে থাকেন। ইআইইউ গণতন্ত্র প্রসঙ্গে মূল্যায়ন করতে গিয়ে পৃথিবীর দেশগুলোকে একাধিক ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। একটি ক্যাটাগরি বা বিভাগ হলো ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’। ‘গুগল’-এর অনুবাদ মোতাবেক, এ শব্দটির বাংলা অনুবাদ হলো অকুলীন। হাইব্রিড শব্দটির সাথে বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মূল্যায়নে, আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক হাইব্রিড নেতা আছেন (কিন্তু তিনি শব্দটির ব্যাখ্যা দেননি। চাষাবাদ বা কৃষি ক্ষেত্রে বীজ বিভিন্ন প্রকারের এবং এক প্রকারের বীজ বা সিডকে বলা হয় হাইব্রিড। দি ইকোনমিস্ট অনুসৃত নীতিমালা মোতাবেক, ‘হাইব্রিড’ বলতে এমন ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আছে। এক. যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়; দুই. যেখানে বিরোধী দল এবং বিরোধী প্রার্থীদের ওপর সরকারের চাপ নৈমিত্তিক ব্যাপার; তিন. যেখানে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার এবং দুর্বল আইনের শাসন বিদ্যমান; চার. যেখানে নাগরিক সমাজ দুর্বল; পাঁচ. যেখানে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং ছয়. যেখানে সাংবাদিকদের হয়রানি এবং তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।
আমরা গণতন্ত্রে বাংলাদেশের নিম্নমুখী অবস্থান তুলে ধরলাম। গণতান্ত্রিক চর্চার অনেক কর্মকাÐের মধ্যে বা রেওয়াজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, পার্লামেন্ট নির্বাচন। বাংলাদেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন সাধারণত পাঁচ বছর পরপর হয়। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে। নির্বাচনটিতে ভোটারের উপস্থিতি এত কম ছিল, ভোটারদের ভীতি দেখানো এত বেশি ছিল, জাল ভোট দেয়ার প্রবণতা এত বেশি ছিল, সর্বোপরি প্রতিদ্ব›িদ্বতা না থাকার বিষয়টি এত বেশি নগ্ন ছিল যে, সব ধরনের আলোচক ও সমালোচক বলতে বাধ্য হয়েছেন, ওই নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিহাসে একটি কলঙ্ক। সে নির্বাচনে ৩০০ পার্লামেন্টারি আসনের মধ্যে ১৫৪টিতেই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় একেকজন ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের। বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক, ৩০০ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা যাকে সমর্থন দেবেন, তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। ৩০০-এর মধ্যে ১৫১ জনকে মেজরিটি বা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলা যায়। এই ১৫১ জন যাকে সমর্থন দেবেন, তিনিই প্রধানমন্ত্রী। যারা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হয়েছেন, আসলে তাদের ওপর নির্বাচনী এলাকার মানুষের আস্থা আছে কি না, এটা যাচাই বা পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে নেই। এই বিষয়টি সংবিধানের একটি বড় ধরনের দুর্বলতা। আমাদের সংবিধান মোতাবেক, ৩০০ আসনের মধ্যে সবাই যদি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হন, তাহলেও ওই পার্লামেন্ট বৈধতা পাবে। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে যে পার্লামেন্ট, সে পার্লামেন্টের নৈতিক ভিত্তি, তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি শূন্য থেকে কম হলেও, আমাদের সংবিধান তাকে বৈধতা দেয়। এই প্রেক্ষাপটেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কলঙ্কের নির্বাচন হতে পেরেছে। অনেক কারণ আছে; কিন্তু বিশেষত নির্বাচনটির কারণেই বাংলাদেশের ভোটাররা বলছেন এবং বলবেন, দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নিম্নমুখী, চর্চার মানদÐ নিম্নমুখী, চর্চার ক্ষেত্রগুলো সঙ্কোচনমুখী এবং সম্পূর্ণ ক্ষেত্রটি ভয়ভীতি ও দলীয় স্বার্থ রক্ষার প্রবণতায় পরিপূর্ণ।
এ অনুচ্ছেদটি পড়তে গিয়ে, পাঠকের মনোযোগ আরেকটু গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য আবেদন জানাই। কারণ, সবাই মনে করে সংবিধান নিয়ে আলোচনা শুধু ‘জজ-ব্যারিস্টার’ সাহেবরাই করবেন। আমি মনে করি, সংবিধান জনগণের জন্য, সংবিধানের বক্তব্য জনগণের জন্য, তাদের অধিকারের রক্ষাকবচ এই সংবিধান; অতএব এই সংবিধান আমাদের সবাই বুঝতে হবে। পত্রিকার কলাম একটি উন্মুক্ত ফোরাম, এখানে ‘চাপাবাজি’র কোনো জায়গা নেই; কিন্তু যেহেতু সংবিধান নিয়ে আলোচনা করতে আমরা অভ্যস্ত নই, তাই নিবেদন করে রাখছি এখানে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। একটি দেশে গণতন্ত্র কতটুকু থাকবে কী থাকবে না তার অন্যতম নির্দেশক হলো ওই দেশের সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধান অনেক প্রশংসা পেয়েছে; কিন্তু এই সংবিধানে যে দুর্বলতা আছে এ কথাটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয় না। কথাটি আগেও লিখেছি; আজো লিখছি। আমাদের সংবিধানের একটি দুর্বলতার কথা উপরের অনুচ্ছেদে তুলে ধরেছি। আরেকটি দুর্বলতা হলো, সংবিধান যদি কেউ না মানে বা সংবিধান যদি কেউ ভঙ্গ করে, তাহলে কী হবে? আরেকটু স্পষ্ট করে বলি, সংবিধানের দেয়া বিধান যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো রাজনৈতিক সরকার অমান্য করে অথবা বাস্তবায়ন করতে অনীহা প্রকাশ করে, তাহলে সেই সরকার বা দলের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ হবেÑ এই কথা সংবিধানে বলা নেই বা কোনো আইনে বলা নেই।
আমরা সুনির্দিষ্ট উদাহরণে যাবো। বাংলাদেশের সংবিধানের যতগুলো অনুচ্ছেদ বা আর্টিক্যাল আছে, সেগুলোকে ১১টি ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। যথা : প্রথম ভাগ ‘প্রজাতন্ত্র’; দ্বিতীয় ভাগ ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’, তৃতীয় ভাগ ‘মৌলিক অধিকার’; চতুর্থ ভাগ ‘নির্বাহী বিভাগ’; পঞ্চম ভাগ ‘আইন সভা’ (ইংরেজি লেজিসলেচার)। পঞ্চম ভাগে আইন সভা শিরোনামের অধীনে ‘প্রথম পরিচ্ছেদ-সংসদ’, শিরোনামের নিচে আছে ৬৫ থেকে ৭৯ অনুচ্ছেদ। ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদের শিরোনাম ‘সংসদ-প্রতিষ্ঠা’। ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদের শিরোনাম হচ্ছে ‘সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা’। আলোচনাকে বিশদ পরিসর থেকে সুনির্দিষ্ট পরিসরে নিয়ে আসছি। আলোচনাটির উদ্দেশ্য, ৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সংবিধানের একটি নির্দেশকে বা বিধানকে, কী নিয়মে সবাই মিলে লঙ্ঘন করে যাচ্ছি, সেটা তুলে ধরা।
বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিক্যাল ৬৬-তে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, যেকোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের একজন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা কিংবা নির্বাচিত হওয়ার পথে অযোগ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলো। এই আর্টিক্যাল ৬৬-এ উপ-অনুচ্ছেদ আছে পাঁচটি। যথাÑ উপ-অনুচ্ছেদ (১) থেকে (৫)। আর্টিক্যাল ৬৬, উপ-অনুচ্ছেদ-২ এবং অতঃপর ২-এর উপ-উপ অনুচ্ছেদ চ এখানে উদ্ধৃত করছি। তারপর উদ্ধৃত করব আর্টিক্যাল ৬৬-এর উপ-অনুচ্ছেদ (৩)।
৬৬ (২) ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি (ক)... (খ)... (গ)... (ঘ)... (ঙ)... (চ)। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; অথবা (ছ)...।’ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬-এর উপ-অনুচ্ছেদ (৩) উদ্ধৃত করছি। ‘এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোনো ব্যক্তি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপ-মন্ত্রী হইবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হইবেন না।’ পাঠকদের জন্য আমি বিষয়টিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সরল করে উপস্থাপন করছি।
কোনো ব্যক্তি যদি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে চান, তাহলে তার কতগুলো যোগ্যতা থাকতে হবে। এই যোগ্যতার কথা আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(১)-এ বর্ণিত আছে। অনুচ্ছেদ ৬৬(২)-এ বর্ণিত আছে, কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন ব্যক্তি নির্বাচিত হতে পারবেন না। একই অনুচ্ছেদ ৬৬(২)-এ বর্ণিত আছে, নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরও, শপথ গ্রহণের পরও, দায়িত্ব পালন শুরু করার পরও, কী কী কারণে একজন সংসদ সদস্য তার পদ হারাতে বাধ্য। যে সব কারণে একজন দায়িত্বরত সংসদ সদস্য তার পদ হারাতে বাধ্য, তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ওই সংসদ সদস্য যদি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কোনো কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ‘লাভজনক পদ’কে ইংরেজি সাংবিধানিক পরিভাষায় বলা হচ্ছে অফিস অব প্রফিট। অর্থাৎ কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করার পর যদি কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হন ও সেই লাভজনক পদের দায়িত্ব পালন শুরু করেন, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না। সম্মানিত পাঠক, প্রশ্ন করতে পারেন, লাভজনক পদ কোনটি? প্রশ্নটি এভাবেও করা যায় যে, কোন কোন পদ লাভজনক নয়? বাংলাদেশের সংবিধান নিজেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছে। সংবিধান মোতাবেক, একজন সংসদ সদস্য যদি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী যাকে সচরাচর ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী, নিযুক্ত হন বা দায়িত্ব পালন করেন তাহলে এগুলো লাভজনক পদ বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ একজন সংসদ সদস্য এই সাতটি বা সাত প্রকারের পদ ব্যতীত অন্য যেকোনো পদ যদি ধারণ করেন এবং সেই পদে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে বলা হবে, তিনি লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত আছেন এবং লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকার কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। এটাই আমাদের সংবিধানের বিধান; এবং এই বিধান বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংবিধান কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। লাভজনক পদের অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি হলোÑ একজন সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিয়োগ করা; আরেকটি উদাহরণ হলো, আরেকজন সংসদ সদস্যকে খেলাধুলার যেকোনো একটি ফেডারেশনের বা বোর্ডের সভাপতি নিয়োগ করা। এখন একটি স্বাভাবিক কৌতূহলের প্রসঙ্গ আনছি। কৌতূহলটি হলোÑ যে পদগুলোকে ‘লাভজনক’ পদ বলা হচ্ছে, সে লাভজনক শব্দটির মধ্যে কেন ‘লাভ’ শব্দটি যোগ হলো, সেখানে লাভের কী আছে? উত্তর অনেকটা এ রকম: ওই লাভজনক পদগুলো অধিকার করায় যে লাভ পাওয়া যায় সেগুলো আর্থিক, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী এবং প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারকারী ভাবমূর্তি প্রদান করে। অথচ একজন সংসদ সদস্য সংসদের কার্যাবলি এবং সংসদসংক্রান্ত কার্যাবলি নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা।
আজকের কলামের সর্বশেষ অংশ বেগম খালেদা জিয়া বনাম শেখ হাসিনাকে নিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দু’টি নামের গুরুত্ব, এই দু’জন সম্মানিত ব্যক্তির অবদান এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে আমরা আলোচনায় যাচ্ছি না। এই দু’জন দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষতম নেতা। এই দু’টি প্রধান দলের অনুসারী-ভক্ত-কর্মী সংখ্যা কত তা ঠিক জানি না। যদি সুষ্ঠু সুন্দর প্রক্রিয়ায়, বাংলাদেশের এই মুহূর্তের ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন ভোটারকে বলা হয়, এই দু’জন নেত্রীর মধ্যে কার পক্ষে কতজন ভোট দেবেন; তাহলে আমার মূল্যায়নে, বিশ্বাসে আমার প্রাক্কলনে এবং তিন ভাগের দুই ভাগ ব্যক্তি পছন্দ করবেন বেগম জিয়াকে। গত ৯ বছরে বাংলাদেশ উন্নতি করেনিÑ এই কথা কোনো পাগলেও বলবে না। অপর পক্ষে মানুষ নামের যেকোনো বোধসম্পন্ন প্রাণী অবশ্যই বলবেনÑ উন্নতি করতে গিয়ে কত বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য কত বড় বড় অবিচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির অন্যতম উদাহরণ হলোÑ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা। ওয়ান-ইলেভেন সরকার তথা ‘উদ্দিন’-গণের সরকার বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনা, উভয়ের বিরুদ্ধে বহু মামলা দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। অপরপক্ষে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তার সরকারের শক্তি ও ক্ষমতাকে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পরিপূরক ও সম্পূরক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ দিকে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোকে অব্যাহত রেখে পরিচালনা করা হয়েছে।
আমার মূল্যায়নে, ক্ষমতাসীনমহল চায় বেগম জিয়া এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে বিলুপ্ত করতে এবং ১৯৭৫-এর আদলে; কিন্তু ‘পরিশোধিত’রূপে কার্যত একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে। সঙ্কট হচ্ছে, গণতন্ত্র থাকবে কী থাকবে না। ১৬ বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সম্বোধন করে টেররিজম প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘হয় তুমি আমার পক্ষের, নয় তুমি আমার শত্রু; মাঝখানে কিছু নেই।’ ক্ষমতাসীন দলের ধারণাকে আমরা এ রকম বলতে পারি : ‘আমি যা বলি সেটাই গণতন্ত্র, আমরা যা করি সেটাই সংবিধান।’ প্রধানমন্ত্রী সিলেটের জনসভায় বলেছেন, তিনি সংবিধানের বাইরে এক চুলও যাবেন না। দেশের মানুষের প্রশ্ন: ’৯৬ সালে সংবিধানের বাইরে যেতে এত সংগ্রাম কেন করেছিলেন? তবুও আশা করি, সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সহাবস্থানে সম্মত হবেন সবাই।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন