শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান যানজটের জন্য যে সব বিষয়কে দায়ী করা হয় রাস্তায় যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি তার অন্যতম। শহরের যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মানসহ এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা ও উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাস্তবে এর কোন লক্ষ্যনীয় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছেনা। আর কিছুদিন বাদেই বর্ষা শুরু হবে। শহরের পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই অনেক রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এখন বৃষ্টিপাত না থাকলেও শুধুমাত্র খোঁড়াখুড়ির কারনে রাস্তাগুলো যান চলাচলের অযোগ্য থাকায় ট্রাফিক জ্যাম অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। যানজট নিরসনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে আমাদের নগরকর্তাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে তাদের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত মেয়র নির্বাচনের আগে ঢাকার মেয়রদ্বয় যানজটসহ নগরবাসির দুর্ভোগ লাঘবের প্রতিশ্রæতির পাশাপাশি ক্লিন সিটি, গ্রীন সিটি ইত্যাদি সব কাল্পনিক ও স্বপ্নবিলাসি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে নগরবাসির প্রশংসা কুড়ালেও তার আকষ্মিক মৃত্যুর পর সবকিছু যেন পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মেয়র হিসেবে যারাই আসুন, উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর দীর্ঘদিন ফেলে রাখার দু:সহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় নগরবাসি।

যানজট নিরসনে এবং রাস্তায় যত্রতত্র খোঁড়াখুড়ির বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস গ্যাস, রাজউকসহ অন্তত ২৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে সমন্বয় করার দাবী উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি মেয়ররাও এই দাবী পুরণে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর প্রতিশ্রæতি দিলেও মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও সেই কাঙ্খিত সমন্বয় এখনো অধরাই রয়ে গেছে। আমাদের সরকার যখন জাতির সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রাজনৈতিক রূপকল্প তুলে ধরছেন, তখন খোদ রাজধানী শহরের ১০ মিনিটের পথ পার হতে দুইঘন্টা সময় পার করতে হচ্ছে নগরবাসিকে। এ এক দু:সহ বাস্তবতা। রাজধানী শহরকে এহেন বাস্তবতা থেকে মুক্ত করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সব সম্ভাবনা ব্যহত হতে পারে। রাজধানী শহরকে বসবাসের অযোগ্য ও অর্থনৈতিকভাবে স্থবির রেখে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারেনা। সরকারী ও সেবাদানকারী স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নানাবিধ উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি বাড়ি, হাউজিং, বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের কারণেও রাস্তা খোড়াখুড়ি ও রাস্তার উপর নির্মান সামগ্রি ফেলে রাখার কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সরকারী নির্মান ও সংস্কারের সময়সীমা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এ দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসত।
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সরকারী কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতরগুলোর অদক্ষতা ও অযোগ্যতা এখনো প্রশ্নাতীত। সারাদেশে হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ভগ্নদশায় পড়েছে। এসব রাস্তায় যান চলাচল ঝুঁকি ও ঝক্কিপূর্ণ। রাজধানী ঢাকা শহর ছাড়াও দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলাশহরের অবস্থা প্রায় অভিন্ন। একদিকে রাস্তা ও নগর উন্নয়নের নামে রাজস্ব থেকে শত শত কোটি টাকার বরাদ্দ অবাধ লুটপাট চলছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরের একশ্রেনীর কর্মকর্তা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে সমন্বিত লুটপাট, অদক্ষতা ও অস্বচ্ছতার শিকার আমাদের নাগরিক জীবন। উন্নয়নের নামে একেকটি রাস্তা খণন করে বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখার অসংখ্য বাস্তব চিত্র দেখা যাচ্ছে নগরজুড়ে। উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা ও প্রাক্কলিত ব্যয় কোনটাই মানা হচ্ছেনা। উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খনন করে মাসের পর মাস ধরে ফেলে রাখা হচ্ছে, সময়ক্ষেপনের ফলে নির্মান ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে বার বার সময় ও বাজেট বাড়ানো হয়। এমনকি ফ্লাইওভারের মত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও এমন বাস্তবতা দেখা গেছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পেছনে একদিকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অস্বচ্ছতা, কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা প্রমাণ করছে। অন্যদিকে এর পেছনে রয়েছে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির যোগসাজশ। উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নির্ধারিত সময়সীমা ও মান রক্ষায় প্রয়োজনীয় কার্যকর নজরদারি ও আপসহীন ভূমিকা ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন