\ এক \
মানবতার ধর্ম ইসলাম নারী পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পুত: পবিত্র জীবন যাপনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা করেছে। নোংরামির অভিশাপ থেকে সুরক্ষা দানে ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে। কেননা নারী-পুরুষের পবিত্রতা ও সতিত্ব রক্ষার বাস্তব হাতিয়ার হল বিবাহ ব্যবস্থা। বিয়ে হল পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশে এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক যার ফলে নারী পুরুষ দু’জনে একত্রে বসবাস এবং পরস্পরের যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ন বৈধ হয়ে যায়। বিবাহ একটি শুভ ও ধমীর্য় অনুষ্ঠান যা পালনের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষের ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা হয়। এই বিবাহ অনুষ্ঠানে আনন্দ উল্লাসের নামে বেহায়পনা বা অশ্লীল অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিবর্তে ধর্মীয় রীতিনীতি বজায় রাখা অবশ্যই কর্তব্য। ইসলাম বৈরাগ্য নীতির কোন স্থান নেই। ইসলামে সামর্থবান ব্যক্তিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আদেশ দেয়। সামর্থ থাকা সত্তে¡ও বিবাহ না করা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ। বিবাহ কেবল ভোগ বিলাসের জন্য নয় বরং বিয়ে হল প্রত্যেক নর-নারীর জীবনকে পুত: পবিত্র, সুন্দর এবং সার্থক করার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মাধ্যম।
পবিত্র কোরআন শরীফে বিয়ে এবং স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থাকে নবী রাসুলের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ দান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, “হে নবী আপনার পূর্বেও আমি অনেক নবী-রাসুল পাঠিয়েছি এবং তাদের জন্য স্ত্রী ও সন্তানের ব্যবস্থা করেছি”। আয়াতের মর্মবানী থেকে বুঝা যায় বিবাহ আল্লাহ পাকের প্রদত্ত একটি ঐশী বিধান। একই প্রসঙ্গে সুরা নূরে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “এবং বিয়ে দাও তোমাদের এমন সব ছেলে মেয়েদের স্বামী স্ত্রী বা স্ত্রী নেই; বিয়ে দাও তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা বিয়ের যোগ্য হয়েছে”। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর উপর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। সূরা বাকারার ১৮৭ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের জন্য পোষাক স্বরূপ। অর্থাৎ পোষাক যেমন করে মানব দেহকে সকল প্রকার নগ্নতা, অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখে ঠিক তেমনি বিবাহর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে সেভাবে বাঁচিয়ে রাখে। এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক দিন ঈমান পূর্ণ হল, আর বাকী অর্ধেকের বিষয়ে যেন আল্লাহকে ভয় করে”। আরো বলা হয়েছে; “স্বামী-স্ত্রী যখন একান্তে বসে আলাপ করে, হাসি খুশী করে তার সওয়াব নফল এবাদতের মতো”। তাছাড়া স্ত্রীরা জগতের অস্থায়ী সম্পদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলেও হাদীসে রয়েছে।
বিয়ের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেক নর নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে কর: যথাযথভাবে তাদের মোহর প্রদান কর; যেন তারা বিয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকতে পারে এবং অবাধে যৌনচর্চা ও গোপন বন্ধুত্বে লিপ্ত না হয়ে পড়ে”। (সুরা নিসা আয়াত ২৫) এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং বিয়ে না করে অবৈধ যৌন সম্পর্ককে নিরুৎসাহিত করেছেন। পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি প্রিয় নবী (দঃ) ও সামর্থবানদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন এবং সামর্থ থাকা সত্তে¡ও ইচ্ছাকৃতভাবে বিবাহ না করাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, দয়াল নবী (দঃ) ইরশাদ করেন, হে যুব সমাজ তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ রাখে তারা তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী, যৌন অঙ্গের পবিত্রতাকারী আর যার সামর্থ নেই সে যেন রোজা রাখে।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত “কুমারিত্ব এবং অবিবাহিত নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের কোন নিয়ম ইসলামে নেই”। সামর্থ থাকা সত্তে¡ বিবাহ না করার পরিণতি সম্পর্কে প্রিয় নবী (দঃ) বলেছেন, “যে লোক বিবাহ করার সামর্থ থাকা সত্তে¡ও বিয়ে করে না সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নহে”। সামর্থ থাকা সত্তে¡ও বিবাহ না করার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে দয়াল নবী (দঃ) বলেন, যা হযরত মা আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত “বিয়ে করা আমার আদর্শ এবং স্থায়ী নীতি যে লোক আমার এ সুন্নাহ অনুসারে আমল করবে না সে আমার দল ভুক্ত নয়”। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি দেওয়ানী চুক্তি। অভিভাককের মাধ্যমে নারী নিজেকে বিয়ের জন্য উপস্থাপিত করে আর পুরুষ তা গ্রহণ করে অর্থাৎ ইজাব এবং কবুলের মাধ্যমে একটি বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন