চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে অবস্থিত কর্ণফুলীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণার দীর্ঘ ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সেতু নির্মিত হয়নি। সেতু নির্মিত না হওয়ায় যানবাহন চলাচলে সর্বসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও ঘটে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে সেতুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন প্রতিটি সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলার সাথে কক্সবাজারের সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কর্ণফুলী নদীর উপর ফেরি দিয়ে সবাই যাতায়াত করেন।
এটি রাজস্থলী উপজেলার সাথে রাঙামাটি জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক মাধ্যম। প্রতিদিন শত শত বাস ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের গাড়িও এই পথে চলাচল করে।
এছাড়াও বাঁশ, গাছ, কাঠাল, কলা, বালু, ইটসহ অনেক প্রকার ভারী মালামাল এই পথে পারাপার করতে হয়। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু না থাকায় যাতায়াতে ফেরি পারাপারে সবাইকে দুর্ভোগের পাশাপাশি দীর্ঘসময় অহেতুক নষ্ট করতে হয়।
কর্ণফুলী নদীর এক পাশ কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী যা রাঙামটিতে অবস্থিত। আরেক পাশ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লিচুবাগান যা চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। নদীর দুই পাড় দুই জেলায় অবস্থিত হলেও তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা এই সড়ক বেশি ব্যবহার করেন। কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দারাও এখান দিয়ে যাতায়াত করেন। এই স্থানে ফেরির বদলে সেতু হলে স্থানীয় উন্নয়নে আরো সমৃদ্ধি আসবে বলে সাধারন মানুষ মনে করেন।
১৯৯১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী অলি আহমদ লিচুবাগানে কর্ণফুলী নদীর উপর সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করে এখানে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ঐ ঘোষণা শুনে হাজার হাজার মানুষ আশায় বুক বেঁধে ছিল। ইতিমধ্যে ঘোষণার ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেতু নির্মিত হয়নি। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে আবার বিএনপি সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলেও লিচুবাগানে সেতু নির্মিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচিত এমপি এবং সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদের গ্রামের বাড়ি যেতে হলে এই সেতুর উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। মন্ত্রী অসংখ্যবার কর্ণফুলীর উপর দিয়ে ফেরি পার হয়ে গ্রামের বাড়ি যাতায়াত করেছেন। এতে ফেরিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় যা তিনি ভালো করেই জানেন। কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার মানুষ আশায় বুক বেঁধে ছিল মন্ত্রী হাছান মাহমুদ নিশ্চয়ই কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে সেতু নির্মিত হয়নি।
ভারী বৃষ্টি হলে ফেরির পন্টুন নিচের দিকে দেবে যায়। তখন পন্টুনের উপর পানি উঠে পড়ে। সেই সময় ফেরির উপর উঠা নামা করাও ঝুঁকিও অনেক কষ্টের হয়ে পড়ে। তবে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এবং কষ্ট সহ্য করে ফেরিতে উঠানামা করেন যার ফলে বিভিন্ন সময়ে প্রানহানির ঘঠনা ঘঠেছে, এবং ফেরিতে উঠা নামা করার সময় হাত পা ভেঙ্গে পশুত্ব বরন করেছে শত শত শিশু, স্কুলের ছাত্র ছাত্রী ও বৃদ্ধ নারী পুরুষ।বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী বাস চালক মোফাজ্জল হোসেন জানান, বান্দরবান থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই এখন খানাখন্দক বিহীন। দীর্ঘ এই সড়কের কোথাও ছোট খাট গর্তও নেই। এই পথে বাস চালানো আরাম দায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন শুধু মাত্র কর্ণফুলী নদীর উপর ফেরি পার হতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। এখানে সেতু থাকলে মানুষের অনেক উপকার হত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পূর্ব কোদালা সিংহ ঘোনা জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মীর আহমদ সাহেব বলেন গত কিছুদিন আগেও এই পথে বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙামাটি থেকে বান্দরবান যান। তিনি স্বচক্ষে দেখে গেছেন এখানের দূর্ভোগ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ মন্ত্রনালয় কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন অতি শ্রীঘ্রই চন্দ্রঘোনা রাইখালী সেতু নির্মাণ পূর্বক এই তিন জেলার কোটি মানুষের দুর্ভোগ দূর করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন