শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অবারো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় বাংলাদেশ

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন ভারত

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৫৩ এএম, ১৯ মার্চ, ২০১৮

বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৬৬/৮, ভারত : ২০ ওভারে ১৬৮/৬। ফল : বাংলাদেল ৪ উইকেটে পরাজিত
আরো একটি ফাইনাল। দিন শেষে বাংলাদেশের বুকে আবারো সেই পরাজয়ের ক্ষত।
কিন্তু সব পরাজয়ের ক্ষত কি এক? মিরপুরে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল কি সেকথা বলে? কিংবা দুই বছর আগে টি-২০ বিশ্বকাপের সেই ব্যাঙ্গালুরু? এবার তেমনি আরেক ক্ষতের সাক্ষি হলো কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। শেষ বলে ভারতের দরকার ৫ রান। সৌম্যের করা সেই ডেলিভারিটা ছিল বাংলাদেশের স্বপ্নের শেষ অঙ্ক। যে স্বপ্নকে দৃষ্টিসীমার বাইরে আছড়ে ফেলেন দিনেশ কার্তিক। আর পরাজয়ের হতাশায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ।
এটা ছিল বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের মনের ভাষা। কিন্তু ভাষাটা যদি হয় ক্রিকেটীয়? সেখানে আসলে জেতেনি ভারত, হারেনি বাংলাদেশও। জয় হয়েছে ক্রিকেটের। ক্রিকেট যে চরম অনিশ্চিয়তার খেলা; যার পরতে পরতে মিশে থাকে চরম উত্তেজনা; এই ম্যাচের চেয়ে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর কি হতে পারে। নিকট ভবিষ্যতে এমন উত্তেজনায় টাইটম্বুর ফাইনাল ম্যাচ কি দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব?
ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে হার। এরপর শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজেও একই ভাগ্য বরণ করে ভগ্ন এক দল নিয়ে শ্রীলঙ্কায় পা রাখা বাংলাদেশ যে এমন ক্রিকেট উপহার দেবে তাই-ই বা ভেবেছিলেন ক’জন। রেকর্ড তাড়া করে জয়, এরপর একই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও যে ক্রিকেট বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে এমনটা নিকট অতীতে ক্রিকেটে দেখা যায়নি। নাটকীয়তা কিংবা শ্বসরুদ্ধকর শব্দের বিশেষনেও যাকে বর্ণণা করা যায় না। কিন্তু শেষ ম্যাচটা যেন তাকেও ছাড়িয়ে গেল।
টস হেরে ব্যাটে নেমে এবার অবশ্য ভালো করতে পারেননি লিটন-তামিমরা। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের ভাগ্য কাটা পড়ে রান আউট নাম দুর্ভাগ্যে। মুশফিকও তেমন কিছু করতে পারেননি। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা অব্যহত ছিল সৌম্যের ব্যাটেও। ব্যতিক্রম ছিল কেবল সাব্বির রহমানের (৫০ বলে ৭৭) ব্যাট। আর শেষ দিকে ৭ বলে মিরাজের ১৯ রানের ছোট্ট ক্যামিও। তাতেই ১৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
৩২ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের শুরুর ঝড় থামিয়েছিলেন সাকিব ও রুবেল। এরপর একটু একটু করে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিতে থাকেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। রাহুলকে ফিরিয়ে আবারো দলকে ম্যাচে ফেরান রুবেল। পেন্ডুলামের মত দুই দিকেই দুলতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য। বাংলাদেশী বোলারদের প্রত্যবর্তনের গল্প এরপর আরো সুখের। শুরুটা হয় আতঙ্ক ছড়ানো রোহিত শর্মাকে (৪২ বলে ৫৬) ফিরিয়ে। ভারতের স্কোর তখন ১৩.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৯৮। গতকালের ম্যাচে ঐ একবারই সর্পতৃত্য দেখা যায় রোহিতকে ক্যাচ বানিয়ে ফেরানো নাজমুলের কল্যাণে। এরপর পুরো দল হয়ত অপেক্ষায় ছিল দলীয় নৃত্যের। অষ্টাদশ ওভারের শেষ বলে মানিষ পান্ডেকে তুলে নিয়ে যার সম্ভবনা উজ্জ্বল করেছিলেন মুস্তাফিজ। সেই ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ভারতের সামনে শেষ দুই ওভারে ৩৪ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন কাটার মাস্টার ‘দ্য ফিজ’। তখনই আবির্ভাব হয় বাংলাদেশের সেই স্বপ্ন হন্তারকের। যার ৮ বলে অপরাজিত ২৯ রানের টর্নেডো চূর করে দেয় ষোল কোটি মানুষের অধরা শিরোপার স্বপ্ন। অস্টম দেখাতেও অজেয়ই থেকে গেল ভারত।
১৯তম ওভারে রুবেলের ২২ রান স্বপ্নটাকে শঙ্কায় রূপ দেয়। এরপরও শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণের প্রতিটা বলে ছিল শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চয়তার আবহ। পঞ্চম বলে যখন লং অফে ফসকে যাওয়া ক্যাচকে আবার লুফে নিয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের মুঠোয় আনেন মিরাজ। কিন্তু কে জানত সৌম্যের ওয়াইড ইয়োয়ার্কর ধরনের শেষ বলটা কাভারের উপর দিয়ে আচড়ে ফেলবেন কার্তিক।
এর আগে চার বার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে একবারও শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। চারবারই ঘরের মাঠে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালের পর ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ও সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালেও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে শুরুটা হয় ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে জয়ের কাছে গিয়েও শ্রীলঙ্কার কাছে ২ উইকেটের হার দিয়ে। এবারই প্রথম দেশের বাইরে কোন ফাইনাল খেলল টাইগাররা।
ক্রিকেট এমনই। যেন সুখ-দুঃখের ফেরিওয়ালা। হয়ত আবারো কোন এক টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। সেদিন হয়ত পাঁচ ফাইনালের দুঃখ রূপ নেবে সুখের আবহে। ভয় কি? ষোল কোটি মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে সাকিব তো বলেছেনই- ‘একদিন আমরাও শিরোপা জিতব’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Hasan Mamun ১৯ মার্চ, ২০১৮, ৫:১৯ এএম says : 0
ajke Bangladesh valo e khelese
Total Reply(0)
Sharif ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:৪৯ পিএম says : 0
নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখ জয় আসবেই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন