চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের উত্তর বালিয়া গ্রামে খুঁটি বিহীন শতাধিক বিদ্যুৎ সংযোগ মৃত্যুকুপে পরিনত হয়েছে। বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বছরে প্রাণগেলো বৃদ্ধা নারী ও কৃষকের। নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের ফল ব্যবসায়ী সানু মিয়ার মা জুবেদা বেগম (৭৫) ও রিফিওজি কলোনী বাড়ীর মনু শিকদারের ছেলে জাহাঙ্গীর শিকদার (৩৫)। ২০১৭ সালে জুবেদা বেগম এবং গত (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর শিকদার নিহত হন।
সরেজমিন উত্তর বালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর বালিয়া মিয়াজী বাড়ী থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ছাড়া বাঁশ ও সুপারি গাছের খুঁটি দিয়ে শতাধিক পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। এসব বিদ্যুৎ সংযোগ মাত্র দুটি তারের মাধ্যমে বাগান, পুকুর ও গাছের সাথে বেঁধে সংযোগ দেয়া হয়েছে। কোথায় বসতঘরের উপরে, কোথাও চলাচলের রাস্তায় সংযোগগুলো টেনে নেয়া হয়েছে। আবার এসব তারের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য জোড়া-তালি। সামান্য ঝড়ো হাওয়া আসলেই কাত হয়ে পড়ে বাঁশের খুঁটি। এসব কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই গ্রামের করিম খান বাড়ী, বেপারী বাড়ী, রাঢ়ী বাড়ী, মিয়াজী বাড়ী, পাঠান বাড়ী, গাজী বাড়ী, সানু গাজীর বাড়ী, রেনু মাষ্টার বাড়ী, আবুল শেখের বাড়ী, সোনা মিয়া চৌকিদার বাড়ী, খান বাড়ীসহ বেশ কয়েক বাড়ীর শত শত পরিবার।
সাবেক ইউপি সদস্য তপন তালুকদার জানান, নিহত কৃষক জাহাঙ্গীর খুবই সহজ সরল লোক ছিলেন। কৃষি কাজ আর সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঘটনার সময় নিজ জমিতে কাজ করতে গেলে পড়ে থাকা বিদ্যুতের বাঁশের খুঁটির সাথে থাকা তারে স্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ জানান, নিহত জাহাঙ্গীরের ছোট ছোট দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তার এই মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ বারি হয়ে উঠছে। দূর্ঘটনায় জড়ানো ওই বিদ্যুৎতের সংযোগ প্রায় আধাকিলোমিটার দূরে পাশ^বর্তী ফজলুর রহমান হাজী তার সৌদিয়া মার্কেটে নিয়েছেন। এত দীর্ঘ লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ যে কোন সময় আরো প্রাণহানী ঘটতে পারে। কারণ বৈশাখী ঝড় শুরু হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাই বেশী।
গ্রামের বাসিন্দা ও বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল্লাহ খান জানান, গত ৫ বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিদ্যুৎতের খুঁটি এনে দেয়ার নাম করে স্থানীয় দালাল চক্র বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা এক খুঁটিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। গত ৫ বছরে বিদ্যুতের খুঁটি দেয়ার কথা থাকলেও তারা এখন লাপাত্তা।
বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম মিয়াজী জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহতের ঘটনা আমি শুনেছি। ইউপি সদস্য জাহিদ বিষয়টি এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে সুরাহা করবেন। খুঁটি ছাড়া দীর্ঘ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম. ইকবাল জানান, খুঁটি ছাড়া এভাবে এতগুলো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আছে, তা আমার জানা নেই। কারণ শহর এলাকায় এভাবে কোন সংযোগ দেয়া হয় না। বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন