বৈশাখের আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। গত সপ্তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিসহ ঝড়ের তান্ডব দেখা গেছে। বৃষ্টিপাত খুব বেশী না হলেও ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পানিবদ্ধতা দেখা গেছে। বিশেষত: উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে ফেলে রাখা স্থানগুলোতে যান চলাচল ও পায়ে হেঁটে চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে। গত বর্ষা মওসুমে দু’তিন ঘন্টার বৃষ্টিতে আমরা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কগুলোতে হাটু-কোমর সমান পানিবদ্ধতার চরম জনদুর্ভোগ দেখেছি। সে সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিরা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আগামী বর্ষায় ঢাকায় পানিবদ্ধতার সমস্যা থাকবেনা। আরেকটি বর্ষাকাল সমাগত হলেও পানিবদ্ধতার সমাধান বা উত্তরণের কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছেনা। কিন্তু এ বছর ঢাকার রাস্তায় পানিবদ্ধতা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে গুরুতর আকার ধারণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন বা সংস্কারের কার্যকর কোন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় রাস্তায় পানিবদ্ধতা আগের চেয়ে জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষের যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা তা এখনো দৃশ্যমান নয়। বিশেষত: উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যথেচ্ছ রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেনা সংশ্লিষ্টরা।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আইন অমান্য করে শহরের খাল-পুকুর, জলাভ‚মি দখল ও ভরাট করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা ঢাকার যানজট ও পানিবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত। ঢাকার নাগরিক দুর্ভোগ ও সংকট নিরসনে এসব বিষয়ে নজর দেয়া এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ উচ্চারিত হচ্ছে নানা মহল থেকে। কিন্তু প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওয়াসা, ডেসা, তিতাস গ্যাস,বিটিসিএল, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকান্ডে সমন্বয়সাধনের বাস্তব উদ্যোগ নেই বললেই চলে। শহরের যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকায় ফ্লাইওভার নির্মানসহ জনগনের ট্যাক্সের টাকায় উচ্চাভিলাসি সব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা গেলেও খাল, পুকুর ও নি¤œভ‚মির দখলদার উচ্ছেদ করার কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। খাল ও জলাভ‚মি খনন করে তা যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে শহরে পানিবদ্ধতা সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত। গত বর্ষার মওসুমে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগি হওয়ার পর নৌকায় পথচারি পারাপারের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে সময়ই সরকারের একাধিক মন্ত্রী এমপি ২০১৮ সালে পানিবদ্ধতার সমস্যা থাকবেনা বলে আশ্বস্ত করলেও তার কোন বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা। সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অনেক বেশী আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও রাজধানীর যানজট ও পানিবদ্ধতা নিরসনে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকার একদিকে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার দাবী করছে, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক মান অর্জনে পরিসংখ্যানগতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের দাবী অস্বীকার করা যায়না। অন্যদিকে এবারো ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পরিসংখ্যান দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার দাবী প্রতিষ্ঠিত করা যায়না। সামগ্রিকভাবে জনগনের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের মানদন্ড বজায় রাখার উপর উন্নয়নের আন্তর্জাতিক মানদন্ড অর্জন করা সম্ভব। বিশেষত ঢাকা নগরীর যানজট ও পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসগুলো যেন শুধুই বাগাড়ম্বরতা। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তায় আবারো পানি জমে থাকা আগামী বর্ষায় ঢাকার রাস্তা ও নিচু এলাকায় ভয়াবহ পানিবদ্ধতার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এবং সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও ঢাকার যানজট ও পানিবদ্ধতা সংকটের তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বরং ক্রমেই তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে চলেছে। এসব খাতে গত এক দশকে শত শত কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দুর্নীতি, অপচয় ও লুটপাটে শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সীমানা, নাব্যতা এবং শিল্পদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি বেদখল হওয়া পুরনো খাল, পুকুর ও জলাভূমিগুলো উদ্ধার ও সংস্কারে অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বর্ষা শুরুর আগেই খোঁড়াখুঁড়ি ও খানাখন্দকে ভরা রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন