বোরো ধানে গোলা ভরে উঠছে সিলেট অঞ্চলের কৃষকের। গত বছর প্রকৃতির সর্বনাশা থাবায় যেই ফসল হারিয়ে মাথায় হাত দিয়েছিল কৃষক। এবার কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি। পাকা ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত তারা। বিভাগে প্রায় ৯৬ ভাগ পাকা ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার, ৮৩৯মেট্রিক টন ধান। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকমোঃ আলতাবুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে বিভাগে ধান কাটার বাকী রয়েছে প্রায় ৪০ হাজারহেক্টর জমি। শতভাগ ধান কাটা শেষ হলে উৎপাদনের পরিমাণ ১৯ লাখ ১৭ হাজার ১৪৭মেট্রিক টনে দাঁড়াতে পারে বলে তিনি জানান। তবে, ধানের আবাদ আশাতীত হল্ওে ধানের মুল্য নিয়ে শংকিত কৃষক। বাজার ব্যবস্থাপনায় সুষ্ট ও অগ্রসরমান নীতিমালা না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে জানান একাধিক কৃষক। বঙ্গবন্ধু স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত কৃষি উদ্যোগক্তা আব্দুল বাছিত সেলিম বলেন, সাধারন কৃষক জিম্মি মধ্যস্বত্তভোগীগের হাতে। তাদের সোনার ফসলে ভাগবসায় মিল মালিকরা। কৃষকের দূর্বলতার সুযোগে নিজদের ফায়দা তুলছে তারা। নিরূপায় কৃষক হয় কৃষি থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, নতুবা ম্যারপ্যাচের মধ্যে কৃষি আবাদ চালিয়ে যাচ্ছে স্বল্প মেয়াদী মানসিকতায়। অপরদিকে ফসল বুনন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উৎপদান খরচ লাগামীন। পদে পদে খরচ, ফলে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। এতে করে কৃষি ভাবনা ক্রমশ গতি হারিয়ে প্রবলেম খাতে পরিণত হচ্ছে। কৃষি পেশা হয়ে যাচ্ছে, হীনমনা কোন পরিচয়। আতœ-পরিচয়ে আতœতৃপ্তি না থাকায় কৃষির ভবিষ্যত আগামীতে চরম সংকটে পড়বে বলে জানান ্ওই কৃষি উদ্যোগক্তা।
দৃশ্যমান গভীর অস্থিরতা কৃষি ভাবনায় সক্রিয় থাকল্ওে কৃষিস¤প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরোমৌসুমে সিলেট বিভাগের চারজেলায় ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫২১হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৮হেক্টর জমির ধান কাটা হয়। এতে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩৯মেট্রিক টন। বর্তমানে ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে ৫৪ হাজার ৯৮৩হেক্টর জমি। আগামী সপ্তাহথেকে ১০ দিনের মধ্যেই বাকি জমির ধান কাটাওশেষ হয়ে যাবে বলে, আশাবাদ ব্যক্তি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে আরো ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৩ টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত উৎপাদিত ধানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ২৭ হাজার ৬৭মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে সুনামগঞ্জজেলায়। হবিগঞ্জজেলায় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৬মেট্রিক টন, সিলেটজেলায় ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৭মেট্রিক টন ওমৌলভীবাজারজেলায় ১লাখ ৯২ হাজার ৮৬৯মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। শতভাগ ধান কাটা শেষ হলে উৎপাদনের পরিমাণবেড়ে যাবে আরো । উৎপাদনের পরিমাণ ১৯ লাখ ১৭ হাজার ১৪৭মেট্রিক টনে দাঁড়াতে পারে।
কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের ৪জেলায় আবাদ হওয়া হাইব্রিড ৮২ হাজার ৯৪৫হেক্টর জমির মধ্যে ৭৭ হাজার ২৬৫হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৪১মেট্রিক টন ধান। এখনো হবিগঞ্জজেলায় ৫ হাজার ৬৮০হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৬হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩হেক্টর জমির ধান।
এতে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। অবশ্য উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে সুনামগঞ্জে ১৬ হাজার ৫৩৯হেক্টর, হবিগঞ্জে ২৬ হাজার ৭৩০হেক্টর,মৌলভীবাজারে ৩ হাজার ৪৭৮হেক্টর ও সিলেটজেলায় ২ হাজার ৫০০হেক্টর জমির ধান কাটা চলমান আছে।
স্থানীয় জাতের ধান পুরো বিভাগে আবাদ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ২৩০হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে পুরো জমির ধানই কাটা হয়েছে। এতে উৎপাদিত হয়েছে ৩১ হাজার ৪০১মেট্রিক টন ধান। বৈশাখের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়বেশ আনন্দেই ছিলেন কৃষকরা। হঠাৎ আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ার ফলে অজানা আশঙ্কাদেখাদেয়। হাওরে ধান পাকলেও তীব্র শ্রমিক সংকট, তীব্র বজ্রপাত, দিনের পর দিন বৃষ্টির ফলে একসময় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েন। বিরূপ আবহাওয়ায় ধান কাটা বিলম্ব হওয়ায় ধান শুকানোতেও বিলম্ব হচ্ছে। অবশ্য সুনামগঞ্জেরবেশিরভাগ হাওরের ধান কাটাশেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগেই। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় রমজানের এই দিনেও হাওর পারের কৃষাণ-কৃষাণীরা ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকে ধানগোলায় তুলেছেন। তবেগো-খাদ্য নিয়ে এবারও সংকটে পড়বেন কৃষকরা এমন আশঙ্কা রয়েছে সর্বত্র। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকমোঃ আলতাবুর রহমান বলেন, গতবারের কষ্টের পর এবার কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতেপেরেছেন। কৃষকদের মাঝে আরসেই হতাশানেই। এ পর্যন্ত ৯৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটা শেষের পথে হল্ওে সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি সিলেট অঞ্চলে। প্রি- মৌসুমী বন্যার আশংকায়, কৃষক বান্ধব উদ্যাগ হিসেবে সরকার হবিগঞ্জ্ও সুনামগঞ্জথেকে ধান সংগ্রহের নির্দেশনা দেন। এই নির্দেশনা প্রায় ১৯ দিনপেরিয়ে গেল্ওে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন ও হবিগঞ্জ থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের টার্গেট করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী একজন কৃষকথেকে সর্বোচ্চ ৩ টন ধান সংগহ করা হবে। কিন্তু ধান সংগ্রহ নিয়ে বাস্তবভিত্তিক সমস্যার মুখে পড়েছেন খাদ্য সংগ্রাহকরা। কৃষকের সংখ্যা বেশি হ্ওয়ায়, নীতিমালায় পরিবর্তন এনে বেশি সংখ্যক কৃষকদের সংযুক্ত করতে চাইছেন ধান বিক্রিতে। সুনামগঞ্জ শালা খাদ্য গোদাম কর্মকর্তামোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, সংগ্রহ নির্দেশনায় যে মানে ধান শুকনো হ্ওয়ার কথা, বাস্তবে সেই মানে প্ওায়া যাচ্ছে না। একই ভাবে কৃষকের সংখ্যা বহুল, তাই চেষ্টা করা হচ্ছে ধানের পরিমান কম হল্ওে বেশি সংখ্যক কৃষিকদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব দ্ওেয়ায় ধান সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে বলে তিনি জানান। সরকারীভাবে মূল্য অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন ধানের মূল্যে ২৬ হাজার টাকা । নির্ধারন করা হয়েছে। এতে প্রতিকেজি ধানের মূল্যে পড়বে ২৬ টাকা। মন দাড়াবে ১০৪০ টাকা। কিন্তু বাজার মূল্যে মন প্রতি মাত্র ৫০০/ ৬০০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিঘা প্রতি আবাদ খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। তাই ব্যয়- আয় হিসাব নিয়ে দু:চিন্তায় কৃষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন