বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ময়মনসিংহে বোরো ধানে ব্যাপক ক্ষতি

হঠাৎ শিলা বৃষ্টি ও গরম বাতাস

মো. শামসুল আলম খান : | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

ময়মনসিংহে হঠাৎ কালবৈশাখী শিলা বৃষ্টি ও গরম বাতাসে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের চোখেমুখে। মাঠের সোনালী স্বপ্ন এখন চিটা ধানে ফিকে হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের দৃশ্যত কোন মাথা ব্যাথা নেই বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের।

কৃষকদের অভিযোগ, ফসলের মাঠে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেলেও কোন কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠে দেখা যায়নি। যা কর্তব্য অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। দিগন্তজুড়ে বোরো ধানের সবুজ সমারোহে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছিল কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। কিন্তু দিনের পর দিন কৃষকের গায়ের রক্ত পানি করে বেড়ে উঠা এ স্বপ্ন সত্যি হবার আগেই হঠাৎ যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেল কালবৈশাখের শিলা বৃষ্টি আর গরম বাতাসের তান্ডবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আবহাওয়ার এ বৈরী আচরণে কৃষকের এ স্বপ্ন যেন পুড়ে ছাই হয়ে দুলছে চোখের সামনেই। এনিয়ে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের চোখে-মুখে। এ চিত্র ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলাসহ প্রায় সবক’টি উপজেলার। এতে হাজার হাজার কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানায়, গত রোব ও সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বইতে থাকে গরম বাতাস। মাত্র ঘণ্টা স্থায়ী এ বাতাসে মাঠের পর মাঠজুড়ে কৃষকদের বোরো ধান হঠাৎ চিটা হয়ে গেছে। গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নে গরম বাতাসের সাথে প্রবাহিত হয় শিলা বৃষ্টিও। এতে গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জসহ কোথায় কোথায় প্রবল ঝড়ে মাটির সাথে লুটিয়ে পড়েছে ধান গাছগুলো। আবার কোথায় শিলা বৃষ্টির প্রবাহ না থাকলেও মাত্র হঠাৎ কয়েক ঘন্টার গরম বাতাসে ধানের পরাগ নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে সব ধান। এতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
ভাংনামারী ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, বারুয়ামারী, নাপ্তের আলগী, নাওভাঙ্গা, খেলার আলগী, ভোলার আলগী, খুনির চর ও কাশিয়ার চরসহ সব’কটি গ্রামের প্রায় কয়েক শত হেক্টর জমির ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ধান চাষে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে এসব কৃষক এখন দিশেহারা। সূত্রমতে, প্রকৃতির এ বৈরী আচরণে বোরো ধানের পাশাপাশি রবি মৌসুমের পাট, সরিষা, শাকসবজী, ভুট্টা, মুগ ও পেঁয়াজসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
গৌরীপুর উপজেলার খোদাবক্সপুর গ্রামের কৃষক মারফত আলী জানান, এ বছর এক একর জমিতে ২৮ জাতের ধান রোপন করেছিলাম। ফলনের লক্ষণ খুব ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঝড় এবং গরম বাতাসে ধানের রেনু নষ্ট হয়ে সব ধান চিটা হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তায় এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। সরকার যদি আমাদের ক্ষতি না দেখে তাহলে আমার মত শত শত কৃষককে পথে বসতে হবে।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক কর্মকর্তা ড. মোছা. নাসরিন আক্তার বানু জানান, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্র ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার এক’শ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্িরড জাতের ধান ছিল ৫৫ হাজার হেক্টর, ইফসি জাতের ধান ছিল ২ লাখ ৬ হাজার হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের (হরি, বিরইসহ ইত্যাদি) ধান ছিল একশ’ হেক্টর। তবে লক্ষ্য আরো বেশি অর্জিত হয়ে এ জেলায় মোট বোরো ধানের চাষ হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। তিনি জানান, ধান রোপন থেকে এ পর্যন্ত বেশ ভালোই ছিল বোরো ফসলের মাঠ। ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান জানান, হঠাৎ গরম বাতাস ও শিলা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ জেলায় ২৬৩০ হেক্টর জমির বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধারণা করছি এর অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। মঙ্গলবার সকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত একটি রির্পোট পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ধানে পরাগায়ন হয়েছে মাত্র। এ সময় হঠাৎ শিলা বৃষ্টি ও গরম বাতাসে ধানের পরাগ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ধান চিটা হয়ে গেছে। কারণে অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা মাঠে নেমেছেন। গবেষণা শেষে বলা যাবে কেন বা কি কারণে কৃষকদের এ ক্ষতি হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউজ্জামান আরো বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষি ও কৃষক নিয়ে সচেতন ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে আউষ ধান চাষি ৮হাজার ৪শ’ কৃষককে সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। আশা করছি বোরো ফসলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থাকবে সরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন