শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

কুমিল্লায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, হাঁপাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, হাঁপাচ্ছে কুমিল্লার চান্দিনার নিন্মআয়ের সাধারণ মানুষ। নিন্ম ও নিন্মমধ্যবৃত্ত পরিবারের মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বোঝা। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি আর লবণসহ সবকিছুই আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে চাকরিজীবী আর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পরায় কুমিল্লায় দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারগুলো চলছে অর্ধাহার, অনাহার এবং দেখা দিয়েছে পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে এসেছে কষ্টের কালো ছায়া, অন্যদিকে মুনাফাখোরি, কালোবাজারিদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
মুসলমানদের সিয়াম সাধনের মাস রোজার মাস শুরুর সাথে সাথে কুমিল্লার চান্দিনার পাইকারী ও খুচরা হাট বাজারে তরিতরকারি সহ রোজাদারদের নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম দুইগুন থেকে তিনগুন পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এক লাফেই এসকল পন্যের দাম বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্প্রতিবার সকালে কুমিল্লার চান্দিনার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, রোজার আগের দিন পর্যন্ত যে কলা বিক্রী হয়েছে পঁচিশ টাকা তা এখন পঁয়ত্রিশ টাকা, বিশ টাকার বেগুন ষাট টাকা, পুর্বে পনের টাকার পটল এখন পঞ্চাশ টাকা, ঢেড়স বিক্রী হচ্ছে চল্লিশ টাকা, আগে এর দাম ছিল পনের টাকা, পনের টাকার বরবটি এখন চল্লিশ টাকা, কাঁচা মরিচ ষাট টাকা যা ছিল পচিশ টাকা, কোনো বাজারে আশি টাকাও বিক্রী হচ্ছে কাঁচা মরিচ। পুর্বে যে আদা বিক্রি হতো ষাট টাকা তার মুল্য এখন একশ টাকা। শসার দাম তিনগুন বেড়েছে, বিশ টাকার শসা এখন ষাট টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদেরকে।
এদিকে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে পঞ্চাশ টাকা। একইভাবে অস্বাভাবিক পেঁয়াজের দাম। এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ষাট টাকা। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা পাইকার আর আড়তদারদের দুষলেও তারা তা মানতে নারাজ। আর বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন ভোক্তারা। ফজর আলী নামের এক ক্রেতা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। মোটা এক কেজি চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণ বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে মাধাইয়া বাজারের পাইকার মুনাফ মিয়া বলেন, ধানের সংকটে বাজারে চাল কম আসছে। তারা যা পাচ্ছে তা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে মিল মালিকরা বলছেন, বোরো ধানের জোগান ভালো না। এ অবস্থায় ধান সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ মিল। এই সংকটের কারণে মিল পর্যায়েও দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। ফলে ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দোল্লাই নবাবপুর এলাকার আড়তদাররা আলমগীর জানান, বাজার এখন অটোরাইস মিলারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তারা যে দাম বেঁধে দিচ্ছেন, সে দামেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
কুমিল্লায় চালের দামে অস্বস্থির সাথে সাথে সবজির দামও চড়া। স্বস্তি নেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের বেলাতেও। নানা অজুহাতে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। কোনো কোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লার বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার নিচে মিলছে না তেমন কোনো সবজি। নিমসার বাজারের সবজি বিক্রেতা রায়হান বলেছে, অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিমসার বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। এর প্রভাবে কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোয় প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। এছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
রোজাদারের নিত্যকার জিনিসের দাম খেটে খাওয়া মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তরকারির দোকানিরা বলছে কাঁচামালের আড়তদাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমরা কি করবো। আড়তদারের কথা মহাসড়কে যানজটের কারণে পন্যবাহী গাড়ীর ভাড়া দিগুন এবং অতি বৃষ্টির কারনে তরকারির উৎপাদন কম যে কারনে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে চাষীরা। চাষীদের বক্তব্য ক্ষেতে যেয়ে আড়ৎদারেরা যে মুল্য বলে সে মূল্যই বিক্রি করি আমরা। কেউ কোনো দোষ ঘাড়ে রাখছেনা। এ যেনো সবদোষ ক্রেতাদের। ক্রেতারা কেন ক্রয় করছে ভাবখানা এমন ? সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অনেকের সাথে কথা বললে তারা বলেন বাজারে প্রশানের ও ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মনিটারিং ব্যবস্তা না থাকার কারনে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মত দ্রব্যর দাম বাড়িয়ে চলেছে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার বেশকিছু কারণ বেরিয়ে এসেছে। গ্রণযোগ্য অনেক কারণের পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য অনেক কারণও মিলেছে। এমন কিছু কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে যা চাইলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- চাহিদা ও যোগানের মধ্যে অসমতা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, মজুদদারি ও অতি মুনাফা, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম থাকা বা কোথাও কোথাও একেবারে না থাকা। আবার হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে। স¤প্রতি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে পণ্যবাহী গাড়ীর ভাড়া বৃদ্ধি ও প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে ফসলি ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে সবজির ব্যাপক ক্ষতির কারন। এভাবে নানা অযুহাতে বেড়েই চলেছে চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ, মাংস, ডিম ও সবজিসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের দাম। বিক্রেতারাও ইচ্ছা মাফিক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। আর এই দাম বৃদ্ধির জন্য চলছে একে অপরকে দোষারোপের পালা। খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী, হোলসেলাররা, মিলমালিক ও আমদানিকারকরা, একে অপরকে দায়ী করে চলছে প্রতিনিয়ত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন