মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

রানীনগরে কদর বাড়ছে প্লাস্টিক মাদুরের

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নওগাঁর রাণীনগরে দিনদিন কদর বাড়ছে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে রঙ বেরঙের তৈরি মাদুরের । টিকসই মানসম্পূন্ন ও বিভিন্ন রঙের হওয়ায় পারিবারিক বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষরা পরিবেশ বান্ধব পাতির তৈরি মাদুরের চেয়ে প্লাস্টিকের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ায় দিনদিন এর কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বেশ কদরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাণীনগর থেকে প্রতিদিন ট্রাক-ট্রেন সহ নানান ধরণের পরিবহনে চালান হচ্ছে মাদুর। প্রত্যন্ত গ্রামীন জনপদের অসহায় হতদরিদ্র নারী পুরুষরা পরিবারের সবাই মিলে রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করে বাজার থেকে প্লাস্টিকের পাইপ কিনে নিয়ে মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে শত শত পরিবার এখন বেকারত্ব ঘুঁচিয়ে প্রতিদিন আয় করে এ পেশার সাথে জরিতরা অনেকটাই স্বাবলম্বী। মৌসুমের বিশেষ এক সময়ে সাধারণ মানুষের হাতে তেমন কোন কাজ-কাম থাকে না তখন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষরা বেকার সময় নষ্ট না করে সাংসারিক প্রয়োজনে প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির কারখানা থেকে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে পাইপ কিনে মাদুর তৈরি করে। যখন এক মুঠো ভাতের জন্য এবাড়ি সেবাড়ি শ্রম দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেত তখন তারা কিছুটা ধার দেনা করে টাকা জুগিয়ে মাদুর তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সপ্তাহে তারা অল্প পুঁজি নিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে বেশ আয় করছে। এখন এ পেশায় জড়িতদের সংসারে আর অভাব অনটন জেঁকে বসতে পারেনা। প্রতিদিন স্বল্প আয়ের মধ্যে দিয়ে তারা সংসারের চাহিদা মিটিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। মাদুর তৈরির মূল উপকরণ পাটের দড়ি, সামান্য কিছু বাঁশ আর নগদ কিছু পুঁজি হলেই খুব সহজে এ পেশার সাথে জরিতরা প্রতিদিন মাদুর তৈরি করে নিজ বাড়ি থেকে ও হাটে গিয়ে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করে। পাতি উৎপাদনের পরিমান কমে যাওয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের কদর দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় সারা বছরই মাদুর তৈরির উপকরণ হাতের নাগালে পাওয়ায় এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি কাজের সাথে জরিত শ্রমিকরাও এখন এ পেশার দিকে ঝুকে পড়ছে। লাভ ভাল হলেও বাজারে মাদুরের আমদানি বেশি হলে পাইকারি মহাজনদের পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে মাঝে মধ্যেই বাজার নিম্ন মুখি হয়। সেক্ষেত্রে লাভ কম হলেও লোকসান হয় না।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার পাতি দিয়ে তৈরি পরিবেশ বান্ধব মাদুরের দেশজুড়ে খ্যাতি থাকলেও হঠাৎ করে গত তিন-চার বছর আগে ত্রিমোহনী এলাকায় তিনটি প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির মিল স্থাপন হওয়ার পর থেকে পাতি দিয়ে তৈরি মাদুরের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুরের চাহিদা দিনদিন বেশি হওয়ায় উপজেলা সদর, বাহাদুরপুর, চকমনু, ত্রিমোহনী, মিরাট, দূর্গাপুর, বেতগাড়ি এলাকায় শত শত বেকার তরুন তরুনী প্লাস্টিক মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রয়ের মাধ্যমে ভাল আয় করছে। বেকার থাকা মানুষগুলো স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প শ্রমে এক একটি পরিবার যৌথভাবে প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। প্লাস্টিক মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ (পাইপ) মিল মালিকরা প্রতি কেজি ৯০ থেকে শ্রেণী ভেদে একশত দশ টাকায় খুচরা বিক্রয় করে। তিন হাত লম্বা প্রতিটি প্লাস্টিক মাদুর পাইকারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে ও নকশা ভেদে খুচরা ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। যা তৈরিতে খরচ পড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পাতির তৈরি মাদুর হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। ব্যাপক চাহিদার কারণে উপজেলার তিনটি প্লাস্টিক পাইপ তৈরির মিল মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ গুলো সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় আগে আসলে আগে পাবেন এ ভিত্তিতে পাইপগুলো মাদুর তৈরির কাজে জরিতদের কাছে দিচ্ছে। এমনকি পাইপ নিতে মিল মালিকদের কাছে অগ্রীম টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়।
প্লাস্টিক মাদুর তৈরির কাজে জরিত উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন জানান, আমরা পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই মাদুর তৈরি ও বিক্রয়ের সাথে জরিত। গত তিন বছর ধরে প্লাস্টিক মাদুর তৈরি করে বাজারে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রয় করি। জায়নামাজের মাপে দুই বাই চার ফিট মাদুর আমি বেশি তৈরি করি। আমাদের ত্রিমোহনী হাটে প্লাস্টিক মাদুরের ব্যাপক চাহিদার কারণে ব্যবসা বর্তমান ভাল হচ্ছে।
নীলফামারি থেকে আসা প্লাস্টিক মাদুরের পাইকারি ক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই হাটে এসে প্লাস্টিকের মাদুর পাইকারি দরে কিনে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন