শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সেতুর পাশেই বাঁশের সাঁকো সচল

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে মো: সোহেল রানা খান : মানিকগঞ্জে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সেতুটি ব্যবহার করার আগেই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পরেছে। সেতুটি ব্যবহার না করতে পেরে পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলচল করছে স্থানীয়রা।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা সেতুটি কোনো কাজেই লাগলো না। হরিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের বাস্তবায়নে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট কর্মসূচি ২০১২-২০১৩ র আওতায় দিয়াবাড়ি বেইলি সেতু সংলগ্ন উত্তর পাশের রাস্তায় ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট উঁচু এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় ঠিকাদার দীপক কুমার সরকার।
২০১৩ সালে এই সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেতুটির দুই পাশের মাটি না ফেলায় এই সেতুটি তখন জনসাধারনের কোনো কাজেই আসে নাই। চার বছর ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় গেলো বর্ষায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে যায়। সেতু ভাঙনের পর দুর্ভোগে পড়া অস্থানীয় জনগন সরকারের একটি বিরাট অংকের টাকা খরচ করে নির্মিত সেতুটি ব্যবহার করার আগেই ভেঙে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র কাজ করে চলে যাওয়ায় এমন পরিনতি হয়েছে।
জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের গোপালপুর এবং খোদানওদা গ্রামে ৫শ পরিবারের বাসবাস। এই দুটি গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সেতু না থাকার কারণে তাদের উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, সরিষা, পেয়াজ, মরিচ, আলু, মৌসুমী সবজিসহ অন্যান্য ফসল সময়মত বাজারজাত করতে পারছেন না। গর্ভবতী মাসহ অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
জানা যায়, ওই গ্রাম দুটির হাট বাজার, স্কুল কলেজ, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য দিয়াবাড়ি গোপালপুর খোদানওদা কাঁচা রাস্তাটি। এই রাস্তার ওপর পাকা সেতুটি নির্মাণে এলাকাবাসী খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার কোনো রকমে সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ করলেও সেতুর দুই প্রান্তে মাটি না ফেলায় এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারেনি। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সেতুটি অবশেষে গত বন্যায় ভেঙে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বারবার বলা পরও তিনি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেননি।
এদিকে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর ওই দুই গ্রামবাসী চালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিশ্বাসকে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরির দাবি করেছিল। তিনি তাদের সেই দাবিও রক্ষা করেননি। ফলে বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। তবে কোনো রকমে পায়ে হেটে চলাচল করতে পারলেও তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না তারা।
শ্যামল কুমার রাজবংশী, বাদশাহ বিশ্বাস, শেখ মমেজ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তারা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এই বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে। এতে তাদের খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। যারা টাকা দিতে পারেননি তারা গায়ে খেটেছে।
চালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিশ্বাস জানায়, সেতুটির ব্যাপারে তিনি সবসময় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। খুব সহসাই এখানে সেতু পুনর্র্নিমাণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ভাঙা সেতুটি অকশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেতুটির ঠিকাদার দীপক কুমার সরকার জানায়, কাজটি মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদার পেয়েছিল। সংসদ সদস্যের অনুরোধেই এই সেতু তিনি নির্মাণ করেছে। সেতুটি তিনি যথাযথ নিয়ম মেনেই করেছে, বন্যায় ভেঙে গেলে তো কারো কিছু করার নেই।
হরিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম শোভন জানায়, সেতুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। মাসখানেক আগে প্রকল্প পরিচালকসহ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশল উক্ত সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি মেরামত কিংবা পুনর্র্নিমাণ বিষয়ক কোনো নির্দেশনা দেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন