পাহাড়ে অবিরাম বর্ষণের ফলে আবারো পাহাড় ধসের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিবাসী। গত দু’দিনের টানা বর্ষণের ফলে ইতিমধ্যেই রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাউজানে প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং রাঙামাটি-বান্দরবান রুটে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই এই রুটে যাত্রীবাহি বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবহণ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। অবিরাম বর্ষণের ফলে জেলা বিভিন্ন স্থানের সড়ক পথগুলোতে ছোট ছোট ভাঙ্গন ও ফাটলের সৃষ্টি হলেও বড় ধরনের দূর্ঘটনার খবর সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এদিকে, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলাগুলোসহ রাঙামাটি শহরে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করার আহবান জানানো হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলাগুলোতে নির্বাহি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নিমিত্তে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স্থানে দূর্গতদের সহায়তা ৮শ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য, ৫শ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শহরে ২০ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস নিষিদ্ধসহ লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তাঁবু গেড়ে জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। দুর্যোগ হলেই সঙ্গে সঙ্গে কবলিত লোকজনকে উদ্ধার করে অস্থায়ী জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে। পরে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও উপকরণাদি মজুদ রাখা হয়েছে। অস্থায়ী জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র বসাতে ২০০ তাঁবু পাওয়া গেছে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আর রাঙামাটিতে পাহাড় ধসসহ যে কোনো দুর্যোগে প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চাই না। এ জন্য সবার সতর্ক দরকার। শহরের বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শনে নামে প্রশাসন ও দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটির যৌথ দল।
এদিকে সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে ধসের খবর পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছরের ঘটনায় বিধ্বস্ত হওয়া রাস্তা মেরামতে গাড়া গাছের খুঁটি উপড়ে গিয়ে নতুন করে ভাঙছে রাস্তা। শহরের ভেদভেদী, রেডিও সেন্টার, পাসপোর্ট অফিসের সামনে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও ধস শুরু হয়েছে। ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন অফিস এলাকা, রাঙাপানি, শিমুলতলী, রূপনগরসহ রাঙামাটি শহর এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনও ঝুঁকিতে বসবাস করছেন অসংখ্য মানুষ। শুধু রাঙামাটি শহরে ৩৩ স্থান এবং ৫৬৩ পরিবারকে পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভিটায় সাইনবোর্ড বসিয়ে বসবাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানিয়েছেন, রাঙামাটির সড়কগুলো এখনো পর্যন্ত চলার উপযোগী রয়েছে। সম্ভাব্য দূর্ঘটনা মোকাবেলায় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে সার্বক্ষনিকভাবে মাঠে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, গত দুদিনের বড় ধরনের কোনো দূর্ঘটনার খবর তারা পাননি। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় দমকল বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন দেড় শতাধিক মানুষ। রাস্তাঘাট, সেতু, স্থাপনাসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন