রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইজিবাইক বৈধতা পাচ্ছে

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে সরকার। তবে এ নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলেছেন, অবৈধ এ বাহনটির অনুমোদন দিলে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি এ সেক্টরে অরাজকতা বাড়তেই থাকবে। যানজটের পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার কথায় মনে হয়েছে তিনি তখনই এগুলোর অনুমোদন দিয়ে দিবেন। তবুও আমরা এর বিরোধীতা করেছি। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না- তা আমরা বৈঠকে জানিয়েছি। আগামী বৈঠকে আবারও এ নিয়ে আলোচনা হবে।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় সয়লাব দেশ। সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এ যানবাহন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ সব ধরণের থ্রি হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কেও চলছে ইজিবাইকসহ থ্রি-হুইলার। একই সাথে রাজধানীসহ সারাদেশেই হু-হু করে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার ও রিকশার সংখ্যা। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারনে মহাসড়কগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ঝরছে তাজা প্রাণ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে শত শত মানুষ। মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন রকমের থ্রি-হুইলারের কারণে দুর্ঘটনা কমছে না। আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এসবের কারণে দুর্ঘটনার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। পরিবহন মালিকরা মহাসড়কে এসব অবৈধ যান চলাচলের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবকে দায়ি করেছেন।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো দুর্ঘটনা কমাতে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে এখন ক্লান্ত। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মহাসড়কের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ এসব অবৈধ যানবাহন। এসবের কারণে যানজট হয়, বাস স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। সময় নষ্ট হয় বলে খরচ বাড়ে। তাই আমরা চাই এগুলো বন্ধ হোক। এজন্য সরকারের সাথে মালিক সমিতির বহুবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই এসব বন্ধ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে লাখ লাখ ইজিবাইক ও ব্যটারিচালিক রিকশা চলাচলের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। তারা মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে এগুলোকে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। ইজিবাইকের চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না দিয়ে দেশের কোথাও এ যান চলাচল করতে পারে না। এদিকে, নিষিদ্ধ এ যানগুলোর ব্যাটারি চার্জ করার জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে। যেগুলোর বেশিরভাগই চোরাই লাইন থেকে আসে।
এদিকে, রাজধানীতে ঢাকাও এখন ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশায় সয়লাব। শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে ঢাকা শহরে এখন ৫০ হাজারের বেশি মোটরচালিত রিকশা চলাচল করছে। আর ঢাকার চারপাশে ইজিবাইক চলছে কমপক্ষে দেড় লাখ। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ সরকার জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এগুলোকে বৈধতা দিতে চাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় রিকশা-ভ্যান-শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইনসুর আলী ইনকিলাবকে বলেন, বৈঠকে ইজিবাকই ও ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমরা শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিরা ইজিবাইকের বিপক্ষে মত দিয়েছি। তারপরেও যদি সরকার মনে করে তবে এগুলোকে রেজিস্ট্রেশন দিতে পারে। অবৈধভাবে এগুলোকে এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
বৈঠকে উপস্থিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, আমি বলেছি ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত যানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, বর্তমানে সারাদেশে ১০ লাখ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব পরিবহনে প্রায় ৪০ লাখ ব্যাটারি রয়েছে। বছরের মাথায় ব্যাটারিগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন এগুলো ধ্বংস করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই ব্যাটারিগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। ফলে এ কারণে পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। একই সাথে এগুলো বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে। এর বেশিরভাগ অবৈধ পন্থায় চার্জ করা হয়।
হানিফ খোকন বলেন, ধীর গতির এই যানগুলোর ব্রেকের সিস্টেম ভালো না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে এই পরিবহনগুলো রাখা হয়। এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলে মহানগরীতে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিদ্যুতেরও ভয়াবহ অপচয় হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ব্যটারিচালিত যানগুলোর বৈধতা দিতে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, মটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত যানগুলো অনুমোদন দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে সরকার চাইলে আইন পরিবর্তন করে অনুমোদন দিতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন