অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদে শিগগিরি অভিযানে নামছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দুদিন আগেও পুলিশ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মীরহাজিরবাগ এলাকায় ব্যাটারিচালিক রিকশা জব্দ করেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রিকশা-ভ্যান-ঠেলাগাড়ি-টালিগাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ির নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তন আজ থেকে শেষ হচ্ছে। একই সাথে সংগৃহীত আবেদনপত্র জমা দেওয়ার মেয়াদ শেষ দিন আগামীকাল। এখন প্রস্তুতি চলছে অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানের। ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, খুব শিগগিরি এ অভিযান শুরু হবে। অভিযানে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কারণ অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা অপসারণের জন্য মালিকদেরকে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর তারা নিজ থেকে অবৈধ যান অপসারণ না করলে অভিযান চালিয়ে জব্দ শেষে এগুলো ধ্বংস করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় শুধু ব্যটারিচালিত রিকশার সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। ইজিবাইক ৩/৪ হাজার। ডিএসসিসির ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ডে এসব অবৈধ যানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে কদমতলী, শ্যামপুর ও ডেমরা থানা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। এসব থানা এলাকার কোনো রাস্তা দিয়ে নিরাপদে পায়ে হাঁটাও যায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকাতেই ব্যটারিচালিক রিকশার সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ইজিবাইক আছে দুই সহস্রাধিক। স্থানীয় সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে এসব নিষিদ্ধ যান। আলাপকালে ভুক্তভোগিরা জানান, ব্যটারিচালিত যানের ভিড় এতোটাই বেড়েছে যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কয়েক বছর আগে দনিয়া এলাকায় এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয়েছে ইজিবাইক দুর্ঘটনায়।
দক্ষিণ সিটির শ্যামপুর, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাজার হাজার ইজিবাইক ও মোটরচালিক রিকশার পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীরা। কদমতলী থানা এলাকায় ইজিবাইকের বেশ কয়েকটি রুটের মধ্যে রায়েরবাগ ও মোহাম্মদবাগ রুটে চলাচল করে তিন শতাধিক ইজিবাইক ও সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা। রায়েরবাগের এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি। এছাড়া বড়ইতলা থেকে বিক্রমপুর প্লাজা, পোস্তগোলা থেকে পাগলা, ধোলাইরপাড় থেকে শনিরআখড়া, জুরাইন মেইন রাস্তা থেকে মুরাদপুর হয়ে কোদারবাজার পর্যন্ত আছে একটি করে রুট। প্রতিটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন দেড়শ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, নিষিদ্ধ এসব রিকশা ও ইজিবাইক টোকেন সিস্টেমে রাস্তায় চলাচল করে। প্রতিটি রিকশা বা ইজিবাইকের জন্য মাসে ১২শ’ টাকা করে টোকেন সংগ্রহ করতে হয় চালকদের। প্রভাবশালীরা এই টোকেন বাণিজ্য করছে। তারাই টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করছে। ঢাকা দক্ষিণে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়র মহোদয় অবশ্যই এসব উচ্ছেদ করতে পারবেন। তার সব কাজই স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব। আমরা আশা করি একই সাথে তিনি অবৈধ সিএনজি অটোরিকশাও উচ্ছেদ করবেন। তিনি বলেন, ডেমরা, কদমতলী, শ্যামপুর থানা এলাকায় যেসব অটোরিকশা চলে তার বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার। পুলিশকে টাকা দিয়ে এগুলো রাজধানীতে চলছে। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।
জানা গেছে, সহস্রাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণের মুরাদপুর এলাকাতেই আছে কয়েকটি গ্যারেজ। যেগুলোতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া আছে বিদ্যুত বিভাগের স্থানীয় প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে। ভুক্তভোগিরা ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের জন্য এসব নিষিদ্ধ যানকে দায়ি করে জানান, এগুলোর বেশিরভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে চার্জ দেয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ নেয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে শ্যামপুর বিদ্যুত অফিসের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পর আবার বিদ্যুৎ চুরি শুরু হয়েছে। জুরাইন, শ্যামপুর, মুরাদপুর এলাকায় বিদ্যুত চুরির গডফাদার নাসির ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে এখন অবৈধ বিদ্যুতে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দেয়া চলছে। একই সাথে এলাকায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণাও বেড়েছে।
জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরী করা হয় কদমতলী থানার পাটেরবাগ, দনিয়া, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা, ভাঙ্গাপ্রেসসহ বিভিন্ন এলাকায়। দনিয়া এলাকায় চলাচলকারি ৫ শতাধিক ইজিবাইক ও রিকশার চাঁদা তোলে মরণ নামে একজন। প্রভাবশালীদের হয়ে সে চাঁদার টাকা তোলে। সেখান থেকে মোটা অঙ্ক যায় থানায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসির মেয়র ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণার পর কদমতলী থানার চাঁদাবাজ নেতারা ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চাঁদার অঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা মালিকপক্ষকে বলেছেন, টাকার অঙ্ক বাড়ালে সেই টাকায় উপরের মহলকে ম্যানেজ করা হবে। জানতে চাইলে রুকুন উদ্দিন নামে এক মালিক বলেন, কে কাকে ম্যানেজ করবে তাতো আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা আশায় টাকার অঙ্ক বাড়িয়েছি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখার কথা স্বীকার করে রায়েরবাগ এলাকার মালিক সুলতান আহমেদ বলেন, আমরা নেতাদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। তারা ম্যানেজ করতে না পারলে রিকশা থেকে মোটর খুলে ফেলতে হবে। এখনও কেন খোলেন নি জানতে চাইলে ওই মালিক বলেন, যারা চাঁদার টাকা নেয় তারা তো বলেছে খুলতে হবে না। অভিযান শুরু হলে কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর আবার সব আগের মতোই চলবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন