প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই নানাবিধ সমস্যা ও সংকটে নিপতিত। যানজট, সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা, রাস্তায় মাথার উপর তারের জঞ্জাল ইত্যাদি আপদ নিয়ে চলছে ঢাকার জনজীবন। নিরন্তর এই সমস্যার মধ্য দিয়েই চলছে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মেট্টোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সাথে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলকে সংযুক্তকারী পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক রূপ লাভ করবে। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে বসবাসের অযোগ্য নগরী ঢাকাকে আধুনিক, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি খুব সহজ নয়। তবে রাজধানীতে নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে আধুনিক নগরী হিসেবে কিছুটা হলেও এর ঠাঁই মিলবে। ঢাকা রিকশার শহর হিসেবে পরিচিত। লাখ লাখ রিকশা শহরের প্রতিটি রাস্তায় অবাধে চলাচল করছে। এমন দৃশ্য বিশ্বের কোনো রাজধানীতে দেখা যায় না। দীর্ঘদিনের গণদাবী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপে কিছু রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়ীন। উপরন্তু নতুন আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ঢাকার রাস্তা ও অলিগলিতে রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। সরকারি দলের বেশ কিছু স্থানীয় অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী যানজট ও পরিবেশ বিনষ্টকারী এসব নিষিদ্ধ যানবাহন রাস্তায় নামিয়ে এবং অন্যদের কাছ থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। প্রতিদিন কোটি টাকা নগদ লেনদেনের সুযোগ থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সদস্যরাও এর ভাগ পেয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে লোক দেখানো নিষেধাজ্ঞা ও অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেলেও এসব অভিযান এখন যেন ইঁদুর-বেড়াল খেলায় পরিণত হয়েছে। ভাগাভাগি অথবা অদৃশ্য সমঝোতায় সবকিছু সামলে নিয়ে বিপুল উৎসাহে বাড়িয়ে চলেছে এ খাতে চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্য। অন্যদিকে এসব ব্যাটারি চালিত লাখ লাখ ইজিবাইক বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে চার্জ দিয়ে বিদ্যুৎ খাতকে চাপে ফেলছে। যত্রতত্র দুর্ঘটনা, রাস্তা ও অলিগলিতে মানুষের চলাচলের স্বাচ্ছন্দ এবং নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। কোনো আধুনিক নগরীতে এমন নিষিদ্ধ ও বিশৃঙ্খল গণপরিবহণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশের রাজধানী শহরে গণপরিবহণে এমন বিশৃঙ্খলা চলতে পারে না। নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের পাশাপাশি মাথার উপর ঝুলছে ইন্টারনেট ও ডিশের তারসহ বিভিন্ন সংস্থার তারের জঞ্জাল। এসব তারের জঞ্জাল রাজধানীর সৌন্দর্যকে যেমন বিনষ্ট করছে, তেমনি বিপজ্জনকও হয়ে উঠেছে। বারবার এসব তার সরানোর উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। অবশেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেন কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই এসব তারের জঞ্জাল সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের একটি ভাল উদ্যোগ। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশা করি, তার এসব উদ্যোগ কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রæত বাস্তব রূপ লাভ করবে।
ঢাকার যানজট নিরসনে গত চার দশকেও ঢাকা থেকে রিকশা কমিয়ে আনার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। উপরন্তু অযান্ত্রিক রিকশারর পাশাপাশি এখন বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক। যেখানে শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার, মেট্টোরেল,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তারই পাশাপাশি রাজনৈতিক মদতে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এসব রিকশা ও ইজিবাইক বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। দেখা যাবে, উপরে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে থাকলেও নিচে এসব নিষিদ্ধ রিকশা ও তারের জঞ্জাল থেকে যাচ্ছে, যা আধুনিক শহরের সাথে বেমানান। এই দুই আপদ রাজধানীর সৌন্দর্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনে হয়তো দেখা যাবে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপরেও এ সমস্যা দেখা দেবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র অবৈধ রিকশা, ইজিবাইক, তারের জঞ্জাল ও অনৈধ বিলবোর্ড অপসারণে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তবে রিকশা, ইজিবাইক বন্ধ এবং তারের জঞ্জাল সরাতে দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। একদিকে পরিস্থিতির উন্নতি অন্যদিকে অবনতি থেকে যাওয়া কাম্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজধানীর সকল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন