ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ অভিযানের সূচনা হয়। প্রথম দিনের ঢিলেঢালা এ অভিযানে মাত্র ৭টি মামলা হয়েছে। এ কারণেই ঢাকা দক্ষিণের অন্য এলাকাগুলোতে অভিযানের কোনো প্রভাব পড়েনি। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দক্ষিণের সুত্রাপুর, কোতয়ালী, লালবাগ, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিলসহ পুরো দক্ষিণ সিটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামপুর এলাকায় দেকা গেছে, আগের মতোই শত শত ইজিবাইক ও হাজারো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। রিকশার দাপটে রাস্তায় পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা নেই। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া থেকে কদমতলীর ধোলাইপাড় পর্যন্ত শত শত ইজিবাইক ও কয়েক হাজার রিকশা চলাচল করে। গতকাল সেই সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। অভিযানে ধরা পড়ার ভয়ে অনেক রিকশা ও ইজিবাইক কদমতলী এলাকায় এসেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগিরা। তবে ইজিবাইক ও রিকশার চালকদের সাথে কথা বলে সে সম্পর্কে কোনো ধারনা মেলেনি। সালাম নামে একজন ইজিবাইক চালক বলেন, কিসের আবার অভিযান? আমরা তো টাকা দিয়েই ইজিবাইক চালায়। যারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলে তারা অভিযান ঠেকাতে না পারলে টাকা দিবো কেন? রিকশাচালক দেলোয়ার জানান, তিনি কোনো অভিযানের কথা শোনেন নি। মালিক তাকে কিছুই জানায় নি। শনিরআখড়া বাজার স্ট্যান্ডে সোহাগ নামে একজন ইজিবাইক চালক বলেন, শুনেছি অভিযান শুরু হবে। তবে আমাদের এই দিকে হবে বলে মনে হয় না। নেতারা উপরে যোগাযোগ করেছেন। এজন্য অতিরিক্ত টাকাও নিয়েছেন তারা। এরপর অভিযান হয় কি করে?
এদিকে, সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগিরাও আশা করেছিলেন সোমবার থেকে রাস্তায় হয়তো এসব অবৈধ যানের দেখা পাবেন না। ধোলাইপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, সাত সকালে উঠে রাস্তায় গিয়ে দেখি সবকিছু আগের মতোই চলছে। আশা করেছিলাম এগুলো বন্ধ হবে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুরেও কোনো উন্নতি দেখলাম না। বরং আমার কাছে মনে হলো অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিক রিকশার সংখ্য বেড়েছে। শ্যামপুরের পোস্তাগোলায় হাজার হাজার এসব অবৈধ যান চলাচল করছে পুলিশের চোখের সামনেই। দেখা গেছে, পুলিশই এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। এ প্রসঙ্গে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এসব যান চলে ক্ষমতাসীনদের ম্যানেজ করে। যারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলে তারা প্রভাবশালী এবং রজনৈতিক মদদপুষ্ট। এ কারণে আমরা ইচ্ছা করলেই এগুলো বন্ধ করতে পারি না। একটু এদিক-ওদিক হলেই এরা রাস্তা আটকে দিবে। তখন পুলিশ পড়বে বিপদে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এসব অবৈধ যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মেয়র ওই দিন বলেছেন, এ ধরনের রিকশা বা যানবাহন ডিএসসিসি’র সড়কে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর বিভিন্ন পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালিকদেরকে এসব অবৈধ যান অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। সরেজমিনে দক্ষিণ সিটির কয়েকটি এলাকা ঘুরে মালিক ও চালকদের সাথে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে মালিকপক্ষ সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞাকে খুব একটা পাত্তা দেন নি। এখনও তাদের অবস্থান আগের মতোই। তবে দক্ষিণ সিটির একজন কর্মকর্তা গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, সোমবার মাত্র একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। আজ থেকে দুটি মোবাইল কোর্ট অভিযানে নামবে। ক্রমে সব এলাকাতেই অভিযান চালানো হবে।
জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭ লাখ। এর মধ্যে ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান। বাকি ৭ লাখ ইজিবাইক। আর ঢাকায় এই সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১০ লাখ রিকশা বাকি ২ লাখ ইজিবাইক। এসব অবৈধ যান থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই চাঁদা তুলে থাকে। চাঁদার একটা বড় অংশ পায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশায় সয়লাব ঢাকা। মহাসড়কসহ সারাদেশসহ ঢাকার অলিতে-গলিতে এখন শত শত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসবের কারনে যানজট, দুর্ভোগ আর দুর্ঘটনা মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। রাজধানীতে ইজিবাইকের দৌরাত্ম দেখলে আর মনেই হয় না এগুলো নিষিদ্ধ কোনো যান। এর সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ১০ লাখ রিকশার শহর ঢাকায় এখন মোটরচালিত রিকশা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে অথচ এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ডিএমপি সদর দফতরের ট্রাফিক বিভাগ থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা যাতে না চলে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। সেই নির্দেশনাও মানছে না পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন