রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাঁচার জন্য খাওয়া

মীর রাসেল, চবি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

হাতের তর্জনির এক করের সাইজ এক টুকরা গোশত। অথবা খুব পাতলা একটুকরা মাছ। সবজি আর পানির মতো পাতলা ডাল, সাথে মোটা চালের ভাত- এ হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলের এক বেলা খাবারের মেনু। আর এই খাবার খেয়েই দিন পার করছেন চবির হাজার হাজার শিক্ষার্থী। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য রান্না করা হয় ১ কেজি ডাল। ডাল তো নয় টলটলে পানি। হলুদ না দিলে বোঝাই যেত না ডাল না পানি। পানি ভেবে ডালের পাত্রে হাত ধুয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
গরু গোশতের স্বাদ ভুলতে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ হলে গরুর গোশত দেওয়া হয় না। ফার্মের মুরগি রান্না হয়। গোশতের সাইজ একেবারেই ছোট, তার সাথে থাকে না আলু। মাঝে মধ্যে গোশতের সাথে দেওয়া হয় শশা। মাছের মধ্যে দেওয়া হয় রুই, মৃগেল, তেলাপিয়া। আবার একই মাছ দেওয়া হয় পর পর কয়েক বেলা। এতে করে বিরক্ত হয় শিক্ষার্থীরা। রান্নার মানও যাচ্ছে তাই। ভাত দেওয়া হয় মোটা চালের। পুরাতন চাল হওয়ায় ভাতে থাকে উৎকট গন্ধ। পরিবেশন করা হয় ঠান্ডা অবস্থায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই মেনু একাধিক বার রান্নার করা হয়। একবার মাছ কিনে ১০/১২ দিন চালানোর কারণে মাছের আসল স্বাদ পাওয়া যায় না। একই ঝোলে মাছ, গোশতের টুকরা চুবিয়ে দেওয়া হয়।
হলগুলোতে ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত সব পরিবারের সন্তানরা খাচ্ছেন এই খাবার। এ নিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর মাঝে ক্ষোভ থাকলেও তা বলার মত যেন কেউ নেই। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় সামার্থ্য থাকার পরও অনেকেই ভাল খাবার খেতে পারেন না। হলের বাইরে ক্যাম্পাসে আছে ক্যাফেটেরিয়া ও বেশকিছু হোটেল। তবে এসবের খাবারের মানও তেমন উন্নত নয়। নোংরা পরিবেশে খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হয়। আবার দামও নেওয়া হয় চড়া। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। এসব হোটেলের খাবারে প্রায়ই পোকামাকড় থেকে শুরু করে ইটপাথরও পাওয়া যায়। এনিয়ে হোটেল ম্যানেজারদের সাথে শিক্ষার্থীদের ঝগড়া বিবাদও হয় হর হামেশা। চবির ১১টি আবাসিক হলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন কটেজ ও আবাসিক ফ্ল্যাটের শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত হলের ডাইনিংয়ে আহার গ্রহণ করেন।
আলাওল হলের শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী মোঃ আব্বাস বলেন, কি খাচ্ছি কোন কিছুর স্বাদ বুঝি না। খাওয়ার সময় হলে পেটে কিছু দিতে হয় তাই খাই। বাজারে কত রকমের সবজি তরকারি দেখতে পাওয়া যায় অথচ হলের ডাইনিংয়ে আসলে মনে হয় একটি দুটি সবজি ছাড়া দেশে কোথাও কোন সবজি জন্মায়নি। পত্রিকায় নিউজ হলে দু’একদিন খাবার ভালো হয় পরে আবার আগের মত হয়ে যায়। প্রীতিলতা হলের শিক্ষার্থী জবা (ছদ্মনাম) বলেন, হলে খেয়ে প্রায়ই পেটের পীড়ায় ভুগি। তবুও বাধ্য হয়ে খেতে হয়। মেয়েদের হলে অনেকে হিটার জ্বালিয়ে রান্না করেন, তবে সময়ের অভাবে আমরা অনেকে তা পারিনা। তিনি বলেন, খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কারো কোন নজর নেই। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসিন মনে হয়। ছাত্র সংগঠনগুলোও এবিষয় নিয়ে তেমন উচ্চ বাচ্য করে না, এটা দুঃখজনক।
আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর আবদুল হক গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান উন্নত করা দরকার। আমি নিজে সেখানে গিয়ে দেখেছি শিক্ষার্থীরা যা খাচ্ছে তা নিন্মমানের। হলের ভবন পুরাতন হওয়ায় যেখানে রান্না হয় সেটি খুব অপরিস্কার ও স্যাৎসেতে। আর যারা রান্না ও পরিবেশনের কাজে নিয়োজিত তাদেরও আরও পরিস্কার থাকতে হবে। তিনি নিজে বিষয়টি দেখছেন, এবং খাবারের মানসহ সার্বিক অবস্থা আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন