সাভারের ট্যানারিতে পরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন গড়ে না উঠায় দ‚ষণে আক্রান্ত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। চামড়া শিল্পকর্তৃপক্ষ ও মালিকদের কারসাজিতে কলকারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এই নদীতে। এতে করে ধলেশ্বরীও বুড়িগঙ্গা হতে চলেছে।
ট্যানারির অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত বর্জ্যের লাইন সংযুক্ত করা হয়েছে নদীর সাথে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বর্জ্য স্ক্রিনিং করার পর দুটি আলাাদা পাইপ লাইনে সিইটিপিতে এবং ক্রোম রিকোভারি ইউনিটে নির্গমণ করা বাঞ্চনীয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বর্জ্য স্ক্রিনিং ছাড়াই পাইপ লাইনে ছেড়ে দিচ্ছে।
সরেজমিন সাভার চামড়া শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, শিল্পনগরীর এখনও অনেক প্লট একেবারেই খালি পড়ে রয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে যারা শুরু করেছে তাদের মধ্যে বেশিভাগেরই আবার অবকাঠামো শতভাগ প্রস্তুত নয়। তার মধ্যেই চলছে চামড়ার কাজ। সামনের সারিতে কয়েকটি বড় ট্যানারির কাজ করছে তবে পেছনের দিকে এখনও বেশিভাগের কাজ শুরু হয়নি। এখনো ডাম্প ইয়ার্ড তৈরির কার্যক্রম শুরুই হয় নাই। কিছু অংশ পুকুরে অন্য অংশ যত্রতত্র নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ১২ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধনের দুটি মডিউল কাঙ্খিত মানে পরিশোধনে ব্যর্থ। সিইটিপির প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে এবং পরিশোধিত বর্জ্যের গুণাগুণ নিয়মিত পরীক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত কোন গবেষণাগারও স্থাপিত হয়নি। সিইটিপির দায়িত্বে থাকা আরশাদ আলী নামে এক কর্মচারী বলেন, দিনের বেলায় সব ঠিক আছে। রাতে সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলা হয়।
ট্যানারি ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, চামড়া শিল্প নগরীতে শ্রমিকদের আবাসন, হাসপাতাল, স্কুল, ক্যান্টিন ও ইউনিয়ন (সিবিএ) কার্যালয়ের ব্যবস্থাসহ শ্রমিক সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে এর আগে আমরা আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের পর ইউনিয়ন (সিবিএ) কার্যালয় হলেও অন্যান্য কোন সুযোগ সুবিধা এখনও হয় নাই। আমাদের দাবি পূরণ না হলে পুনরায় আমরা আন্দোলনে যাব। বর্জ্য নদীতে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা সরজমিনে যা দেখেছেন তাই ঠিক আছে। কারখানা চালুর প্রসঙ্গে এ শ্রমিক নতা বলেন, একই মালিকের একাধিক প্লট রয়েছে। সেই হিসেবে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে রয়েছে ১৫-১৭টি কারখানা।
তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর জানান, ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছেনা। কোমলমতি শিশুরা অসুস্থ্য হয়ে পরছে। ফসলি জমিতে কোনো শাকসবজি বা ফসল হচ্ছে না। তিনি বলেন, সিইটিপি তারা শতভাগ প্রয়োগ করছে না। দিনে চালাচ্ছে আর রাতে বন্ধ রাখছে। তিনি আরো বলেন, সব বিষয় নিয়ে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। একাধিকবার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনকে সাথে নিয়ে মানববন্ধনও করা হয়েছে।
নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’র সাভার শাখার আহ্বায়ক মনির হোসেন বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি বিসিকের কর্মকর্তারা দিয়েছিলেন তার কোনটাই রক্ষা করা হয়নি। বর্তমানে ট্যানারির বর্জ্য নিষ্কাশন অব্যবস্থাপনায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে দ‚ষণ হচ্ছে। এই দ‚ষিত পানি ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে। এতে করে বুড়িগঙ্গার মত ধলেশ্বরী নদীর পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে।
সাভার চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক সাব্বীর আহমেদ স্বীকার করেন, সিইটিপি চালু থাকলেও তা শতভাগ প্রয়োগ হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তবুও আগে যেভাবে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হত আমি আসার পর তা বন্ধ করে একপাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ট্যানারিতে মোট ২০৫টা প্লট রয়েছে যার মালিক ১৫৪টি ট্যানারী। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ, আংশিক ও নির্মানাধীনসহ ১১১টি ট্যানারিতে কাজ হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগ পেয়েছে ৩৭ট্যানারি। আর ১৭টি কারখানায় গ্যাস সংযোগ প্রক্রিয়াধীন। তবে ঈদের আগে আর কোন ট্যানারি চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে বলেন, মালিকদের একাধিকবার বিসিকের পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয়েছে তারা গুরুত্বই দিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানারী এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ’র মুঠফোনে একাধিকবার ফোন করার পর তিনি রিসিভ করেন। পরে ট্যানারী প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন