কোরবানির ঈদে তিনগুন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে গবাদি পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫৫ ট্যানারির মধ্যে ১২০টি ট্যানারি পুরোপুরি চালু রয়েছে তবে বাকি ৩৫টি ট্যানারির কাজ কোরবানি ঈদের আগেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। এদিকে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলেও ট্যানারির কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হচ্ছে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সব ট্যানারি স্থানান্তর হলে উৎপাদনক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে চার গুণেরও বেশি হবে। চামড়া শিল্প নগরীতে আধুনিক ক্যাপিটাল মেশিনারিজ স্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রয়োজন হবে, তা দেশীয় গবাদি পশু থেকে পাওয়া সহজ হবে না। এ অবস্থায় প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বর্গফুট কাঁচা চামড়া বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী গড়ে ওঠায় উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে তিন গুণ। এখন ট্যানারিশিল্পে কাঁচামাল সংকট দেখা দিচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি বাড়াতে হলে দেশের অভ্যন্তরে গবাদি পশুর উৎপাদন-পালন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গবাদি পশু এবং কাঁচা চামড়া আমদানি সহজ করতে হবে। অন্যথায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, দেশের ট্যানারিগুলো কোরবানির ঈদের ওপর ভিত্তি করে টিকে আছে। সারা বছর তেমন বেশি কাঁচা চামড়া পাওয়া যায় না। ট্যানারিশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবাদি পশু আমদানির প্রয়োজন হবে। এতে দেশে গবাদি পশুর মাংসের চাহিদাও পূরণ হবে।
সূত্র মতে, দেশে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে কাঁচামাল (কাঁচা চামড়া) সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট থেকে অতি দ্রুত উত্তরণের জন্য প্রয়োজনে গবাদি পশু আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি উঠেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি গবাদি পশু পালনের উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ ও সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিতকরণে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চামড়াশিল্প মালিকরা আরো জানান, সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে অবকাঠামো ও কারিগরি উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিণিয়োগ করেছে। এই খাতে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প গড়ে উঠবে বলে আশা করেন শিল্প মালিকরা।
তবে ট্যানারির অবকাঠামো নির্মাণের সব কাজ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিইটিপি’র চারটি মডিউলের মধ্যে মাত্র দু’টি চালু করতে পেরেছে বিসিক। বাকি মডিউলগুলো কবে নাগাদ চালু হবে-তা নিশ্চিত করে বলতে পরছেন না কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ট্যানারির বর্জ্য দুষিত হচ্ছে ধলেশ^রী নদী। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। এই বাস্তবতায় সাভারের কমপ্লায়েন্স নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। ট্যানারির আন্তর্জাতিক মানদন্ড রক্ষা করা না গেলে চামড়া ও চামড়াজাত রফতানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই সঙ্কট দূরীকরণ, ধলেশ^রী রক্ষা ও সিইটিপির দুটি মডিউল চালুসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা হয়েছে। কোরবানি ঈদের আগেই সঙ্কট থাকবে না। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গার্মেন্টেস এর পরে দ্বিতীয় রফতানি বাণিজ্যের তালিকায় রয়েছে চামড়া। তাই চামড়াকে ইয়ার অব দ্য প্রোডাক্ট ঘোষণা করা হয়েছে। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে নীতিমালা প্রনয়নসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে সরকার।
চামড়াশিল্প মালিকরা জানান, দেশের দ্বিতীয় রফতানি আয়ের খাত চামড়া সেক্টর থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছিল প্রায় এক হাজার ২৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী পাঁচ বছরে এই আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এই সেক্টরের শিল্পদ্যোক্তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এখন চামড়া রফতানি কমলেও জুতা ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়ে চলেছে।
চামড়া রফতানিকারকরা জানান, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মোট রফতানির পরিমাণ ২২ দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৩৮০ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়। সঠিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২১ সাল নাগাদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছেন রফতানিকারকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন