রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

চলচ্চিত্রে বাবা চরিত্রে অভিনয় করার শিল্পীর তীব্র সংকট

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নাটক বা চলচ্চিত্রে বাবা-মায়ের চরিত্রে শিল্পী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নির্মাতারা এ চরিত্রে কাক্সিক্ষত অভিনেতা পাচ্ছেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের চরিত্র বা পরিবার বাদ দিয়ে নাটক ও সিনেমা নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ ধরনের চরিত্রের সংকট চলচ্চিত্রে তীব্র হয়ে উঠেছে। যারা এক সময় নায়ক ছিলেন তারা এখন অনেকেই সিনেমা থেকে দূরে। তাদের অনেকেই অভিনয় করতে চান না। চাইলেও তাদের বিভিন্ন ধরনের দাবী থাকে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুধু নায়ক বা নায়িকা নয়, সংকট রয়েছে অন্যান্য চরিত্রাভিনেতারও। স¤প্রতি দাগ শিরোনামে একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন পরিচালক তারেক শিকদার। তিনি বলেন, আমি সারাজীবন চাষী (চাষী নজরুল ইসলাম) ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। তখন আমরা গল্প নির্বাচন করতাম পারিবারিক। এখন আর তা হয় না। কারণ শিল্পী নেই। আমি কিছুদিন আগে দাগ নামে একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছি। সেখানে বাবার চরিত্র নিয়ে আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেলিম আহম্মেদ নামের এক ভদ্রলোক যিনি শখের বশে অভিনয় করেন তাকে নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তাকে দিয়ে বাবার চরিত্র করিয়েছি। আমাদের বেশ কিছু তারকা শিল্পী আছেন, তাদের কাছে গিয়েছিলাম। তারা নিজের ওপর গল্প টেনে নিতে চান। তিনি বলেন, আমি একটা গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানাচ্ছি, সেখানে শিল্পী দরকার। আমি তো কোনো একজন শিল্পীকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র করছি না। আর শুধু বাবা নয়, আমাদের এখানে মা, বাবা, ভাই, বোন সব চরিত্রেরই অভাব রয়েছে। পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তোলপাড় ও রাগী নামে আমি দুটি চলচ্চিত্র এখন নির্মাণ করছি। কিন্তু কোনোটিতেই বাবার চরিত্র রাখিনি। কারণ বাবার চরিত্র নিয়ে কাজ করার মতো শিল্পী এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেই বললেই চলে। দু-একজন বাবার চরিত্রে কাজ করলেও তাদের শিডিউল পাওয়া কঠিন। এই দুই-একজন দিয়ে তো ইন্ডাস্ট্রির পঞ্চাশটি সিনেমা তৈরি কার যাবে না। নায়ক ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা, আলী রাজ, সাদেক বাচ্চু, প্রবীর মিত্র, সুব্রতদের মতো শিল্পীদের দিয়ে তো বাবার চরিত্র কিছুটা হলেও পোষানো যায়, এমন মন্তব্যের জবাবে পরিচালক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য পরিচালক অপূর্ব রানা বলেন, আলমগীর ভাই নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তারপরও তাকে দিয়ে বাবা চরিত্র করানো যাবে। আবার সব ধরনের বাবার চরিত্রে তিনি অভিনয় করবেন না। ফারুক ভাই আপাতত অভিনয় করছেন না। সোহেল রানা ভাই কিছুটা অসুস্থ। অন্যদের আরো অন্য ব্যস্ততা রয়েছে। আলী রাজ ভাই আমার একটি সিনেমায় বাবার চরিত্রে কাজ করেছিলেন এবং সেই সিনেমার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। বছরে পঞ্চাশটি সিনেমা নির্মাণ হলে তার মধ্যে তিনি হয়তো ১২টা সিনেমায় বাবার চরিত্র করতে পারবেন। সাদেক বাচ্চু ভাই দীর্ঘদিন ধরেই খল চরিত্রে কাজ করছেন, যে কারণে তাকে দিয়ে বাবার চরিত্র মানানসই হবে না। তিনি বলেন, ছোট পর্দার আবুল হায়াৎ, মাসুম আজিজ, তারিক এনাম খান একসময় চলচ্চিত্র কাজ করলেও এখন আর তেমন আগ্রহ দেখান না। কারণ এতগুলো টিভিতে কাজ করার পর তাদের পক্ষে শিডিউল দেয়ার মতো সময় থাকে না। তারা দুই-তিন দিন শূটিং করে একটি নাটক শেষ করেন, সেখানে চলচ্চিত্রের জন্য টানা এক মাস শিডিউল তারা দিতে পারেন না। এর মধ্যে মাসুম আজিজ ভাইকে দিয়ে গরিবের বাবা হয়, তারিক এনাম খানকে দিয়ে করানো যায় বড়লোকের বাবা। কিন্তু এক-দুজন শিল্পী নিয়ে চিন্তা করা যায় না। শিডিউল মেলানো যায় না। পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান মনে করেন, যাঁরা একদিন নায়ক ছিলেন, তারা যদি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, তাহলে চলচ্চিত্রের দর্শক তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বাবা-মা চরিত্রগুলোতে চাই তারকা শিল্পী। যারা একসময় নায়ক ছিলেন, এখন বয়স হয়েছে তারা যদি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, তাহলে দর্শক তাদের ভালভাবে গ্রহণ করবেন। রাজ্জাক সাহেব যত দিন বেঁচেছিলেন, বাবার চরিত্র কাজ করেছেন। উনাদের সাথে দুই-একজন নতুন শিল্পী থাকলেও সমস্যা হয় না। একেবারে নতুন শিল্পীকে দিয়ে বাবা বা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করালে তা দর্শক গ্রহণ করতে চায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন