হানিফ পরিবহনের বাস থেকে প্র¯্রাব করার জন্য নেমে চলন্ত বাসে উঠতে গেলে চালকের সহকারী ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দেয়ায় গুরুত্বর আহত হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল। মাথায় গুরুত্বর আঘাতের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে বাস চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার মিলে গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর খালে ফেলে দেয়া হয় তাকে। ২১ জুলাই ভোরে ঘটনার পর গত সোমবার ২৩ জুলাই সকালে সাইদুর রহমান পায়েলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম। গত মঙ্গলবার রাতে ঘটনায় জড়িত বাসচালকের সহকারী জনিসহ ৩জনকে গ্রেফতার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে পায়েল হত্যাকান্ডের নির্মম ও চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূল জবাবনন্দী দিয়েছে জনি। জবানবন্দী শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অন্য দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিজেদের দায় এড়াতেই পানিতে ফেলে দেয়া হয় পায়েলকে। পুলিশ সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ছেলেটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়। বাসচালক ও সুপারভাইজার মনে করে ছেলেটি মারা গেছে। কিন্তু তখনও সে আসলে মারা যায়নি। মারা গেছে ভেবেই তারা ছেলেটিকে পানিতে ফেলে দেয়। তখন পায়েল অজ্ঞান ছিল। তাকে চিকিৎসা দেয়া হলে সে বেঁচে যেত। তাছাড়া একজন গুরুত্বর আহত মানুষকে এভাবে পানিতে ফেলে দেয়ার বিষয়টি হত্যার সামিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, এর নেপথ্যে কোন কারন রয়েছে কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত আরো দু’জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নিহত পায়েলের মামা কামরুজ্জামান চৌধুরী টিটু দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা হতে পারে। আমরা পায়েল হত্যার পুরো রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) পায়েলের লাশ দাফন করা হয়েছে। তার মায়ের অবস্থা ভাল নেই।
জানা গেছে, ঘটনার সময় পায়েল গাড়ীতে উঠতে গেলে গাড়ি ( হানিফ- ভলভো) জোরে টান দেয় চালক। পায়েল দৌড়ে উঠতে যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ছিটকে রাস্তার একপাশে পরে যায় সে। এতে তার (পায়েল) নাক ও মুখ ফেটে যায় এবং ওই সময় ও গাড়ি থামেনি। গাড়ি আরও অনেক দূর গিয়ে থামায়। থামানোর পর গাড়ি থেকে চালকের সহযোগী জনি, ড্রাইভার জালাল, সুপার ভাইজার ফয়সাল নেমে আসে এবং পায়েলকে ক্লিনিকে ভর্তির বদলে পানিতে ফেলে দেয়। এমন সময় ২০ মিনিট গাড়ি থামানো অবস্থায় ছিল। গাড়ি ছাড়ার সময় একজন যাত্রী জানতে চান সামনের যাত্রী কোথায়? সুপারভাইজার উত্তর দিয়েছিল সে পরের গাড়িতে আসবে।
ময়না তদন্তের রির্পোটে বলা হয়েছে, পায়েল পানিতে পরার পরেও জীবিত ছিল। পানিতে পরার অনেকক্ষণ পর ওর মৃত্যু হয়। নিহত পায়েল বসুন্ধারার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৫ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছিলেন। বসুন্ধারায় বাসা ভাড়া নিয়ে বন্ধুদের সাথে থাকতেন। তার বাবার নাম গোলাম মাওলা। তিনি কাতার প্রবাসী। চট্টগ্রামের স›দ্বীপ উপজেলার পূর্ব হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন