নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের সেবা দিতে প্রস্তুত এমএনপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডি। তবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সেবাটি চালু করার জন্য কোন নির্দেশনা না দেয়ার জন্য এখনও গ্রাহকরা এই সেবা পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন জানান, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই সেবা চালুর নির্দেশ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে ওই দিন বা পরবর্তী কোনদিন এই সেবা চালু হবে তা জানাতে পারেনি সেবাদানের জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে টেলিকম খাতের রিপোর্টারদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এর সাথে ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডি আয়োজিত একটি কর্মশালয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব তথ্য জানানো হয়।
মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি হচ্ছে মোবাইল ফোন গ্রাহকের বিদ্যমান সিমের নম্বরটি অপরিবর্তিত রেখে ইচ্ছেমত অন্য অপারেটরের গ্রাহক হওয়ার সুযোগ। এই সেবায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা নিজের পছন্দ মতো অপারেটর পাল্টে ফেলতে পারবেন। গ্রাহকের কাছে যে অপারেটরের সেবা, নেটওয়ার্কের মান, ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবার মান পছন্দ হবে তিনি চাইলে বিনা দ্বিধায় সেই সংযোগে সংযুক্ত হতে পারবেন। এজন্য নিজের মোবাইল ফোন নম্বর বদলাতে হবে না।
প্রতিষ্ঠানের স‚ত্রে জানা গেছে, সেবা চালুতে তাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুতির কাজ শেষ করে রেখেছে। নির্ধারিত সময়েই তারা এই সেবা চালু করতে পারবে। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। কিছু কারিগরি জটিলতার সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন কলরেট চ‚ড়ান্ত না হওয়া (অফনেট ও অননেটের পরিবর্তে), আইসিএক্স (ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ) ও আইজিডবিøউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) সংক্রান্ত জটিলতা দ‚র না হওয়া ইত্যাদি।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এটি একটি জটিল বিষয়। আমাদের জন্য নতুন বিষয়ও বটে। কারিগরি মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে সময় লাগছে। এছাড়া আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় ৩১ জুলাই তো আছেই। অভিন্ন কলরেট এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি আছে। চূড়ান্ত হলেই আমরা সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,এরই মধ্যে এমএনপির জন্য গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের আন্তঃসংযোগ স্থাপন (ভিপিএন কানেক্টিভিটি) সম্পন্ন হয়েছে। টেলিটক বাদে অন্য অপারেটরগুলো ‘কোয়েরি’ আদান প্রদান ও সিস্টেম সমন্বিতকরণ (ইন্টিগ্রেশন) প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।
জানতে চাইলে এমএনপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, আমরা এমএনপি সেবা দিতে শতভাগ প্রস্তুত। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি যেদিন বলবে (নির্ধারিত দিন) সেদিনই এই সেবা চালু করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারী মোবাইল নম্বরের পূর্ণ মালিকানা পাবেন। এর মাধ্যমে গ্রাহককে টেলিকম খাতে ক্ষমতায়িত করা সম্ভব হবে। ‘ফ্রিডম অব নেটওয়ার্ক’-এর কারণে গ্রাহক সংযোগ ব্যবহারে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। কোনও অপারেটরের সংযোগ (সেবার মান) ভালো না লাগলে অপাররেটর বদলে ফেলতে পারবেন।
গ্রাহকরা কিভাবে এমএনপি সেবা নেবে জানতে চাইলে জুলফিকার বলেন, এক অপরেটরের গ্রাহক অন্য যে অপারেটরের সেবা গ্রহণ করতে চায়, তাকে সেই অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে। সেখানে এনআইডি কার্ডের কপি ও বায়োমেট্রিক করলেই তাকে নতুন একটি সিম দেয়া হবে। এজন্য ৩০ টাকা লাগবে। নতুন সিমটি দেয়ারপর সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সক্রিয় হয়ে যাবে। তবে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিল বকেয়া থাকলে তা পরিশোধ করার পরই অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন। একবার নম্বর পরিবর্তন করলে পরবর্তী ৯০ দিন আর এই সুযোগ পাবেন না। তবে ৯০ দিন পর চাইলে আবারও অপারেটর পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর এমএনপি সেবার জন্য ইনফোজিলিয়নের কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করে বিটিআরসি। এর আগে বিটিআরসি বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ান বিডি-টেলিটেক’কে নোটিফিকেশনপত্র বা অনুমতিপত্র দেয় ৭ নভেম্বর। লাইসেন্সপ্রাপ্তির পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে দেশের মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে কমপক্ষে ১ শতাংশ, এক বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ রোল আউট বাস্তবায়ন করা কথা ছিল। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআরএনবি’র সভাপতি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম (সজল) ও সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে ছাড়াও সংগঠনের সদস্যরা।
***************
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন