বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

বেলা অবেলার গদ্য

গল্প

মু হা ম্ম দ কা মা ল হো সে ন | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

ধনুকের মতো জনমানবহীন রাস্তাটা কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে আবার মোচড়ানো দিয়ে সোজা চলে গেছে দৃষ্টিসীমানারও অনেকদূর পর্যন্ত। ধু-ধু মাঠ পেরিয়ে চলে গেছে তেপান্তরের দিকে। চারিদিকে মাঠ আর সবুজের প্রাচুর্য। একধারে নদী বয়ে গেছে কূলুকূলু নাদে, অন্যধারে পড়ে রয়েছে ধু-ধু প্রান্তর। তার বুকের ওপর দিয়ে চলে গেছে রাস্তাটা। এবড়োখেবড়ো রাস্তা আর একোণ-অকোণ পথটাতে যানবাহন চলার খুব একটা জো নেই। ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী ঠিক একটু আগেও সেই মোচড়ানো কুঁজো জায়গায় একটি অশ্বথ বৃক্ষের নিচে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নিজের সাথে নিজে অনর্গল কথা বলে গেছেন। তার পিঠে গজিয়ে ওঠা কুঁজোর সাথে রাস্তাটার কোথাও যেন বড্ড মিল খুঁজে পান। বাড়ির পাশ ঘেঁষা বলে এই জায়গাটা তার এমনিতে খুব পছন্দের। সেই ছোটবেলায় থেকে এই জায়গাটার প্রতি কেমন জানি একটা ঘোরলাগা মায়া জন্মে আছে। অদ্ভুত মাদকতায় আচ্ছন্ন হয় দেহমন। চোখে মুখে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে। তাইতো একটু সময় ও ফুরসত ফেলে তিনি ছুটে চলে আসেন এখানে। একান্ত নীরবে নিবৃত্তে নিজের সাথে নিজে কিছুটা সময় কাটান। দুপুরের সময়টা একটু ভূতুড়ে লাগলেও বৈকালিক আবহে এখানকার দৃশ্যপট বিমূর্ত ও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। রহস্যময় হয়ে ওঠে চারপাশটা।এখন সময় কতো বদলেছে। ছন্দ পতনও ঘটেছে। দিন মাস তিথি গেছে। ওল্টেছে ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ইশতিয়াক চৌধুরীও নেই এখন সেই আগের মতো। ছেলেবেলার দুরন্তপনা ও দস্যুতায় ভাটা পড়েছে কবেই। আপাদমস্তক তিনি এখন একজন বিপন্ন ও বিপর্যস্ত মানুষ। বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ। এই মুহূর্তে আপাতত বাড়ির পাশে পতিত একখন্ড জমিতে একটুকরো সাদা কাগজ হাতে উপুড় হয়ে বসে রয়েছেন। দূর থেকে যে কারো দেখলে মনে হবে কোনো অশীতিপর বৃদ্ধ বুঝি মুখ থেবড়ে পড়ে আছে। অথচ না গভীর মনোযোগে তিনি উপুড় হয়ে অঙ্ক মেলাচ্ছেন। জীবনের অঙ্ক। যাপিত জীবনের লাভক্ষতির চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরণ। কিন্তু কোনোভাবে অঙ্কখানা মেলাতে পারছেন না। তবুও বারংবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঘেমে-নেয়ে একাকার। ঘর্মাক্ত দেহ ভিজে জবজবে অবস্থা। বিড়বিড় করে কথা বলে যাচ্ছেন আপনমনে একনাগাড়ে। ইদানিং তিনি দিনের বেশিরভাগ কথাগুলো সেরে নিচ্ছেন নিজের সাথেই। এদিকে রেহনুমা বেগম স্বামীকে নিয়ে পড়ে আছেন মস্তবড় বিপাকে। খোদার কাছে কান্না-রোনাজারিসহ কতো মান্নত ও চেষ্টা তদবির করে যাচ্ছেন স্বামীকে সেরে তুলতে। কিন্তু পারছেন না। চোখের সামনে দিনদিন মানুষটা কেমন জানি নির্বিষ হয়ে যাচ্ছে। ঘুমের ঘোরেও কীসব অঙ্ক-পঙ্ক কষছেন। আজকাল কোনো মানুষ তার সাথে খুব একটা কথাও বলতে চায়না। পারতপক্ষে সবাই এড়িয়ে চলতে পারলেই বাঁচে। অথচ একদিন কতো মানুষের আনাগোনা ছিল চৌধুরী সাহেবের আশপাশে। সময়ের দুষ্টু চক্রে কালের অতলে বিলীন হয়ে গেছে সেইসব দিনগুলি। অবশ্য তাই বলে চৌধুরী সাহেবের কথা বলাও কিন্তু থেমে নেই। হরওয়াক্ত গাছের সাথে মাছের সাথে কিংবা প্রকৃতির নানা কিছুর সাথে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছেন। এই তালিকা থেকে বাদ নেই পশুপক্ষি, গরু-ছাগল হাঁস-মুরগীও। পরিচিত অপরিচিত কাউকে ধারেকাছে পাওয়া মাত্র কাগজখানা উচিয়ে ধরে বলছেন, ‘ও ভাই, আমার অঙ্কখানা একটু কষে দিন না প্লীজ!’ সারাক্ষণ তার মুখে একটাই বুলি-অঙ্ক!! মানুষও ইশতিয়াক চৌধুরীর কথায় কর্ণপাত না করে দ্রুত পায়ে হাঁটা দেয়। কেউ কেউ আড়ালে আবডালে বলে, ‘নিশ্চয়ই লোকটার মাথায় মারাত্মক চিট আছে।’ (অসমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন