শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উন্নয়নের পথে না ভাগাড়ে!

স্টালিন সরকার : | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে বাংলাদেশ। ডিজিটাল এই দেশে ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ শ্লোগানে ‘জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে’ নিত্যদিন উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রচার করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ রাজধানী ঢাকায় অসংখ্য চোখ ধাঁধাঁনো উড়াল সেতু এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট। যদিও শিক্ষার্থীরা শ্লোগান তুলেছে ‘৯ টাকায় এক জিবি চাই না/ নিরাপদ সড়ক চাই’। প্রশ্ন হলো সত্যিই কী আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছি? দেশ কী সত্যিই উন্নয়নের মহাসড়কে? ঢাকা টু চট্টগ্রাম ৫ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা। ঢাকা টু রংপুর ৭ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১৬ ঘন্টা। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগে ২ ঘন্টা থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। তাহলে আমরা কী এগিয়ে যাচ্ছি না পিছিয়ে পড়ছি? শুধু কী তাই! ব্রিটেনের দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইন্টেলিজেন্সের গ্লোবাল লিভেবলিটি ইনডেক্সে রাজধানী ঢাকার যে ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে; তা কী উন্নয়নের ধারণা দেয়?
ব্রিটেনের দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০১৮ সালের বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা সূচক বলছে- বিশ্বের যেসব বড় শহর ‘বসবাসযোগ্যতা’ সবচেয়ে কম সে তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়; আর সর্বনিম্নে প্রথম অবস্থানে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। তবে ভৌত অবকাঠামোয় বাংলাদেশের অবস্থান দামেস্কের চেয়েও খারাপ। ভৌত অবকাঠামো বলতে বোঝায় নাগরিকের জন্য রাস্তাঘাট, খোলা জায়গা, পার্ক, হাটাচলার খোলা জায়গা, পয়োনিষ্কাশন, পানি নিষ্কাশনের নালা-নর্দমা, পানির সুবিধা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট, টেলিফোনসহ সব ধরনের সুবিধা। নগর বসবাসীদের জীবনযাপনে এগুলো অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দামেস্ক শহরের চেয়ে ঢাকার অবস্থান নিম্নে। পৃথিবীর ১৪০টি শহরে জরিপে ভৌত অবাকাঠামোয় ১০০ নম্বরের মধ্যে সিরিয়ার দামেস্ক পেয়েছে ৩২.১ পয়েন্ট; অথচ ঢাকা পেয়েছে মাত্র ২৬.৮ পয়েন্ট। অথচ দুষিত শহর পাকিস্তানের করাচি পেয়েছে ৫১.৮ পয়েন্ট।
যুদ্ধের কারণে দামেস্ক শহর মানুষের বসবাসের অযোগ্য। স্বৈরশাসাক আসাদকে উৎখাতসহ দেশি-বিদেশি বহুমুখী যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে। বোমার আঘাতে শহরের হাজার হাজার স্থাপনা মাটিতে মিশে গেছে। বিমান হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, এমনকি রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারে দামেস্কের বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় এক নম্বরে থাকা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু উদিয়মান উন্নয়নশীল বাংলাদশের রাজধানী ঢাকা বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকার তলানিতে থাকবে কেন? সিরিয়ায় যুদ্ধ না চললে ঢাকা যে বসবাস অযোগ্য নগরীর তালিকায় শীর্ষে থাকতো বলাই বাহুল্য। তাহলে এতো উন্নয়ন যায় কোথায়? কাদের জন্য গলা ফাটানো উন্নয়ন?
বিশ্বের ১৪০ শহরে জরিপ চালিয়ে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এই তালিকা তৈরি করেছে। শহরে নাগরিকের বসবাসযোগ্যতা পরিমাপ করা হয়েছে ৫টি ক্ষেত্রের ৩০টি বিষয়ে গুণগত-পরিমাণগত অবস্থানের ভিত্তিতে। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ-সংস্কৃতি, শিক্ষা, ভৌত অবকাঠামো এবং স্থিতিশীলতা (রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত)। মূল্যায়নে ছিল মোট ১০০ নম্বর। ৩০.৭ নম্বর পেয়ে বসবাসের সর্বনি¤œ অবস্থানে সিরিয়ার দামেস্ক। ৩৮ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। সর্বোচ্চ ৯৯.১ পয়েন্ট পেয়ে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা বাসযোগ্য শহরের শীর্ষে রয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জরীপের এই ফলাফল কী অস্বীকার করার উপায় আছে? রাষ্ট্রের যারা নীতি নির্ধারক সেই প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, মন্ত্রী, এমপি, বিদেশী কূটনীতিক, সুশীল এবং সমাজের সুবিধাভোগী বৃত্তবান ও ক্ষমতাবানরা ঢাকায় বসবাস করেন। দু’ঘন্টা বৃষ্টি হলেই সেই ঢাকার মূল সড়কগুলো নদীতে রুপ ধারণ করে। বছর জুড়ে খোঁড়াখুড়িতে শহর হয়ে থাকে ধূলিময়। নিয়মিত মেরামত না করায় শহরের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ স্থানে খানাখন্দে ভরা। যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পয়োনিষ্কাশন, পানি নিষ্কাশনের নালা-নর্দমা সুবিধা নাগরিকদের জন্য যেন সোনার হরিণ। আইন শৃংখলা জনিত কারণে মানুষ থাকে নিত্য উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর আতঙ্কে। ঘর থেকে বের হলে কেউ ঘরে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে দুঃচিন্তার শেষ নেই। পাবলিক পরিবহণের নাকাল আবস্থা। বাস, সিএনজি, রিক্সা সবগুলোতে নাগরিকদের ‘ঠ্যাক’ দিয়ে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া নেয়া হয়। রাজপথে বাস-ট্রাকের চাপায় মৃত্যু এখন নিয়মিত ঘটনা। শব্দ দুষণ, বায়ু দুষণের নাগরিকের ত্রাহি অবস্থা। আর যানজট! এতো চোখ ধাঁধানো ওভার ব্রীজ অথচ যানজটে নাকাল নগরবাসী। বিশেষজ্ঞদের মতে এই সব উড়াল সেতুর সুবিধাভোগীর সংখ্যা মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ। ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রমে এক ঘন্টাও লাগতে পারে আবার দুই ঘন্টাও লাগতে পারে। নাগরিকদের জন্য ঢাকা হয়ে গেছে বিভীষিকাময় নগর। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উড়াল সেতুতেও যানজট হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় যাচ্ছি আমরা? উন্নয়নের দিকে নাকি ভাগাড়ে!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
M Alamgir Kabir ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ১:২৫ পিএম says : 0
কষ্ট কিসের এটা উন্নয়নের মহাসড়ক।
Total Reply(0)
Mohammad Arif ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ১:২৫ পিএম says : 0
এটা উন্নয়নের জোয়ার,, কেউ গুজব বলবেন না
Total Reply(0)
Abduz Zaher ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ১:২৮ পিএম says : 0
কারো কারো বিবেক মাথা নত করে, কলম নয়। কলম শক্ত হাতে ধরুন। সত্যের জয় হবেই। অবরুদ্ধ বাংলাদেশ জয় তোমার হবেই।
Total Reply(0)
Habib ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ২:৪১ পিএম says : 0
নাগরিকদের জন্য ঢাকা হয়ে গেছে বিভীষিকাময় নগর।
Total Reply(0)
সাইফ ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ২:৪২ পিএম says : 0
তিক্ত সত্য কথাগুলো তুলে ধরায় লেখক স্টালিন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন