শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া মুকসুদপুরের ১৬ ইউনিয়ন আ.লীগে বিদ্রোহের জ্বালা বিএনপির নীরবে পথচলা

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শহীদুল ইসলাম বেলায়েত, মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) থেকে
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রার্থীরা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নেতা কর্মীরা শ্লোগান দিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে এসে উপজেলা সদর সরগরম করে তোলেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া ১৬ প্রার্থীসহ মোট ৭৬ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। গত ১২ এপ্রিল বাছাইতে চেয়ারম্যান পদে গোবিন্দপুর ইউনিয়নে বিএনপির এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অসম্পূর্ণতার কারণে বাতিল করে অন্য সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে গণ্য করা হয়। পশারগাতী ইউনিয়নে: এস.এম কামরুল হাসান(আ.লীগ), মো. কবির, জিয়াউর রহমান ও মো. রিপন এখন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন, তবে জিয়াউর রহমান ও মো. রিপন তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে পারেন বলে শোনা গেছে। মফিজুর রহমান মিরন মিয়া তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় এ ইউনিয়নের নির্বাচনী আমেজ নাই বললেই চলে। অনেকের ধারণা এ ইউনিয়নের পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন এস.এম কামরুল হাসান। গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ৩জন প্রার্থীর মধ্যে ওবায়দুল ইসলাম (আ.লীগ)ব্যতীত অপর দুজন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে শোনা গেছে। যদি তাই হয় তাহলে ওবায়দুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। খান্দারপাড়া ইউনিয়নে: প্রার্থী ৪জন। সাব্বির খান (আ.লীগ),শাহিদুল ইসলাম মুন্সী, মুন্সী মনিরুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম আসলাম মুন্সী। এ চারজনের কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন কিনা এখনই তা বলা যাচ্ছে না। প্রথম দুজনই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সকলের কাছে বিবেচিত হচ্ছেন। মহারাজপুর ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থী। আশরাফ আলী আশু মিয়া(আ.লীগ), মজিবর রহমান, ইলান মুন্সী, আঃ কুদ্দুস, আবুল কালাম ও গোলাম মোস্তফা (বিএনপি)। এ ইউনিয়নে কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন এমন কোন লক্ষন এখও দেখা যাচ্ছে না। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আশরাফ আলী আশু মিয়ার সঙ্গে দলের সকল নেতা কর্মীরা যদি মাঠে নামেন তাহলে তিনি সহজেই জয়ের মালা পরবেন। অন্যথায় তাকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। জলিরপাড় ইউনিয়নে প্রার্থী ৪জন। অখিল চন্দ্র বৈরাগী (আ.লীগ), মিহির কান্তি রায় (আ.লীগ বিদ্রোহী), শেফালী রানী ও গোবিন্দ মন্ডল। শেষোক্ত দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও প্রথম দুজনের মধ্যে একটা দর্শনীয় লড়াই হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অখিল বৈরাগী সম্পর্কে কতিপয় সাধারণ ভোটার কোন মন্তব্য না করে এড়িয়ে গেছেন। তার আচরণ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। মিহির কান্তি রায় বর্তমান চেয়ারম্যান বিধায় ইউনিয়নে তার অবস্থান বেশ শক্ত বলেই শোনা যাচ্ছে তবে বিগত পাঁচ বছরে তিনি উন্নয়নে খুব সফলতা দেখাতে পারেননি। ননীক্ষির ইউনিয়নে প্রার্থী ১১জন। শেখ হারুন(আ.লীগ), আবুল কাশেম শেখ (আঃলীগ বিদ্রোহী), শেখ মজিবুর রহমান, আসাদুজ্জামান মিনা (আ.লীগ বিদ্রোহী), মো. দেলোয়ার হোসেন, শামিমা আক্তার, শামিম সেখ, মো. খলিলুর রহমান, ওহিদুজ্জামান, মো. রফিকুল ইসলাম ও আঃ ছামাদ সরদার(বিএনপি)। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি প্রার্থী এ ইউনিয়নে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ঝরে পড়বেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। অনেকের ধারণা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও শেখ মজিবর রহমানের মধ্যে মূল লড়াই হতে পারে। তবে আঃলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবস্থান ধরে রাখতে। কতটুকু সফল হবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কাশালিয়া ইউনিয়নে প্রার্থী ৫জন। সিরাজুল ইসলাম (আ.লীগ), অশোক কুমার মৃধা, নাইমুজ্জামান মিনা চঞ্চল(বিএনপি) ও মো. সফিকুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে প্রথম দুজনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে অনেকের ধারণা। এ ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট বেশি বিধায় তাদের উপর নির্বাচনী ফলাফল অনেকটা নির্ভর করছে। গোহালা ইউনিয়নে প্রার্থী ৬জন। সফিকুল আলম (আ.লীগ), আবুল কালাম আজাদ, মো. জিন্নাত আলী বিশ্বাস, মুঃ ওহিদুল আলম, গোলাম মোস্তফা ও মো. শাহাদৎ শেখ। বর্তমান চেয়ারম্যান সফিকুল আলম বর্তমানে বেশ এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।তার পরের অবস্থানে রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। এদের মধ্যে কয়েকজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে শোনা গেছে। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে প্রার্থী ৩জন। মনিরুজ্জামান মোল্যা(আ.লীগ), মো. শফিউল আলম ও মো. নওশের আলী (শাঃআন্দোলন)। বিশাল বিত্তশালী মনিরুজ্জামান মোল্যা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিদের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা গেছে। জানা গেছে নওশের আলী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন। অপর প্রার্থী শফিউল আলম জানিয়েছেন তাকে বিভিন্নভাবে চাপ ও প্রলোভন দেয়া হচ্ছে প্রত্যাহারের জন্য। অতি উৎসাহী এক মাদ্রাসা শিক্ষক প্রকাশ্যে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে ১৮ এপ্রিলের পরে তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না। শফিউল আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি জানান বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়ায় তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন। ভাবড়াশুর ইউনিয়নে প্রার্থী ৩জন। মো. মোর্তজা মৃধা, এসএম রিফাতুল আলম(আ.লীগ) ও আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তবিউর রহমান। রিফাতুল আলম ও মো. তবিউর রহমান একই দলের হওয়ায় দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান। উল্লেখ্য, তবিউর রহমানের ছেলে শাকিল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় তবিউর রহমান নিজেই প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রার্থীতার কারণে দলের মেরুদ-ে আঘাত করতে পারে। অপর দিকে মোর্তজা মৃধার বাবা শাহজাহান মৃধা ও দাদা আঃ খালেক মৃধা দীর্ঘদিন যাবৎ এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন বিধায় ইউনিয়নে তাদের ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে এবং দানশীল ব্যক্তি হিসাবে মোর্তজা মৃধার বেশ সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন প্রেক্ষিতে ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোর্তজা মৃধার অবস্থান বেশ সু-দৃঢ় বলে শোনা যাচ্ছে। মোচনা ইউনিয়নে প্রার্থী ৩জন। মো. রিপন মোল্যা, দেলোয়ার হোসেন মোল্যা(আ.লীগ) ও আঃ রাজ্জাক শিকদার। শেষের দুজনের মধ্যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। বহুগ্রাম ইউনিয়নে প্রার্থী ৩জন। মো. সোহেল শেখ(আ.লীগ), মো. দেলোয়ার হোসেন (আ.লীগ বিদ্রোহী) ও মেহেদী হাসান(বিএনপি)। উপজেলার এ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আঃলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী সোহেল শেখ জানিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন তার কর্মীদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিচ্ছেন এবং দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। এ বিষয়ে সোহেল শেখ মুকসুদপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে দেলোয়ার হেসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানান। দিগনগর ইউনিয়নে প্রার্থী ৬জন। মো. শফিকুল ইসলাম সাগর, পারভিন আক্তার, জাহিদুর রহমান লিটু, মোহাম্মাদ আলী শেখ(আঃলীগ), মো. বাদল, মো.সাত্তার শেখ। এ ইউনিয়নে কয়েকজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানা গেছে। মো. শফিকুল ইসলাম সাগর, জাহিদুর রহমান লিটু, মোহাম্মাদ আলী শেখ(আঃলীগ) এ তিন জনের মধ্যে লড়াই হবে বলে অনেকের ধারণা। শফিকুল ইসলাম সাগর ও জাহিদুর রহমান লিটুর মধ্যে সমঝোতা হতে পারে বলে শোনা গেছে। যদি তাই হয়,তাহলে আঃলীগ প্রার্থীর জন্য একটা বাড়তি চাপ হতে পারে, ফলে দলের জন্য তা শুভ হবে না। উজানী ইউনিয়নে প্রার্থী ৬জন। দিনেশ মন্ডল, মো. কামরুজ্জামান মাসুদ, শ্যামল কান্তি বোষ(আঃলীগ), মৃনালীনি মন্ডল, মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে জানা গেছে। শ্যামল কান্তি বোষ(আঃলীগ) দিনেশ মন্ডল, মো. কামরুজ্জামান মাসুদ এ তিনজনের মধ্যে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাটিকামারী ইউনিয়নে প্রার্থী ৪জন। শাহ্ আকরাম হোসেন জাফর(আঃলীগ), মো. ইবাদদ হোসেন, মো. মিরাজ হোসেন ও শাহ আজিজ। প্রথম দুজনের মধ্যে একটা রড়াই যে হবে তা এখনই বলা যায়। অপরদিকে বাহাড়া গ্রামের বিপুল সংখ্যক ভোটারদের সংগঠিত করে মিরাজ হোসেন যদি মাঠে শক্ত অবস্থান নিতে পারেন তাহলে ত্রিমুখী রড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাঘদী ইউনিয়নে প্রার্থী ৪জন। সাইদুর রহমান টুটুল(আঃলীগ), আলমগীর হোসেন, মো. দিলদার আলী ও মো. মাহবুবুর রহমান। প্রথম দুজনের মধ্যে একটা প্রচ- ভোট যুদ্ধ হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনী পরিবেশ সঠিক থাকলে এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আনন্দদায়ক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশা করে উপজেলাবাসী। সে প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা তা নির্ভর করছে সংসদ সদস্য মুঃ ফারুক খান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় প্রসাশনের উপর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন