আসাম-বেঙ্গল গেটওয়ে খ্যাত নদী বন্দর চাঁদপুর নানা কারণে ব্যবসায়িক সুনাম হারাতে বসেছে। বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে শহরের পুরাণ বাজারের সুনাম ও ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানি পণ্যের বস্তায় নির্ধারিত পরিমাণ মালামাল না পাওয়ায় লোকসান গুনছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রভার পড়ছে ভোক্তা সাধারণের ওপর।
নৌপথে আমদানিকৃত প্রায় মালই ওজনে কম হওয়ায় ক্রেতা সাধারণ নিয়মিতভাবে প্রতারিত হয়ে আসছে। অপর দিকে আমদানিকৃত এ সব পণ্য সড়কপথে আনা হলে ওজনে তেমন একটা গরমিল ধরা পড়ে না। আমদানি খরচ কম হওয়ায় অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য নৌপথে নৌকা বা ট্রলারযোগে চাঁদপুর আনা হয়। প্রায় ৩০-৪০ জনের নৌকা মাঝি সিন্ডিকেট এ কাজে নিয়োজিত।
ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝিদের অধিকাংশের বাড়ি মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজলার কানুদী এলাকায়। তারা ঢাকা থেকে মালামাল লোড করে সরাসরি চাঁদপুর না এসে নিরাপত্তার অজুহাতে কানুদী এলাকায় রাত্রিকালীন সময়ে অবস্থান নেয়। পরদিন ভোরে ঐ এলাকা থেকে রওনা দিয়ে চাঁদপুর পুরানবাজার আসে। রাত্রিকালীন সময়েই মাঝিদের কারসাজিতে ঘটে কালোবাজারীর মতো অপকর্ম। সেখানে প্রভাবশালী একটি কালোবাজারী সিন্ডিকেট নৌকা মাঝিদের দাদন দিয়ে নিয়ন্ত্রন করেন।
আমদানিকারকরা জানান, চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ, কচুয়া, ফরিদগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী জেলার ল²ীপুর, রায়পুর, রামগঞ্জ, নোয়াখালী শরীয়তপুর জেলার ব্যবসায়ীরা সুদীর্ঘকাল ধরে চাঁদপুর পুরাণবাজার থেকে প্রয়োজনীয় মনোহরী পণ্য ক্রয় করে থাকেন। চাঁদপুরের বৃহৎ মোকাম থেকে তেল, আটা, চিনি, ময়দাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করে তাদের অঞ্চলে নিয়ে পাইকারী বা খুচরা মূল্যে বিক্রি করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে তাদের খরিদকৃত আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেল, ভ‚ষিসহ সকল বস্তা বা ড্রামে রক্ষিত মালামাল নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে ওজনে কিছুটা কম হয়। আর ওজন কম হওয়ার কারণে ঐ সব উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। লোকসান কাটিয়ে ওঠতে অনেকেই ভোক্তা পর্যায়ে লোকসান এড়াতে নির্ধারিত দামের চেয়ে ২-১ টাকা বেশি দাম নিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকা থেকে বসুন্ধরা, সিটি, মেঘনা মিল থেকে যে সব চিনি আমদানি করা হয় তার ওজন ৫০ কেজি। অথচ আমদানিকৃত এ চিনি যখন চাঁদপুরে পৌঁছায় তখন ৫০ কেজির বস্তায় প্রায় ১/২ কেজির মতো কম হয়। এই কম হওয়াটা চাঁদপুরের মহাজনদের মোকামে ধরা না পড়লেও তা ধরা পড়ে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে। এমনিভাবে আমদানিকৃত সয়াবিন, পামওয়েলের ড্রামে ১৮৬ কেজির স্থলে পাওয়া যায় ১৮১-১৮২ কেজি, ময়দা ৫০ কেজির স্থলে পাওয়া যায় ৪৯ কেজি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আগে মহাজনদের গদি ঘরে দাঁড়িপাল্লা শোভা পেত। মালামাল খরিদ করলে ঐ দাঁড়িপাল্লায় ওজন দিয়ে ওজনের পরিমাপ বস্তার গায়ে লিখে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কেউ আর ক্রয়কৃত মালামাল ওজন দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না। কারণ, বস্তার গায়ে কোম্পানীর নির্ধারিত ওজনের সীল দেখেই তা নিয়ে যেতে হয়। ফলে অনেক সময় নিজের অজান্তেই খচরা ব্যবসায়ীরা প্রতারিত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ‘আমদানিকৃত বস্তায় নির্ধারিত ওজনের চেয়ে মাল কম থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হই। অনেক ব্যবসায়ীদের ধারণা, হয়তো আমরাই বস্তা থেকে ২-১ কেজি করে সরিয়ে নেই।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ব্যবসায়ী গোপাল সাহা ও নেপাল চন্দ্র সাহা ওজনে কম হওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেন। তারা জানান, কোনো কোনো মাঝির কারণে ব্যবসায়ীদের এ অপবাদ সইতে হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় আমরা আমদানি ভাড়াও বেশি দেই। তারপরও মাঝে মাঝে আমদানিকৃত মাল নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ২-১ কেজি কম হয়, যা খুবই দুঃখজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন