মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা

| প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গত রোববার সচিবালয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। অত্যন্ত চমৎকার ও আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের ফলাফলে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে আইনটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার অবতারনা হয়। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের সুনির্দিষ্ট কতিপয় ধারার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে। একই সঙ্গে আইনটির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করে। এই প্রেক্ষাপটে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং মানববন্ধন কর্মসূচী স্থগিত করার আহ্বান জানান। সম্পাদক পরিষদ তার প্রস্তাব ও আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মসূচী স্থগিত করে রোববার আলোচনায় অংশ নেয়। ইতোমধ্যে সম্পাদক পরিষদের তরফে আপত্তিকৃত ধারাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থান করা হয়েছে, যা দেশের পত্রপত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকদের সংগঠন হওয়ায় সম্পাদক পরিষদের উচ্চ মর্যাদা, অতুল্য সম্মান প্রশ্নাতীত। সংবাদপত্র পরিচালনাই সম্পাদকদের একমাত্র কাজ নয়, সংবাদপত্র ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা ও পেশাগত স্বার্থ সংরক্ষণেরও তারা অতন্দ্র প্রহরী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদপত্র ও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার জন্য একটা বড় বাধা বা হুমকি। অন্যদিকে মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী। তা একই সঙ্গে সংবিধান, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা ও মতবিনিময় হয়েছে আলোচ্য বৈঠকে। সম্পাদক পরিষদের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা পেশ করেছেন। বৈঠকে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে যে, ডিজিটাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে এ ধরনের একটি আইনের প্রয়োজন রয়েছে। আইনমন্ত্রী উভয় পক্ষের ঐকমত্যের এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘কিন্তু এরকম আইন যেন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন না করে, সে ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে। আলোচনায় যেসব ধারা উঠে এসেছে সেগুলো হলো ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ এবং ৫৩ ধারা। অন্য ধারাগুলোর বিষয়ে আরো কোনো বক্তব্য নেই।’ আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘২১ ধারাটি মোটামুটি আমরা এগ্রি করেছি, যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে।’ এ ব্যাপারে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘আমরা আইনটির ২১ নম্বর ধারা সম্পর্কেও আপত্তি জানিয়েছিলাম তবে সরকারের ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট।’ সম্পাদক পরিষদের আপত্তিকৃত ধারা এবং ধারাগুলো সম্পর্কিত বক্তব্য অত:পর মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। বলেছেন, মন্ত্রীসভার আগামী ৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে হয়তো আলোচনা করা সম্ভব হবে না। পরের সভায় তা তোলা হবে। তথ্যমন্ত্রী আলোচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেছেন, তারা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই এটা নিষ্পত্তি করতে পারবেন। সম্পাদক পরিষদের পক্ষে মাহফুজ আনাম আলোচনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সন্দেহ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ওনারা দূর করে আইন সংশোধন করবেন।’

তথ্যমন্ত্রীকে আমরাও সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানাই। তিনি আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন, আলোচনাকে সম্ভব করেছেন। আলোচনা যা হয়েছে, তা ইতিবাচক। এতে আশার একটি আলোকরশ্মি উদ্ভাসিত হয়েছে। আস্থার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, যে কোনো সংকট, সমস্যা এবং আপত্তিকর বিষয়ের প্রকৃষ্ট সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই আসতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এ নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, আরও কয়েক দফা বৈঠক হতে পারে। এতে এটি পরিষ্কার, সরকার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির গ্রহণযোগ্য ফয়সালা করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিমত, এই আইনে সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের ভীতি-উৎকণ্ঠার কারণ নেই। একই ধরনের কথা বলেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন। আর ওবায়দুল কাদের তো সাংবাদিকই ছিলেন। তাই সবাই আশা করে, এমন কিছু করা হবে না যাতে সংবাদপত্র ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা বিপন্ন হয় অথবা তার পরিসর সংকুচিত হয়ে পড়ে। সম্পাদক পরিষদ সংবাদপত্রের অভিভাবক-সংগঠন হওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তার আপত্তি বা বিরোধিতা নীতিগত ও পেশাগত। এর মধ্যে সরকারবিরোধিতা আবিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই। সম্পাদকদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা সরকারের নীতি-আর্দশের অনুসারী এবং কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত কাছের মানুষ বলে পরিচিত। তারাসহ সবাই এই আইনে আপত্তি জানাচ্ছেন, প্রকৃতপক্ষেই আপত্তিকর বিষয় তাতে রয়েছে বলে। সম্পাদক পরিষদকে তাই ভিন্নভাবে চিত্রিত করা বা তাকে নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করা অপ্রয়োজনীয় ও অনুচিত, কারোরই সেটা করা সঙ্গত নয়। আলোচনার মাধ্যমে সংবাদপত্র ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা নিরাপদ করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। আস্থার জায়গাকে প্রসারিত করতে হবে এবং তা থেকে কাঙ্খিত সুফল চয়ন করে আনতে হবে। এটাই হোক লক্ষ্য ও প্রতিজ্ঞা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন