শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রাণবন্ত উন্নয়ন মেলা

‘সেবা এমন সহজ হওয়া উচিত’

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

এক নজরে দেশের উন্নয়নের চিত্র দেখতে গতকাল সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র দেখতে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার সেবা নিতে বাড়তি আকর্ষণ মেলাকে যেন আরও প্রানবন্ত করে।
‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শ্লোগানে চলছে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা-২০১৮। তিন দিনের এই মেলার আজ শেষ দিন। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সহজেই ও স্বল্প সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্যই মানুষ ভিড় করছেন স্টল গুলোতে। সেই সঙ্গে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের স্টলেও। এখানে বৈধ ও সঠিক পদ্ধতিতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সবধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাসপার্ট অফিসের স্টলেও দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল লক্ষ্যনীয়। এছাড়া ব্যাংকিং সুবিধাসহ একই ছাতার নিচে বিদেশ যাওয়ার বিভিন্ন সেবাও দেয়া হচ্ছে। তাই উন্নয়ন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা এইসব স্টলগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন।
চাকুরী নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) স্টলে। প্রাথমিক তথ্য দেয়ার পর ছোট আকারে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। রেজিস্ট্রেশনের পর রাখা হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। স্টলটিতে দেখা গেছে, নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। বিএমইটির সহকারী পরিচালক এনামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের সব ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রথমে ব্রিফ করা হচ্ছে। এরপর যারা যাবে তাদের রেজিস্ট্রেশন করে রাখা হচ্ছে। রাখা হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্টও। পরে ভিসা হয়ে গেলে তাদের স্মার্ট কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ পাসপোর্টের পর ভিসা হওয়ার আগ পর্যন্ত যতো ধরণের সেবা সব এখানে দেয়া হচ্ছে। স্টলটিতে সেবা নিতে আসা চাদপুরের করিম শেখ বলেন, সহজে সেবা পেয়ে ভালো লাগছে। সরকারী সব সেবা এমন সহজ হওয়া উচিত।
এদিকে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় পাসপোর্ট নবায়ন করা যাচ্ছে পাসপোর্ট অধিদফতরের স্টলে। ছয় হাজার ৯০০ টাকায় জরুরি ভিত্তিতে রি-ইস্যু করা যাচ্ছে পাসপোর্ট। জানা যাচ্ছে, নতুন করে পাসপোর্ট করার সব তথ্যও। যদিও নতুন করে পাসপোর্ট করতে হলে অফিসেই যেতে হবে। পাসপোর্ট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এ কে এম আবু সাঈদ ইনকিলাবকে বলেন, মেলায় জরুরি ভিত্তিতে একদিনেই পাসপোর্ট রি-ইস্যু করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফরম পূরণসহ সব বিষয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য পর্যন্ত এখানে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন। স্টলে সব সময় থাকছে উপচে পড়া ভিড়।
পাসপোর্টের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আফরোজা পারভীন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, সহজেই পাসপোর্ট করা যাচ্ছে উন্নয়ন মেলায়-এমন তথ্যর ভিত্তিতে এখানে এসেছি। সব ধরনের তথ্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এর আগে উন্নয়ন মেলার সব স্টল ঘুরে দেখলাম। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স আর বিদেশে যাওয়ার তথ্য জানতে দর্শনার্থীরা এসব স্টলেই বেশি ভিড় করছেন।
মেলায় সব স্টলেই কমবেশি ভালো সেবা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি স্টলেই তুলে ধরা হয়েছে গত ১০ বছরের উন্নয়ন। মেলায় সেনাবাহিনীর স্টলের প্রবেশমুখটি সাজানো হয়েছে পদ্মাসেতুর আদলে। স্টলে করা হচ্ছে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা। অন্য একটি স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সব ছবি। সেখানে ঢুঁ দিচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নৌ ও বিমান বাহিনীর স্টলও চোখে পড়ার মত। জাহাজের মধ্যেই শোভা পাচ্ছে নৌ বাহিনীর স্টল। দেখা গেছে, বিভিন্ন স্টলে স্টলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অনেকে সেলফিতেও ব্যস্ত।
মালিবাগের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মিলন খান বলেন, উন্নয়ন মেলা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখানে সব ধরণের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে নতুন বাইক কেনায় বিআরটির স্টল থেকে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছি। কোথা থেকে স্মার্ট কার্ড পাবো সেই তথ্যও জেনে নিয়েছি। সেবা প্রাপ্তিতে খুব খুশির সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
মিরপুরের বাসিন্দা মশিউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, একসঙ্গে সব মন্ত্রণালয়ের সেবা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এছাড়াও গত কয়েক বছরের উন্নয়ন সম্পর্কেও নতুন অনেক তথ্য জানতে পেরেছি।
মেলায় ঢাকা ওয়াসা অংশ নিয়ে ‘ওয়াটার এটিএম’ এবং ‘ওয়াটার স্মার্ট মিটার’ দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করছেন। ওয়াসার মেলা প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমানে ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় ওয়াটার স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে। অদুর ভবিষ্যতে রাজধানীর সব জায়গায় এ মিটার স্থাপন করা হবে। আবার ওয়াটার এটিএম চলবে একটি প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে। এসব মিটার কীভাবে পরিচালনা করতে হবে তা দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
উন্নয়ন মেলার প্রধান ফটকে দায়িত্বরত স্কাউট সদস্য তানভির আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় মানুষের উপস্থিত বেশি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলবেধে মেলায় আসছে। সেই সঙ্গে সাধারন দর্শনার্থীদেরও উপস্থিতি বেড়েছে।
এবারের উন্নয়ন মেলায় দেয়া হচ্ছে অনেক ধরণের সেবা। তুলে ধরা হয়েছে পাটের তৈরি সোনালী ব্যাগ। দেখা মিলছে পাট দিয়ে তৈরি টিন। মৎস্য অধিদফতরের স্টলে তুলে ধরা হয়েছে মাছ চাষের সর্বশেষ অগ্রগতি। ধারণা দেয়া হচ্ছে মোবাইলে মৎস্য চাষ পরামর্শ অ্যাপস সম্পর্কে। ধান গবেষণায় সাফল্য সম্পর্কেও জানা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের স্টলে তুলে ধরা হয়েছে পাটের তৈরি পলিথিন। সোনালী ব্যাগ সম্পর্কে দর্শনার্থীদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। স্টলটিতে বিক্রি হচ্ছে পাটের তৈরি স্ট্রে। দেখা মেলবে জুট ফাইবার নামক পাটের তৈরি টিনও। পাটের ব্রিফকেস, বাহারী ব্যাগ ও বহুমুখী পাটপণ্য তুলে ধরা হয়েছে মেলায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্টলে গত ১০ বছরে কৃষি খাতের উন্নয়ন সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। দেখা মিলছে আধুনিক সব কৃষি যন্ত্রপাতির। ধান গবেষণার সাফল্য তুলে ধরছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। সর্বশেষ উদ্ভাবিত ব্রি ৮৭ সম্পর্কেও তথ্য দেয়া হচ্ছে। ব্রি’র খামার ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, মেলায় ব্রি উদ্ভাবিত ৯২ টি জাত ও জাতের গুণাগুণ সম্পর্কে তথ্য দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ উদ্ভাবিত ব্রি-৮৭ জাতটিও এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।
এবারের উন্নয়ন মেলায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থার ৩৩০টি স্টল সাজিয়ে নাগরিকদের নানারকম সেবা দিচ্ছে। আবার মেলায় সেবা নিতে আগ্রহী দর্শনার্থীরাও সরকারের পক্ষ থেকে কম সময়ে এসব সেবা পেয়ে খুশির কথা জানিয়েছে। এবারের মেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৪টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ নয়টি, বিআরটিএ চরাটি স্টল সাজিয়ে তাদের কর্মকান্ড প্রদর্শন এবং দর্শনার্থীদের সেবা দিচ্ছে।
এছাড়াও সমাজ সেবা অধিদফতর, বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন, বিনিয়োগ বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা এবং নির্বাচন কমিশনসহ আরও অনেক মন্ত্রণালয় বিভাগ মেলায় অংশ নিয়ে তাদের সেবা ও সরকারের নানা উন্নয়ন দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করছেন। তিন দিনের মেলায় বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার নিকট থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
উন্নয়ন মেলায় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সাফল্য, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১-এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র এবং বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের তথ্য ভিত্তিক লিফলেট, চকলেট, মাথার ক্যাপসহ বিভিন্ন গিফট বিতরণ উন্নয়ন মেলাকে আরও উজ্জীবিত করে তুলেছে বলে মনে করছেন দর্শনার্থীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন