‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে জাতির জনকের পাশাপাশি বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই অন্যতম। জাতির জনকও লালন সাঁইয়ের আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।’
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন সাঁইয়ের ১২৮ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে বুধবার রাতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি এসব কথা বলেন।
ইনু বলেন, ‘আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে সত্য ও জাতহীন সমাজ গড়তে আবির্ভূত হয়েছিলেন লালন। লালন সাঁই এক বিশ্ব মানব। লালন সাঁই ছিলেন মানবতাবাদী জীবন শিল্পী। লালন সাঁই ছিলেন বাঙালি জাতিসত্বা বোধের প্রবাদ পুরুষ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, মীর মোশাররফ হোসেনেকে অশিক্ষিত জঙ্গী ধর্মান্ধ কাঠ মোল্লারা নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিল। আর লালন সাঁইয়ের অসাম্প্রাদয়িক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। কিন্তু আজকের যুগেও তিনি মানুষের হৃদয়ের মাঝখানটা দখল করে আছেন। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় গবেষনা হচ্ছে। হচ্ছে তাঁর গানের ভাষান্তর।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে জঙ্গীবাদ ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে তা আরো বেগবান করে তুলতে হবে। যাতে আগামীতে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। রাজাকার আলবদররা হচ্ছে পশু, তারা মানুষ নয়। বার বার এই সোনার বাংলাকে খুবলে খুবলে খেতে চেয়েছে। এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে তাদের গতিবিধিকে রুদ্ধ করে দিতে হবে। আসুন আজকে আমাদের শ্লোগান হোক, করতে ধ্বংস জঙ্গী, লালন সাঁই আমার সঙ্গী।’
তিনি কুষ্টিয়ার বিখ্যাত সব মণীষিদের স্মরণ করে বলেন, ‘প্রাচীন সুবিখ্যাত জনপদ কুষ্টিয়ার সুনাম, খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেছে লালন সাঁইয়ের জন্যই। লালন ছিলেন স্বদেশ প্রেমে উজ্জিবিত।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালি) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুর রশীদ চৌধুরী, জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসীন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আমিনুল হক রতন, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের কুষ্টিয়ার সভাপতি আলম আরা জুঁই ও লেখক কলামিস্ট শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু প্রমুখ।
লালন সাঁইয়ের জীবন ও কর্ম এবং রচনাবলী গান নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক অ্যাড.লালিম হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অ্যাড.শহীদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসনের এনডিসি রবিউল আলম।
আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন উপহমাদেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সমীর বাউল, সুফিয়া কাঙ্গালিনীসহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমির স্থানীয় শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তামান্ন তাসনিম, কুমারখালির এসিল্যান্ড সাব্বিরুল ইসলাম ও কনক চৌধুরী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন