শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

আত্মহত্যা প্রতিরোধে ইসলাম

মু. জাকারিয়া শাহিন | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

এক

ইসলাম সার্বজনীন বিশ্বমানবতার সংবেদনশীল একটি নীতি-আদর্শের রূপরেখা। এ ধর্মের সুশীতল ছায়ায় রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও বিশ্বমানব কল্যাণের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থাপনা। নম্র-ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট, আদর্শনিষ্ঠ ও আত্মপরিচর্চা এই ধর্মের গুণগত বৈশিষ্ট্য। গতিময় কর্মময় জীবনের স্রোত ধারায় ব্যাপক বাধা-বিপত্তি, কষ্ট-গøানি, ক্রোধ-ক্ষোভকে নিবারণ করতে না পারলে মানব জীবনে তৈরী করে দুঃখ বেদনার করুন ইতিহাস।সুশৃঙ্খল সাঝানো জীবনে ঘটে ব্যাপক ছন্দপতন। তখন দিক-দিগন্তে খুঁঁজে আশার বাণী-যা কলুষিত আত্মা কে নির্মল করবে। শত যুগ ক্রমবিকাশের পর¤পরায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ইসলাম ধর্মকে পেয়েছে পরশ পাথর সাদৃশ্য মুক্তা মানিক। তাইতো কবি নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন,,,,
ইসলাম সে তো পরশ মানিক
তাকে কে পেয়েছে খুঁজি ,
পরশে তাহার সোনা হল যারা
তাদেরই মোরা বুঝি ।
মানুষ যখন নিজেকে রাগ-ক্ষোভ, দুঃখ-বেদনার কাল স্রোত থেকে সংযত, সংবরণ করতে ব্যর্থ হয়, তখনই তার মধ্যে বিরাজ করে মারামারি-কাটাকাটি, ফিতনা-ফাসাদ, অত্যাচার-অনাচার, হত্যা, রাহাজানিসহ নানান অপরাধের চিন্তা-চেতনা। এরূপ মুহূর্তে মানুষ নিজেকে হত্যা করার মত জঘন্য কাজটিও করে থাকে। তখন তার মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি আত্মবোধ, মনুষত্ব বলতে কিছুই থাকে না। তার মধ্যে তখন থাকে মানবতাহীন আত্মঘাতিপূর্ণ চিন্তা-চেতনা। ভুলে যায় নিজেকে, সে বুঝতে পারেনা যে,আত্মহত্যা নামক জঘন্য কাজটি কেন করছে? কি লাভ হবে জীবনকে নিঃশেষ করে? এরূপ কঠিন রাগ-ক্ষোভের মুহূর্ত বয়ে আনে জীবনের মহা বিপর্যয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফ আত্মহত্যা থেকে পরিত্রাণের ব্যাপক পন্থা ও পথ নির্দশনা দিয়েছেন।হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কারো কোন বিপদ বা কষ্ট হলে সে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কেউ এরূপ করতে চায, সে যেন বলে হে আল্লাহ তুমি আমাকে জীবিত রাখ যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর এবং যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দাও।(বুখারী শরীফ-৫৮৭৪) আরও বর্ণিত আছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি লোককে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় সে বাহাদুর নয়, বরং প্রকৃত বাহাদুর তো সেই যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । (বুখারী শরীফ-৪৭২৩)
আত্মহত্যা করার অন্যতম আরো একটি কারণ হলো নেশা করা। মানুষের বিবেক-বুদ্ধি রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধের মধ্যে বিলীন হলে যেমন আত্মহত্যা সংঘটিত হয়, অনুরূপ নেশা করার ধরুণও মানুষ আত্মহত্যা করে। কারণ নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মানুষের
বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। ২০১৩ সালের ১৬ ই আগস্টের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা, রাজধানীর চামেলীবাগে ঐশী রহমান নামে ১৯ বছরের কন্যা নিজেদের বাসায় আপন পিতা পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও মাতা স্বপ্না বেগমকে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হত্যা
করে ।নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মানুষের থেকে এরূপ অসামাজিক ও আত্মঘাতী কর্মকান্ড প্রকাশিত হওয়াটা স্বাভাবিক ।এ জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নেশাকে হারাম করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন ‘হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা ও লটারী এ সব শয়তানের অপবিত্র কাজ ।তোমরা তা হতে বিরত থাকো ।আশা করা যায় যে, তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে। (সূরা মায়েদা-৯০)
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এ প্রশ্নকে ব্যাপক বিশ্লেষণ ও গবেষণা করলে বহু কারণ আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো-
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, যৌতুকের কারণে ঝগড়া বিবাদ
পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য।
প্রেম-বিরহ, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া।
কারো কাছে পরাজয় বরণ করা।
ধন-দৌলত আত্মসাৎ হয়ে পুতুর হওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ যন্ত্রণায় জীবন যাপন করা।
পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া।
ব্যক্তি জীবনে লক্ষ-উদ্দেশ্য ও আত্মবোধ সম্পর্কে অবহিত না হওয়া।
ধর্মীয় রীতি-নীতি, আদর্শ সম্পর্কে অবগত না হওয়া।
জাতীয় পর্যায়ে ধর্মীয় ও নীতি-নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা না থাকা।
বর্তমানে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ২০ টি কারণের মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলো আত্মহত্যা। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছে। মানবতার জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০১২ সালে বিশ্বে আত্মহত্যা করেছে ৮ লক্ষ মানুষ। এ সংখ্যা বর্তমান ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেড়ে চলছে। আর “বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর” থেকে এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৯,৬৪২ জন, ২০১২ সালে ১০,১০৮জন, ২০১৩ সালে ১৬,২৮৮ জন, ২০১৪ সালে ১৬,৭১৭ জন এবং ২০১৫ সালে ১৭,৬২৩ জন আত্মহত্যা করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোজাক্কের হোসেন ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৭:০৩ পিএম says : 0
মাশাআল্লাহ,লেখাটি অনেক সুন্দর হয়েছে। অনেক শিক্ষনীয় বিষয় ফুটে উঠেছে। লেখক কে ধন্যবাদ,যুগোপুযোগী লেখায় তার কলম ব্যাবহার করার জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন