তিন
মদ এবং যে সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য যা পান বা সেবন করা হারাম তার উৎপাদন ও ব্যবসা ইসলাম সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছে। এ জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন ও তার ব্যবসালব্ধ আয় অবৈধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা বলেন: হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-দেবী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো অপবিত্র শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি বিরত হবে না?’’ “আল-কুরআন, ৫ : ৯০-৯১”
মদ এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য ছাড়াও এ আয়াতে আরো যেসব বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাহলো: মূর্তি তৈরি, মূর্তি বিক্রয় ও মূর্তি উপাসনালয়ের সেবালব্ধ আয়, ভাগ্য গণনা ও জোতিষির ব্যবসা। এ সম্পর্কে আলোচ্য নিবন্ধের যথাস্থানে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হবে।
অবৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ঃ পৃথিবীতে দু’ধরনের উপার্জন পরিলক্ষিত হয়। একটি হলো বৈধ পন্থায় উপার্জন। আর অপরটি হলো অবৈধ পন্থায় উপার্জন। মানবজীবনে এ অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে কুরআন ও হাদীসে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।’’ “আল-কুরআন, ৪ : ২৯” রসূল স. বলেছেন ‘‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধুলিধুসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে ‘‘হে প্রভু! বলে মুনাজাত করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার মুনাজাত কীভাবে কবুল হবে?’’ “পূর্ণাঙ্গ হাদীসটি আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত : ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, বৈরূত : দারুর যাইল, তা.বি., খ.৩, পৃ. ৮৫, হাদীস নং-২৩৯৩।” সাদ রা, বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমার দুআ কবুল হয়। রসূল স. বললেন: হে সাদ! তোমার উপার্জনকে হালাল রাখ, তোমার দুআ কবুল হবে। মনে রেখ, কেউ যদি হারাম খাদ্যের একগ্রাসও মুখে নেয়, তাহলে চল্লিশ দিন যাবৎ তার দুআ কবুল হবে না।’’ “ইব্ন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : -তাবারানী, আল্-মুজামুল আওসাত, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ৩১০, হাদীস নং- ৬৪৯৫।”
অপর এক হাদীসে উল্লেখ আছে : ‘‘যে ব্যক্তি দশ দিরহাম দিয়ে কোন কাপড় কিনলো এবং তার মধ্যে এক দিরহাম অসৎ উপায়ে অর্জিত, সে যতদিন ঐ কাপড় পরিহিত থাকবে ততদিন তার নামায কবুল হবে না।’’ ইমাম ইবনুল ওয়ারদ বলেন, তুমি যদি জিহাদের ময়দানে যোদ্ধা অথবা প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত থাক, তাতেও কোন লাভ হবে না, যতক্ষণ তুমি যা খাচ্ছ তা হালাল না হারাম, তা বিবেচনায় না রাখ।’’ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: -আহমাদ, আবূ আব্দিল্লাহ, ইব্ন হাম্বল, আল-মুসনাদ, মিশর : কর্ডোভা, তা.বি., খ. ২, পৃ. ৯৮, হাদীস নং-৫৭৩২” অন্যত্র রসূল স. বলেন: ‘‘যে দেহ হারাম খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে তা জান্নাতে যাবে না।’’ “আত-তাবারানী, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ১১২, হাদীস নং-৫৯৬১।”
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আবু বকর রা.-এর একজন গোলাম ছিল। সে আবু বকরকে মুক্তিপণ হিসাবে কিছু অর্থ নেয়ার শর্তে মুক্তি চাইলে তিনি তাতে সম্মত হন। অতপর সে প্রতিদিন তার মুক্তিপনের কিছু অংশ নিয়ে আসতো। আবু বকর রা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এটা উপার্জন করে এনেছ? সে যদি সন্তোষজনক জবাব দিত তবে তিনি তা গ্রহণ করতেন, নচেত করতেন না। একদিন সে রাতের বেলায় তাঁর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোযা ছিলেন। তাই তাকে ঐ খাদ্যের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলেন এবং এক লোকমা খেয়ে নিলেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কীভাবে সংগ্রহ করেছো? সে বললো, আমি জাহেলিয়াত যুগে লোকের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণনা করতে পারতাম না। কেবল ধোঁকা দিতাম। এ খাদ্য সেই ভাগ্য গণনার উপার্জিত অর্থ দ্বারা সংগৃহীত। আবু বকর রা. বললেন ঃ কী সর্বনাশ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে ফেলার উপক্রম করেছো। তারপর গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বমিতে খাদ্য বের হবে না। উপস্থিত লোকেরা তাকে বললো, পানি না খেলে খাওয়া জিনিস বের হবে না। তখন তিনি পানি চাইলেন। পানি খেয়ে খেয়ে সমস্ত ভুক্ত দ্রব্য পেট এক লোকমা খাওয়ার কারণেই কি এত সব? আবু বকর রা. বললেন: খাদ্য বের করার জন্য যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হতো, তবুও আমি বের করে ছাড়তাম। কেননা আমি রসূলুল্লাহ স. কে শুনেছি: ‘‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’’ “আত-তাবারানী, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ১৩৯, হাদীস নং-২৭৩০, ইমাম হাকিম, আল-মুসতাদরক ‘আলাস্= সহীহাইন, দারু ইহইয়ায়িত তুরাছিল আরাবী, তা.বি., পৃ. ১৪১, হাদীস নং-৭১৬২।” এখন মানবজীবনে সম্পদ উপার্জনের কতিপয় অবৈধ পন্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন