ছয়
রসূল স. বলেছেন: ‘‘কোন সমাজে সুদের প্রচলন হলে সেখানে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে, ব্যভিচারের প্রচলন হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে এবং মাপে কম দেয়ার প্রথা চালু হলে আল্লাহ সেখানে বৃষ্টি বন্ধ করে দেবেন। এটা অবধারিত।’’ “ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ২৫৪”
রসূল স. বলেছেন: ‘‘সুদের ৭০টি গুনাহ। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো আপন মাকে বিয়ে করার গুনাহর সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায় করতে গিয়ে কোন মুসলমানের সম্ভ্রম নষ্ট করা বা তার সম্পত্তি জবর দখল করা’’। “ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৪৫, পৃ. ৫২৩, হাদীস নং-২৭৫৩৬” রসূল স. বলেছেন: ‘‘কোন সুদখোর যদি এক দিরহাম পরিমাণও সুদ আদায় করে তবে তার গুনাহ ৩৬ বার ব্যভিচার করার সমান।’’ “ইমাম বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৩৯৫, হাদীস নং- ৫৫২৩”
রসূল স. আরো বলেছেন: ‘‘আল্লাহ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের লেখক সকলেরই ওপরই অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।’’ “ইমাম হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস-সহীহাইন, তা.বি. খ. ৪, পৃ. ১১৫, আহমাদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩৭, পৃ. ৮৫, হাদীস নং- ২২৩৯৯
ইসলামে সুদ ও সুদী কারবার নিষিদ্ধ। যদি কেউ এ গর্হিত কাজ করে তবে তার অপরাধের মাত্রানুযায়ী মুসলিম শাসক সুদের অর্থ ফেরত নেয়া, আর্থিক জরিমানা, আটকাদেশ, বেত্রাঘাত, নির্বাসন, মৃত্যুদণ্ড এমনকি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও করতে পারেন। ইমাম আল-জাস্সাস র. বলেন: সুদের মাধ্যমে যেহেতু মানুষের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করা হয়, সেহেতু তার শাস্তি ছিনতাইকারীর শাস্তির মত হবে। “আবূ বকর আল-জাস্সাস, আহকামুল কুরআন, আল-কাহরো : আল-মাতবাআতুল বাহিয়্যাহ আল-মিসরিয়্যাহ, ১৯২৮, খ. ১, পৃ. ৪৬৫”
সম্পদ আত্মসাৎ ও ঘুষ ঃ সম্পদ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণ করা বা কাউকে ঘুষ দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের অর্থ আত্মসাৎ করো না, শাসকদের কাছে অর্থ নিয়ে যেও না, যাতে তোমরা মানুষের অর্থের একাংশ অন্যায় পন্থায় ভোগ করতে পার, অথচ তোমরা জান।’’ “আল-কুরআন, ২:১৮৮” অর্থাৎ তোমরা শাসকদের উৎকোচ দিয়ে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার ব্যবস্থা করো না অথচ তোমরা তো জান যে, এ রকম করা বৈধ নয়।
রসূল স. বলেছেন: আল্লাহ ঘুষদাতা ও ঘুষখোর উভয়কে অভিশম্পাত দিয়েছেন’’। রসূল স. আরো বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করলো, অতঃপর যার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, সে তাকে কোন হাদিয়া বা উপহার দিল, সে যদি এই হাদিয়া গ্রহণ করে, তবে তা হবে একটি বড় ধরণের সুদ খাওয়ার পর্যায়ভুক্ত’’। “ইমাম হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, আয-ঝাওয়াযিরু আন ইকতিরাফিল কাবায়ির, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৮৭৯” ইবনে মাসউদ রা, বলেন: ‘‘তোমরা ভাই-এর প্রয়োজন পূরণ করে দিয়ে তার কাছ থেকে যদি উপহার গ্রহণ করো তবে তা হবে হারাম।’’
যে ব্যক্তি কোন কাজের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত হয়, সে যদি তার দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত কোন কাজ করে দিয়ে যার জন্য কাজ করেছে তার কাছ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করে, তবে সেটা সর্বসম্মতভাবে ঘুষ বিবেচিত হবে, তা উপহার, উপঢৌকন, হাদিয়া বা বখশিশ যে নামেই প্রদত্ত হোক না কেন। আর যদি দায়িত্বের অতিরিক্ত হয় এবং চাকুরীর সময়ের বাইরে করা হয় তবে সে জন্য পারিশ্রমিক নিলে তা ঘুষ হবে না।
জুয়া ঃ জুয়াকে ইসলাম অবৈধ উপার্জন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু ভাগ্যগণনা শয়তানের কাজ। সুতরাং এসব থেকে দূরে থাক। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। “আল-কুরআন, ৫ : ৯০” আল-কুরআন, ৫: ৯০।
যে কোন ধরণের জুয়াই এ আয়াতের ঘোষণার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা দাবা, তাস, পাশা, গুটি অথবা অন্য কোন জিনিসের দ্বারা খেলা হোক। এটা আসলে অবৈধ পন্থায় মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ ও লুণ্ঠন করার আওতাভূক্ত। রসূল স. বলেছেন: ‘‘কেউ যদি এরূপ প্রস্তাব দেয় যে, এসো তোমার সাথে জুয়া খেলবো, তবে তার সদকা করা উচিত।’’ “আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত : ইমাম বুখারী, সহীহ আল বুখারী, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ. ২২৬৪, হাদীস নং-৫৭৫৬, ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ. ৮১, হাদীস নং-৪৩৪৯” আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত:
জুয়া সম্বন্ধে শুধু কথা বললেই যদি সাদকা বা কাফ্ফারা দিতে হয়, তবে কাজ করলে কী পরিণতি হতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। তাস ও দাবা ইত্যাদি খেলা যদি আর্থিক হারজিত থেকে মুক্ত হয় এবং নিছক চিত্ত বিনোদনমূলক হয়, তবে তাও বৈধ হওয়ার বিষয় নিয়ে মতভেদ আছে। কারো মতে হারাম, কারো মতে হালাল। কিন্তু আর্থিক হারজিত যুক্ত থাকলে তা যে হারাম, সে ব্যাপারে সকল মাযহাবের ইমামগণ একমত। পাশা জাতীয় জুয়া খেলা হারাম হওয়া সম্পর্কে ইমামগণ একমত হয়েছেন। কারণ রসুল স. বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি পাশা খেললো সে যেন নিজের হাতকে শূকরের গোশত ও রক্তের মধ্যে ডুবিয়ে রঙিন করলো।’’ “-ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, প্রাগুক্ত, খ. ১৩, পৃ. ১৮১, হাদীস নং-৫৮৭২; ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩২, পৃ. ২৮৭, হাদীস নং-১৯৫২১; ইবনে মাজাহ, আস্-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১২৩৮, হাদীস নং-৩৭৬২” ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, প্রাগুক্ত, খ. ১৩, পৃ. ১৮১, হাদীস নং- ৫৮৭২; ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩২, পৃ: ২৮৭, হাদীস নং- ১৯৫২১; ইবনে মাজাুহ, আস-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১২৩৮, হাদীস নং- ৩৭৬২। ইবনে উমর রা. বলেন: ‘‘পাশা খেলা এক ধরণের জুয়া এবং তা শূকরের চর্বি দিয়ে পালিশ করাা মতো হারাম কাজ।’’ “ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, প্রাগুক্ত, খ. ১৩, পৃ. ১৮১, হাদীস নং-৫৮৭২; ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩২, পৃ. ২৮৭, হাদীস নং-১৯৫২১; ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১২৩৮, হাদীস নং-৩৭৬২” ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, প্রাগুক্ত, খ. ১৩, পৃ. ১৮১, হাদীস নং- ৫৮৭২; ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩২, পৃ. ২৮৭, হাদীস নং- ১৯৫২১; ইমাম ইবনে মাজাহ, আস্-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১২৩৮, হাদীস নং- ৩৭৬২।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন