শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

বৈধ-অবৈধ পেশা ও উপার্জন

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বার

জবর দখল : জবর দখল করা ইসলামী আইন নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধ কাজটি সমাজে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জোরপূর্বক মানুষের সম্পদ হরণ, জোর পূর্বক অন্যের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া, মানুষকে প্রহার করা, গালিগালাজ করা, বিনা উস্কানিতে কারো ওপর আক্রমণ চালানো এবং আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন এবং দুর্বলদের ওপর নৃশংসতা চালানো ইত্যাদিকে জবর দখল বলে। এটি ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘জালিমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে উদাসীন মনে করো না। আল্লাহ তাদেরকে শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা নিচু করে দৌঁড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবেনা এবং তাদের হৃদয়সমূহ দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আযাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে : হে আমাদের প্রভূ! অল্প কিছুদিন আমাদেরকে সময় দিন তাহলে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করবো এবং রসূলদের অনুসরণ করবো। তোমরা কি ইত:পূর্বে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করেছ এবং সেই সব জালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্ত আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’’ “আল-কুরআন, ১৪: ৪২-৪৫।”
রসূল স. বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও অন্যের জমি জবর দখল করবে, কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাতটি পৃথিবী চাপিয়ে দেয়া হবে।’’ “ইমাম বুখারী, সহীহ আল-বুখারী, প্রাগুক্ত, খ. ২ ২, পৃ. ৮৬৬, হাদীস নং-২৩২০।”
প্রচলিত আইনে, অন্যায়ভাবে অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা অথবা ভূমির দখলে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করাকে ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ বা ভূমি ট্রেসপাস বলে। “এ.বি. সিদ্দিক, টর্ট আইন, ঢাকা: কামরুল বুক হাউস, ২০০৩, পৃ. ৫৬।”
অন্যের অঙ্গনে যথার্থ কারণ ছাড়া প্রবেশ করলে ট্রেসপাস সংঘটিত হয়। এ উদ্দেশ্যে বিবাদীর সম্পূর্ণ প্রবেশ প্রয়োজন হয় না। প্রধান ফটকে সামান্যতম অঙ্গুলী প্রবেশই যথেষ্ট। এ ছাড়া জানালায় হাত ঢুকানো, দেওয়ালে হেলান দেয়া, অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলক্রমে প্রবেশ করা এ অপকর্মের অন্তর্ভূক্ত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলপূর্বক কারো কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করবে তার শাস্তির মেয়াদ তিন বছর কারাদন্ড অথবা অর্থ দন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। “গাজী শামছুর রহমান, দন্ডবিধির ভাষ্য, ধারা-৩৮৪।” আর এ বলপূর্বক কোন কিছু গ্রহণের মাধ্যমে যদি ভিকটিমের কোন ক্ষতি হয় তাহলে তার শাস্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের কম নয়। “প্রাগুক্ত, ধারা-৩৮৫।” আর বলপূর্বক বা জোর করে কাউকে মৃত্যুর ভয় দেখালে তার শাস্তি সাত বছরের কম নয়। “প্রাগুক্ত, ধারা-৩৮৭।”
ক্ষতিপূরণের মামলায় বলা হয়েছে যে, জমি পুনরুদ্ধারের মামলা ছাড়াও দখলচ্যুত ব্যক্তি ক্ষতিপুরণের দাবি করতে পারে। বেদখল হতে উদ্ভুত যাবতীয় ক্ষতিসহ দখল উদ্ধার বাবদ যাবতীয় খরচ সে দাবি করতে পারে। আবশ্য বিবাদী ভূমির বা গৃহাঙ্গানের উন্নতিকল্পে খরচ করে থাকলে সেগুলোর জন্য সেট অফ (ঝবঃ ড়ভভ) দাবি করতে পারে কি-না সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত সেই। তবে প্রখ্যাত টর্ট আইন বিশারদ স্যামন্ডের মতামত উল্লেখযোগ্য। “এ.বি. সিদ্দিক, টর্ট আইন, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৭।” তিনি বলেন: যেহেতু বেদখলের ফলে উদ্ভুত ক্ষতিপুরণের জন্য দাবীর দাবি, এটা নীতিগতভাবে পরিষ্কার যে, বিবাদী উক্ত অঙ্গনের যে মূল্য বৃদ্ধি করেছে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিবাদী যদি পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন গৃহ নির্মাণ করে থাকে, তবে এটা যথার্থ হবে না যে, বাদী নতুন গৃহের দখল এবং পুরাতন গৃহের মূল্য আদায় করতে পারবে। “প্রাগুক্ত”
পতিতাবৃত্তি ঃ স্বাভাবিক যৌনকার্য মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্যতম। এর সমাধান না হলে মানুষ তার জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবৈধ পন্থায় যৌনকার্য সম্পাদন করা গর্হিত কাজ। কোনো নারী স্বেচ্ছায় নিজেকে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য কেউ তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসায় পরিচালনা করতে চাইলে তাও নিষিদ্ধ। আল-কুরআনে এসেছে, ‘‘তোমরা যুবতীদের দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য করো না।’’ “আল-কুরআন, ২৪:৩৩।” কুরআনের আরো ঘোষণা, ‘‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।’’ “আল-কুরআন, ১৭:৩২।” মহানবী স. বলেন, ‘‘কোন ব্যক্তি মু’মিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।’’ “ইমাম বুখারী, সহীহ আল-বুখারী, প্রাগুক্ত, খ. ত, পৃ. ৩৬৯; ইমাম মুসলিম, সহীত মুসলিম, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ১৮৭।” ইসলাম ব্যভিচার ও দেহ ব্যবসায়কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পর্ণোগ্রাফি ছবি তৈরি অশ্লীলতা ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পরিচায়ক। তরুণ-যুব-শিশু চরিত্র হনন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। ইসলাম যে কোন প্রকার অশ্লীলতার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছে। আল-কুরআন বলেন, ‘‘তোমরা কোনো ধরণের প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হয়ো না।’’ “আল-কুরআন, ৬:১৫১।”
চারিত্রিক ও সামাজিক শৃংখলা বিনষ্টকারী উপকরণের ব্যবসা বা ক্রয়বিক্রয় মাধ্যমে অর্থ আয় করাকেও ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা বিস্তার করাকে পছন্দ করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ যা জানেন তা তোমরা জান না।’’ “আল-কুরআন, ২৪:১৯।”
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘তোমাদের দাসীরা পবিত্র ও সতী-সাধ্বী থাকতে চাইলে দুনিয়ার স্বার্থ লাভের জন্য তাদেরকে ব্যভিচার করতে বাধ্য করো না। তবে তাদের উপর কেউ জবরদস্তি করলে সে ব্যাপারে আল্লাহ্ তাদের উপর ক্ষমাশীল ও দায়ালু।’’ “আল-কুরআন, ২৪:৩৩।”
ইসলাম যেনা-ব্যভিচার সমর্থন করে না। এ সমস্ত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহ মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা এমন অশ্লীল কাজে লিপ্ত হবে তাদের উভয়ের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী যেনা করলে উভয়ের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান প্রয়োগে তোমাদের উভয়ের ব্যাপারে নম্রতা দেখানো যাবে না, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাক। আর মু’মিনদের একটি দল উভয়ের শাস্তি প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করবে। যেনাকারী পুরষ যেনাকারিনী মহিলা যেনাকারী বা মুশরিক পুরুষ ব্যতীত অন্য কাউকে বিবাহ করতে পারবে না। আর এরা মুমিনদের জন্য হারাম।’’ “আল-কুরআন, ২৪:২-৩।”
রসুল স. বলেছেন: ‘‘.. আমার নিকট থেকে নিয়ে নাও, আল্লাহ্ ঐ সকল মহিলার জন্য পথ বের করে দিবেন। যুবক-যুবতী যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও একবছর নির্বাসন। আর বিবাহিত মহিলা ও পুরুষ যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও পাথর দ্বারা রজম।’’ “উবাদা ইবনে সামিত রা. হতে বর্ণিত: ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, বৈরূত: দারুল ফিকর, তা.বি., হাদ্দুয যিনা, খ. ৫, পৃ. ৫৯, হাদীস নং- ৩২০০; মুসলিম, অধ্যায়: ........ অনুচ্ছেদ: ইমাম, তিরমিযী, আস-সুন্নান, বৈরূত: দারু-ইহইয়াইত তুরাছিল ‘আরাবী, তা.বি, অনুচ্ছেদ : মাজা;আ ফী হাদ্দির রজম, খ. ৫, পৃ. ৩৩৮।”
এমনিভাবে আরো অনেক হাদীস রসূল স. থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত যে, এসকল খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা এবং অপরকে বিরত থাকা।
প্রচলিত আইনে পতিভাকৃত্তিকে জঘন্য অপরাধ মনে করা হয়ে থাকে। মএ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দÐবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে: ‘‘যে ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়স্কা কোন ব্যক্তি যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সম্পর্ক অথবা কোন বে-আইনি ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা জানিয়া তাহাকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদÐে যাহার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হইতে পারে দন্ডিত হইবে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে।’’ “গাজী শামসুর, রহমান দÐবিধির ভাষ্য, ধারা-৩৭২।”

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন