বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সুশাসনের অভাবে রাজনীতি এখন দেশের বড় ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। নির্বাচনের ভেতরে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর উপস্থিতি যথেষ্ট দৃশ্যমান। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এখন প্রয়োজন বোধ করছেন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তারা অনেক ক্ষেত্রে পেয়েছেন, সেটা একমাত্র রাষ্ট্রীয় আনুক‚ল্য দ্বারাই সুরক্ষা করা সম্ভব। তিনি বলেন, কর অবকাশ থেকে শুরু করে কোনো একটি লাইসেন্স বিশেষভাবে আনুক‚ল্যের ভিত্তিতে হয়েছে। সেজন্য তারা রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে এটাকে সুরক্ষা দিতে চান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আবার রাজনীতিবীদরাও ব্যবসায় ঝুঁকছেন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় সুযোগ ভোগ করেন। একচেটিয়া সুবিধা ভোগের কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা সুফল নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নীতিমালা থাকা দরকার। যেখান থেকে সবাই সমানতালে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ব্যবসার মুনাফা ভোগ করতে পারেন। তাহলে আর বৈষম্যের সৃষ্টি হবে না।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন করবেন। যেখানে বলতে হবে এই এই খাতে আমার ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে, বিনিয়োগ আছে, আমার পরিবার এটার সঙ্গে যুক্ত। তাহলে আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে উনি যখন মতামত দিবেন, তখন বুঝা যাবে উনি কতখানি নীতির ভিত্তিতে কথা বলছেন। কতখানি ব্যক্তি স্বার্থে বলছেন। এই স্বচ্ছতা যদি সংসদের ভেতরে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আসতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আঙ্কটাড প্রকাশিত ‘ব্যবসার কাঠামোগত পরিবর্তন’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন সিপিডির গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আঙ্কটাড প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার ব্যপক আকারে উদ্যোক্তা তৈরি। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্যোক্তা তৈরির সবচেয়ে বড় অন্তরায় সুশাসনের অভাব। দেশের নীতি কাঠামোগুলোতেও রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরকেই বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। উপেক্ষিত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বলে জানিয়েছে সিপিডি। একই সঙ্গে দেশের নীতি কাঠামোতে গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির স্বার্থের সংঘাতকে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে বলে মনে করছে সিপিডি। প্রতিবেদন বলছে, রাজনীতের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি কলুষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এসব নীতি কাঠামোর ফলে দেশে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বাড়ছে আয় বৈষম্য।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামায় যে আয়-ব্যয়ের হিসেব দিচ্ছেন তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নজরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, এসব হলফনামা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুততার সাথে দেখে এর একটি মূল্যায়ন জনগণের সামনে উপস্থাপন করবেন। পাশাপাশি নির্বাচনের পরে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন তার পর থেকেও সম্পদের হিসেব নিতে হবে। যাতে দেশের সাধারণ জনগণ জানতে পারেন ‘সাংসদ’ হওয়ার পরে কত সম্পদের মালিক হন। অনেক সময় দেখা যায়, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই দুই থেকে তিনগুণ সম্পদের মালিক হয়ে যান।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের দিক সুস্পষ্ট থাকা দরকার। তিনি বলেন, উন্নয়ন রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রের দিকে যেতে হবে। তাহলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যাবে। আর নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হলে তাদের (লাইফ সাইকেল) অর্থাৎ ব্যবসার শুরুর দিকটা গুছিয়ে দিতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংকের ঋণ থেকে সরকারের কোনও সুযোগ-সুবিধা পায় না। অন্য দিকে বড় উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ থেকে শুরু করে সরকারের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। এটা বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। ছোট উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতেই ঝরে পড়ছে। এজন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হলে অবশ্যই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়ক নীতিমালার প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন