জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তার অবস্থা এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত। বাবার অসুস্থতার কারণে ভেঙে পড়েছেন তার ছোট ছেলে নির্মাতা ও অভিনেতা সোহেল আরমান। সম্প্রতি ফেসবুকে বাবাকে নিয়ে এক আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তিনি। সোহেল লিখেন, যে মানুষটি এ দেশের গণমানুষের কথা বলতেন। অবক্ষয়ের কথা বলতেন। বিশেষ করে যারা নিপীড়িত, অনাহারী ও অবহেলিত তাদের কথা বলতেন। যে মানুষটি শ্রেণীসংগ্রামের কথা বলতেন, গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের হয়ে প্রতিবাদ করতেন, যে মানুষটির কলম এ বাংলার সাহিত্যকে গর্বিত করে, যে মানুষটির লেখা গান কোটি কোটি মানুষের ঘরে। এখনো কোনো যুবক গেয়ে ওঠে জন্ম থেকে জ্বলছি মা গো..., যে মানুষটির চলচ্চিত্র বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে, একটি আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র হয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন, যে মানুষটিকে নিয়ে বলে শেষ করা যায় না-এ যেন অফুরন্ত এক ট্রেন লাইন, সেই মানুষটি যেন এক গোলাপীকে নিয়ে ট্রেনে উঠে গেছেন। সোহেল বাবার উদ্দেশে লিখেন, তোমার এত এত সৃষ্টি এ যেন এক বিশ্ববিদ্যালয়। তুমি আজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে জীবনমৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছ। ফিরে এসো বাবা...। আমি আর লিখতে পারছি না। উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর সকালে ব্রেন স্ট্রোক করার পর আমজাদ হোসেনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে সোহেল আরমান বলেন, বাবার অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত। চিকিৎসার জন্য বাবাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। লাইফ সাপোর্টে থাকার কারণে এখনই তাকে নেওয়া যাচ্ছে না। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চাইছি। উল্লেখ্য, ৭৬ বছর বয়সী আমজাদ হোসেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গল্পকার, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি ভাত দে, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, দুই পয়সার আলতা, জন্ম থেকে জ্বলছির মতো কালজয়ী অনেক সিনেমা নির্মাণ করেছেন। গোলাপী এখন ট্রেনে ও ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভ‚ষিত করেছে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন