কানেকটিকাটে নিজের বাড়ির কাছের মসজিদে গুলি ছুঁড়েছিলেন সাবেক মার্কিন সেনা টেড হ্যাকি। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ২০১৫ সালে এই কাজ করেছিলেন। এরপরই পাল্টে যায় তাঁর জীবন।
বিবিসিকে মার্কিন সেনা টেড বলেন, আমি ঠিক করলাম আমি কয়েকটা গুলি ছুড়বো এবং তারা ক্যামেরায় সেগুলোর শব্দ শুনবো। আর যদি সেখানে কোন চরমপন্থী থাকে, তাহলে বিষয়টি তারা টের পাবে। ২০১৫ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখ ছিল শুক্রবার। আমি স্ত্রীকে নিয়ে একটি কনসার্টে গিয়েছিলাম।
আর এটি ছিল প্যারিসে হামলার সেই রাত। আমি বাড়ি ফিরে এলাম। গাড়ি গ্যারেজে তুললাম। থামলাম। বাইরে বেরিয়ে চোখ তুলে তাকালাম মসজিদটির দিকে। আমার বাড়ি এর ঠিক পাশেই। তাকিয়েই মনে পড়লো ওহ হ্যা প্যারিস হামলা। আমার অবস্থা তখন এরকম আমি এখন এ নিয়ে কি করতে পারি। তাই একজন মাতাল বিমূঢ় লোকের মতো আমি ঠিক করলাম আমি কিছু গুলি ছুঁড়বো।
মসজিদের এক মুসল্লি জহির বলছিলেন, আমরা রোববারে নামাজ পড়তে এলাম। আমাদের কয়েকজন সদস্য তখন দেখলো কিছু গুলির দাগ দেখা যাচ্ছে। যেগুলো এসেছিল মসজিদের ভেতরের দিক থেকে। আমাদের সহজাত প্রতিক্রিয়া ছিল আমরা আবার কি করলাম। মসজিদের ভেতরের জায়গা দেখিয়ে বলেন, একটা বুলেট আঘাত হেনেছিল ঠিক এখানে। আরেকটি গুলি গিয়েছিল ইমাম যেখানে দাড়ান ঠিক সেই জায়গাটি পেরিয়ে। যার মানে হল আমি যদি এখানে দাড়াতাম তাহলে আমি গুলির মুখে পড়তাম। গুলি আমার মাথায় লাগতো। যার আমাকে রাইফেল তুলে নেয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তা সম্ভবত ঘটেছে খুব ধীরে ধীরে।
হামলাকারী বলেন, আমার ফেসবুক পোস্টে অনেক কথা হচ্ছিল। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি এক রকম হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম। কোন কারণ ছাড়াই তুমুল ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছিল। আমি নিজেকে বললাম আমি এখানে এলাম কেমন করে। এর অনেক কিছুর উত্তর আসছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। তারা কোরআন থেকে উদ্বিৃতি তুলে দিয়েছিল। যেগুলো ভুল বলে আমি পরে জানতে পেরেছি। সুতরাং ইসলাম সম্পর্কে আমার জানা ছিল একেবারে ভুল।
জহির বলেন, কোরআন বলেছে ধৈর্য্য আর প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্য চাও। আমরা ঠিক তাই করেছি। আমরা কিন্তু আমাদের বিশ্বাস নিয়ে ভয় পাইনি। আমরা মসজিদে এসেছি, আর এই বড় বার্তাটিই একেবারে গোড়াতে সবার কাছে দিতে চেয়েছি। একই সঙ্গে আমরা টেডের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছি। তাকে আমরা চিনতে পারার পর তাকে শুধু এই মসজিদেই আসতে হয়েছে।
বিশালদেহী, পুরুষালী দেহের লোকটা এখানে আসার পর প্রথমে যা ঘটলো।
হামলাকারী বলেন, আমার মনে আছে আমি ওই বৈঠকে যাওয়ার পর একরাশ অপরাধবোধ আমাকে গ্রাস করেছিল।
জহির বলেন, আমরা তার তীব্র অনুশোচনা অনুভব করতে পারছিলাম। তাঁর অনুতাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। বিস্ময়কর ব্যাপার হল দুই পক্ষই একে অপরের আন্তরিকতায় বিস্মিত ছিল।
আমরা বলেছি সঠিক ইসলামকে তুলে ধরতে আমরা এই সর্ব ধর্মের সমাবেশ ডেকেছি। আর খুঁজতে চেয়েছি কিভাবে চরমপন্থা মোকাবিলা করা যায়। আপনি সেখানে যেতে পারেন। সবাই সেখানে থাকবেন। আর আপনি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন।
হামলাকারী প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা কঠিন সময় ছিল। আমি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে চাই। আমি যদি আপনাদের সঙ্গে মাত্র পাঁচ মিনিট কাটাতাম। তাহলে ঘটনা অন্যরকম হতো। আমি কাজটি করতাম না। আমি শুধু আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ধন্যবাদ। সবাই এগিয়ে এলো। আমার হাত ধরলো। ধন্যবাদ জানালো আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি সেইজন্য। আর এসব কিছু আমাকে অভিভূত করে দেয়।
ঘৃণাজনিত অপরাধ সংঘটনের দায় স্বীকার করেন টেড। তাকে ছয় মাসের কারাদ- দেয়া হয়। তিনি যখন জেল খেটেছেন, তখন জহির তাকে নিয়মিত দেখতে যেতেন। আমি বলব আমার ভাইয়ের মতো তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি কিন্তু তিনি সত্যিকার বার্তা ছড়িয়ে সবাইকে সাহায্য করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদেরকে এই আলো পৌছে দিচ্ছেন যে যা দেখা যায় তাই সব কিছু নয়। বলছিলেন জহির। -বিবিসি -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন