শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

হোয়াইটওয়াশের বদলা বাংলাওয়াশে

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

খুব বেশি দিন আগের নয়, গত জুলাইয়ের ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশর লজ্জা পেয়েছল বাংলাদেশ। বছর শেষে সেই একই প্রতিপক্ষকে ঘরের মাটিতে পেয়ে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিল কড়ায় গণ্ডায়, তার চেয়েও বড় লজ্জা দিয়ে ক্যারিবিয়দের নাকানিচুবানি খাওয়ালো বাংলাওয়াশে! চট্টগ্রাম টেস্টের পর ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। বিজয়ের মাসে মিরপুরে উড়ল বাংলাদেশের ইতিহাসগড়া বিজয়ের পতাকা। ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা মিরাজ। আর ব্যাট হাতে ১১৫ রান ও বল হাতে ৯ উইকেট নিয়ে সাকিব হলেন সিরিজসেরা। নিজেরা ৩৮ বার ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা পাওয়ার পর প্রথমবার প্রতিপক্ষকে এ লজ্জা দিল। বাংলাদেশের চতুর্থ সিরিজ জয় এবং তৃতীয় হোয়াইটওয়াশের স্বাদ।
সিরিজ শুরুর আগ থেকেই আলোচনায় যে ‘স্পিন কোয়াট্রেট’, তাতেই ঘায়েল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চট্টগ্রামে তাইজুল-নাঈম, ঢাকায় সাকিব-মিরাজ এই চতুষ্টয়েই মাত্র সাড়ে ৬ দিনে দুই টেস্ট জিতে ২-০ তে সিরিজ নিজিদের করে নিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১৫ সেশন খেলে প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন বাংলাদেশের এই চার স্পিনার। টেস্ট ইতিহাসেই যা ঘটলো প্রথমবার।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পদচারণা ১৮ বছর হয়ে গেল। এ যাত্রায় সাফল্য-ব্যর্থতায় অনেক কিছুরই স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের ঢাকা টেস্টকে রাখতে হবে ভিন্ন জায়গায়, অনেক সাফল্যের ওপরে। চাইলে সবার ওপরেও রাখা যায়।
প্রথমবারের মতো কোনো পেসার ছাড়া টেস্ট ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। একাদশে দ্বিতীয়বারের মতো চার স্পিনার নিয়ে ভারতকে পেছনে ফেলল। বছরের আটজনের টেস্ট অভিষেক। কতকিছুই না হলো মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বধে কঠিন পরিকল্পনা। টেবিলের কঠিন পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়ন করলেন খেলোয়াড়রা। ফলাফলও আসল বাংলাদেশের পক্ষে। অনেক প্রথমের সঙ্গে যুক্ত হলো আরো দুটি। প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করাল বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে প্রতিপক্ষকে। তাইতো এ জয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে স্মরণীয়।
ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় কালিতে নিজের নাম লিখিয়ে রাখলেন সাকিব আল হাসান। তার নেতৃত্বেই দেশ ও দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। প্রথমবার ২০০৯ সালে ওদের মাটিতে, নয় বছর পর নিজেদের মাটিতে। সাকিবের হাতে ওঠা রূপালি রঙের ট্রফি জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো ১২ উইকেট পেলেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার পকেটে ঢুকল ৫ উইকেট। ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট বোলিং ফিগার তারই দখলে। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৯ রানে নিয়েছিল ১২ উইকেট। এবার ১১৭ রানে শিকার ১২টি।
ক্যারিবীয়দের জন্য পাতা হয়েছিল স্পিন ফাঁদ। ওই ফাঁদেই আটকে পড়ল সফরকারীরা। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের জন্য গতকাল তৃতীয় দিন ১৫ উইকেট দরকার ছিল বাংলাদেশের। কাজটা শুধু কঠিনই না, দুরূহ। তবুও অসাধ্য সাধন করে দেখাল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের মতো ঢাকাতেও আড়াই দিনে শেষ টেস্ট। এদিন প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৭৫ রানে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ৫ উইকেট তুলে নিতে সকালে বাংলাদেশের সময় লাগে মাত্র ৫১ মিনিট। বাংলাদেশের করা ৫০৮ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ ১১১ রানে। আগের দিনের ৩ উইকেটের সঙ্গে আরো ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। সব মিলিয়ে মিরাজের পকেটে গেছে ৭ উইকেট। ৫৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে মিরাজ ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিয়েছেন।
ফলোঅন এড়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৩০৯! বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সাহস পেলেন সাকিব। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করাল। ৩৯৭ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এবারও স্পিন বিষে নীল ক্যারিবীয়রা। প্রথম সেশনেই নেই ৪ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে হারাল শেষ ৬টি।
প্রথম ইনিংসের বিপর্যয়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের সংগ্রহ ২১৩। ওই শিমরন হেটমায়ারই যা করে দেখাল, ৯২ বলে ১ চার ও ৯ ছক্কায় করলেন ৯৩। ৯ ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডও গড়েছেন। কুমার সাঙ্গাকারা ৩১৯ করার পথে হাঁকিয়েছিলেন ৮ ছক্কা।
দ্বিতীয় দফায় অধিনায়ক হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে শুরু করেছিলেন সাকিব। পেয়েছিলেন তিক্ত অভিজ্ঞতা। দুই টেস্টই বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও বিশাল রান ব্যবধানে। ঘরের মাঠে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিয়ে শুরু সাকিবের। এবার সাকিবের হাত ধরে বিজয়ের মাসে উড়ল বিজয় পতাকা।


টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের
বড় ব্যবধানে জয়
ব্যবধান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
ইনিংস ও ১৮৪ রান উইন্ডিজ ঢাকা ২০১৮
২২৬ রান জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ২০০৫
২১৮ রান জিম্বাবুয়ে ঢাকা ২০১৮
১৮৬ রান জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ২০১৪
১৬২ রান জিম্বাবুয়ে খুলনা ২০১৪
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী
বোলার ম্যাচ/ইনি. উইকেট ম্যাচেসেরা
সাকিব আল হাসান ৫৫/৯৩ ২০৫ ১০/১২৪
মোহাম্মদ রফিক ৩৩/৪৮ ১০০ ৯/১৬০
তাইজুল ইসলাম ২৩/৪২ ৯৭ ১১/১৭০
মেহেদি হাসান মিরাজ ১৮/৩৩ ৮৪ ১২/১১৭
মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৬/৫১ ৭৮ ৫/৮৮
সেরা বোলিং ফিগার
বোলার ফিগার প্রতিপক্ষ সাল
তাইজুল ইসলাম ৮/৩৯ জিম্বাবুয়ে ২০১৪
সাকিব আল হাসান ৭/৩৬ নিউজিল্যান্ড ২০০৮
মেহেদি হাসান মিরাজ ৭/৫৮ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১৮
এনামুল হক জুনিয়র ৭/৯৫ জিম্বাবুয়ে ২০০৫
শাহাদাত হোসেন রাজীব ৬/২৭ দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৮
ম্যাচে ১০ উইকেটের কীর্তি
বোলার ফিগার প্রতিপক্ষ সাল
মেহেদি হাসান মিরাজ ১২/১১৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১৮
মেহেদি হাসান মিরাজ ১২/১৫৯ ইংল্যান্ড ২০১৬
এনামুল হক জুনিয়র ১২/২০০ জিম্বাবুয়ে ২০০৫
তাইজুল ইসলাম ১১/১৭০ জিম্বাবুয়ে ২০১৮
সাকিব আল হাসান ১০/১২৪ জিম্বাবুয়ে ২০১৪
সাকিব আল হাসান ১০/১৫৩ অস্ট্রেলিয়া ২০১৭
বছরে সর্বাধিক উইকেট
বোলার উইকেট সাল
তাইজুল ইসলাম ৪৩ ২০১৮
মেহেদি হাসান মিরাজ ৪১ ২০১৮
মোহাম্মদ রফিক ৩৩ ২০০৩
সাকিব আল হাসান ৩০ ২০০৮
সাকিব আল হাসান ২৯ ২০১৭

 

টেস্ট সিরিজের সেরা ৫

ব্যাটসম্যান ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
শিমরন হেটমায়ার (উইন্ডিজ) ২/৪ ২২২ ৯৩ ৫৫.৫০ ১০৫.২১ ০/২
মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ) ২/৩ ১৭০ ১৩৬ ৫৬.৬৬ ৫৭.৬২ ১/০
মুমিনুল হক (বাংলাদেশ) ২/৩ ১৬১ ১২০ ৫৩.৬৬ ৭১.৮৭ ১/০
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ২/৩ ১১৫ ৮০ ৩৮.৩৩ ৫৫.০২ ০/১
শেন ডরিচ (উইন্ডিজ) ২/৪ ১০৮ ৬৩* ৩৬.০০ ৫১.৯২ ০/১

বোলার ম্যাচ/ইনি. উইকেট ইনি.সেরা ম্যাচেসেরা গড় ইকো ৫/১০
মেহেদী মিরাজ (বাংলাদেশ) ২/৪ ১৫ ৭/৫৮ ১২/১১৭ ১৪.০৬ ৩.৫৭ ২/১
তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ) ২/৪ ১০ ৬/৩৩ ৭/৮৪ ১৩.৪০ ৩.১৪ ১/০
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ২/৪ ৯ ৩/২৭ ৫/৭৩ ১৮.৩৩ ৩.৪৬ ০/০
জোমেল ওয়ারিকান (উইন্ডিজ) ২/৩ ৮ ৪/৬২ ৬/১০৫ ২৪.৫০ ২.৫৯ ০/০
দেবেন্দ্র বিশু (উইন্ডিজ) ২/৩ ৭ ৪/২৬ ৫/৮৬ ২৭.৮৫ ৩.৭৫ ০/০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন