শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আরেকটি লজ্জার হোয়াইটওয়াশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৩১ এএম

অনেকটা অনুমিতই ছিল। সেই সঙ্গে কিঞ্চিত লড়াইয়ের আশাও কী ছিল না? কিন্তু আশার সেই সলতে উবে গেছে কর্পুরের মত। নেপিয়ার, ক্রাইস্টচার্চে আগে ব্যাট করে পেস-স্যুয়িংয়ে লুটোপুটি খেয়েছিল টপ অর্ডার। এবার পরে ব্যাট করে হলো আরও করুণ দশা। সিরিজ হার হয়েছে আগের ম্যাচেই। মিশন ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। তবে তারচেয়ে বেশি ছিল নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস জড়ো করা। হয়নি তার কিছুই। এবার আগের দুই ম্যাচে না খেলা টিম সাউদি একাই সর্বনাশ করে ছেড়েছেন বাংলাদেশের। ডানেডিনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ৩৩০ রানের জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে ২৪২ রানে। ৮৯ রানের লড়াইবিহীন আরেকটি হারে সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার আরেকটি হতাশার দিনে প্রাপ্তি কেবল সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধবলধোলাই হওয়ার বড় কারণ, টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। ছয়ে-সাতে নামা ব্যাটসম্যানরা যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা কেন পারলেন না? দলের ওপরের ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যর্থ সবশেষ কবে হয়েছে?
১, ১ ও ১- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে লিটন দাসের তিনটি ইনিংস। পুরো সিরিজে কোনো ইনিংসে ১ রানের বেশি করতে না পারার দুঃখে বাংলাদেশ ওপেনার আজ যদি ডানেডিনের টিম হোটেলে দরজা বন্ধ করে বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদেনও, তাঁকে সান্ত¡না দিতে পাশে থাকবেন ওপেনিং জুটিতে তাঁর সঙ্গী তামিম ইকবাল। বিপিএল ফাইনালে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করা তামিম ছবির মতো সুন্দর দেশ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ভুলেই গেলেন কীভাবে রান করতে হয়!
আগের দুই ম্যাচে ৫, ৫- ১০ রান করা তামিম গতকাল আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। শূন্য রানে আউট হয়েছেন, সেটির চেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু তাঁর আউট হওয়ার ধরনে। ১২ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটানো একজন ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল চালাতে গিয়ে আউট! তামিম লিটনকে সান্ত¡না দিতে পারেন, ‘তোর চেয়ে আমার যন্ত্রণা কম না।’ হতাশার আগুনে পোড়া তামিম-লিটন পাশে পাবেন মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকারকেও। সিরিজে মুশফিক করেছেন ৪৬, মাহমুদউল্লাহ ৩৬ আর সৌম্য ৫২। টপ আর মিডলঅর্ডার এমন ব্যর্থ এই সিরিজে- কে কাকে সান্ত¡না দেবেন?
মাছের পচন শুরু মাথা থেকে, একটা দলের ইনিংসের পচন শুরু টপ অর্ডার থেকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো ওয়ানডেতে এই ‘পচন’ নিয়েও বাংলাদেশে ২০০ রানের ওপর স্কোর গড়েছে। ছয়ে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন টানা ২টি ফিফটি পেয়েছেন, সাব্বির রহমান তো সেঞ্চুরিই করলেন। ছয়ে-সাতে নামা ব্যাটসম্যানরা যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা কেন পারলেন না? দলের ওপরের ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যর্থ সবশেষ কবে হয়েছে? গত নিউজিল্যান্ড সফরেও বাংলাদেশ ধবলধোলাই হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। ব্যর্থতার মধ্যেও সিরিজে ইমরুল কায়েস-তামিম ১০০-এর ওপর রান করেছিলেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও টানা হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন দাস-মাহমুদউল্লাহর ব্যাট কথা বলেছিল। আরও একটু পেছালে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম-এনামুল হক ছিলেন সবচেয়ে এগিয়ে। করছিলেন ১০০-এর ওপরে রান।
পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছে সবশেষ ২০১৩ সালের মে মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে। ওই সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন নাসির হোসেন। ছয় বছর পর আরেকটি সিরিজে দেখা গেল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর একটা লম্বা বিরতি। এপ্রিলে হয়তো বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হয়ে যাবে। সেই দল ঘোষণা হওয়ার কথা গত দুটি হোম সিরিজ আর এই নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা নির্বাচকদের কাছে। সেটিই যদি হয়, ভীষণ চিন্তা নিয়ে দল করতে বসতে হবে নির্বাচকদের।
তামিম, সৌম্য, লিটন- তিন ওপেনার ব্যর্থ। ব্যর্থ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহও। কেন পুরো টপ অর্ডার ব্যর্থ এ সিরিজে, সেটির একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের আশা, খুব শিগগির এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবেন তাঁরা, ‘একটু চিন্তা করে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করা দরকার ছিল । প্রথম ১০-১৫ ওভার উইকেটে থাকলেই কিন্তু ৬০-৭০ রান হচ্ছিল। আমাদের ৪-৫ উইকেট পড়ার পরও রান হয়েছে। ওখানে যদি (বিশেষজ্ঞ) ব্যাটসম্যান থাকত আর তখন ১০ রান কমও হতো, পরে ঝুঁকি নেওয়া সহজ হতো। মানসিকভাবে আমরা ওটা করতে পারিনি। এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা থাকতে হয়। বাংলাদেশে আগামী কয়েক মাসে আর কোনো সিরিজ নেই। পরে এমন কন্ডিশনে চার-পাঁচ মাস খেলতে হবে। অনুশীলন বলেন, মানসিকতা বলেন, পরিকল্পনা সবকিছু হয়তো এমনই থাকবে। পরিকল্পনা এভাবে করলে আশা করি সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।’

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, ৩য় ওয়ানডে
ডানেডিন, টস : বাংলাদেশ
নিউজিল্যান্ড ইনিংস রান বল ৪ ৬
গাপটিল ক তামিম ব সাইফ ২৯ ৪০ ৩ ১
মুনরো এলবি ব মাশরাফি ৮ ৭ ০ ০
নিকোলস ক তামিম ব মিরাজ ৬৪ ৭৪ ৭ ০
টেইলর ক রিয়াদ ব রুবেল ৬৯ ৮২ ৭ ০
লাথাম ক সৌম্য ব মুস্তাফিজ ৫৯ ৫১ ২ ৩
নিশাম বোল্ড মুস্তাফিজ ৩৭ ২৪ ৩ ২
গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ৩৭ ১৫ ৪ ২
স্যান্টনার অপরাজিত ১৬ ৯ ০ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৩, নো ২, ও ৬) ১১
মোট (৬ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৩০
উইকেট পতন : ১-২১ (মুনরো), ২-৫৯ (গাপটিল), ৩-১৫১ (নিকোলস), ৪-২০৬ (টেইলর), ৫-২৭১ (নিশাম), ৬-২৮৪ (লাথাম)।
বোলিং : মাশরাফি ১০-১-৫১-১, মুস্তাফিজ ১০-০-৯৩-২, রুবেল ৯-০-৬৪-১, সাইফ ১০-০-৪৮-১, মিরাজ ৯-০-৪৩-১, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২৮-০।
বাংলাদেশ (লক্ষ্য ৩৩১) রান বল ৪ ৬
তামিম ক লাথাম ব সাউদি ০ ২ ০ ০
লিটন এলবি ব সাউদি ১ ৪ ০ ০
সৌম্য বোল্ড সাউদি ০ ২ ০ ০
মুশফিক ক মুনরো ব বোল্ট ১৭ ২৭ ৩ ০
রিয়াদ ক মুনরো ব গ্যান্ডহোম ১৬ ৩৬ ১ ১
সাব্বির ক এন্ড ব সাউদি ১০২ ১১০ ১২ ২
সাইফ ক গাপটিল ব বোল্ট ৪৪ ৬৩ ৪ ০
মাশরাফি ক বোল্ট ব সাউদি ২ ৩ ০ ০
মিরাজ ক গাপটিল ব সাউদি ৩৭ ৩৪ ৭ ০
রুবেল রান আউট ৩ ৩ ০ ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ১৮) ২০
মোট (অলআউট, ৪৭.২ ওভার) ২৪১
উইকেট পতন : ১-০ (তামিম), ২-১ (সৌম্য), ৩-২ (লিটন), ৪-৪০ (মুশফিক), ৫-৬১ (রিয়াদ), ৬-১৬২ (সাইফ), ৭-১৭০ (মাশরাফি), ৮-২৩৭ (মিরাজ), ৯-২৪২ (রুবেল), ১০-২৪২ (সাব্বির)।
বোলিং : ৯.২-১-৬৫-৬, বোল্ট ৯-১-৩৭-২, গ্র্যান্ডহোম ৫-০-১৮-১, ফার্গুসন, ১০-০-৫০-০, স্যান্টনার ১০-২-৪৬-০, নিশাম ৪-০-২৪-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : টিম সাউদি।
সিরিজ : ৩ ম্যাচে ৩-০তে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : মার্র্টিন গাপটিল।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন