স্বাধীন বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ও বিস্ময়কর অগ্রগতি এখন আলোচিত বিষয়। এমনকি যা ফুটে ওঠে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষ্যেও। মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি খবরে দেখা যায়, ইমরান খান বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের বিষয়টি বিবেচনায় এনে বাংলাদেশি মডেল পাকিস্তানের অগ্রগতিতে কাজে লাগানো যায় কি না তা তার কর্মকর্তাদের ভেবে দেখতে বলেছেন।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক পরিচ্ছন্নতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অগ্রগতি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, উপমহাদেশের দুটি পারমাণবিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। নজীরবিহীন সফলতা এসেছে খাদ্য চাহিদা পূরণেও। বাংলাদেশ যে সক্ষমতা অর্জন করেছে তা অন্যতম আলোচিত । ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর যে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সে দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। ১৯৭২-৭৫ অধ্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ, স্বপরিবারে শেখ মুজিবের নির্মম হত্যাকান্ড, ক্ষমতায় সেনানায়ক জিয়ার আবির্ভাব সব মিলিয়ে ওই সময়ের সার্বিক টাল-মাটাল পরিস্থিতিতে কারো কারো মনে হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকবেতো?
কিন্তু বাস্তব সত্য হল বাংলাদেশ টিকে গেছে। হঠাৎই ৮১ তে’ ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়ার মৃত্য, ৮২ তে এরশাদের সামরিক সরকারের আগমন, ৯০-তে গণআন্দোলনে এরশাদের পতন ও পরবর্তী আরজকতা বিভিন্নমুখী ঘটনাবলীর পরও বাংলাদেশের আজকের যে সার্বিক চিত্র তাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আগামীর বাংলাদেশে সুশাসন, সামাজিক ন্যায় বিচার বা বৃহত্তর অর্থে সুশাসন কায়েম হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় পরিণত হওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখেতেই পারি।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের এখন বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠির কথাও ভাবার সময় এসেছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মায়ানমার ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বোম্বে ও ভারতীয় রাজধানী দিল্লীতে এবং পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে বিপুলসংখ্যক বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে। ওই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠি যে যেখানে বসবাস করে তারা ওই দেশেরই নাগরিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মায়ানমারের সেনা শাসক গোষ্টি, ও ভারতের সাম্প্রাদায়িক শক্তি ওই বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের নাগরিকত্বের পরিচয় অস্বীকার করছে। মায়ানমার থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ইতোমধ্যেই উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। আর বাংলাদেশ মহত্তে¡র পরিচয় দিয়ে তাদের সাদরে আশ্রয় দিয়েছে। এই আশ্রয়দানের ঘটনাও কিন্তু বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রবলভাবে উজ্জল হয়েছে । মায়ানমার সৃষ্ট সমস্যার মধ্যেই প্রতিবেশি রাজ্য আসামে ‘নাগরিক পঞ্জী’ বা এনআরসি তৈরীতে ৪০ লাখ মানুষকে বাদ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে ৩৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। হতভাগ্য এই মানুষদের নাকি বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হবে। সত্যিই যদি তা’ করা হয় তাহলে সেটা ওই ৪০ লাখ মানুষ ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই হবে বিপর্যয়কর। বিষয়টি ভারতে যতটা না উদ্বেগ-উৎকন্ঠা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে কিন্তু বিষয়টা সেভাবে আলোচিত হচ্ছে না। অথচ এই বিষয়টি উপেক্ষার নয়। এখন থেকেই যদি বাংলাদেশের ফরেন পলিসিতে বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে সামলানো কঠিন হয়ে ওঠবে। আগামীতে বাংলাদেশের আরও অগ্রগতি ও উন্নতি হলে স্বভাবতই উন্নত বাংলাদেশের দায়-দায়িত্ব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠির জন্য বহন যে করতে হবে তা’ বলাই বাহুল্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন