মেঘনা ও গোমতী সম্পর্কিত অসংখ্য ছোট নদী খালবিলও এখন বিপর্যস্ত। বাঁধ, দখল ও উন্নয়নের কারণে মেঘনা ও গোমতীর বড় অংশ শুকিয়ে গেছে। ভারসাম্যহীন পানি প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাচঞ্চলের কৃষি। সেচের জন্য চাপ বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
শুধু তাই নয়, মেঘনা ও গোমতী নদীর ক্ষয়ে সংযুক্ত নদীগুলোকেও দুর্বল করেছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটছট করা মেঘনা-গোমতীর প্রধান শাখা নদ-নদীগুলো এখন মৃত্যুর দারপ্রান্তে! পলি পড়ে ভরাট হয়ে হারাচ্ছে গভীরতা। চর পড়ে অনেক নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। নদ-নদী খনন না করায় পলি পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে একের পর এক নদী। অধিক হারে পলি জমা, নদী সংরক্ষণে অবহেলা, অবকাঠামো নির্মাণ, খনন যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদী রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা নদ-নদী দখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান চালালেও অভিযানের পর পরই নজরদারির অভাবে তাদেরথাবা আবারও বিস্তৃত হয়েছে।
মেঘনা-গোমতী দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। নাব্য সঙ্কটে বালু নদে নৌযান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। মেঘনা-গোমতীর প্রধান শাখা নদী ক্ষিরাই এখন পানির অভাবে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ক্ষিরাই নদীর বুকে বিশাল এলাকা জুড়ে জেগে বালুচর। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষের বেড়েছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে জেলে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য ক্ষিরাই নদী খনন করে বালি অপসারণ না করায় নদীর কোথাও এখন আর পানি প্রবাহ নেই। নদীটিও নব্য ফিরে পায়নি। এক সময়ের ক্ষিরাই নদী পারাপারের জন্য বড় বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার করা হলেও এখন পানি না থাকায় হেঁটেই পার হচ্ছে লোকজন। যেখানে অল্প পানি আছে সেখানে বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে পারাপারের কাজ চলছে। দেবিদ্বার, চান্দিনাসহ আশপাশের কয়েক উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানি সঙ্কট।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলার সূর্যপুর গ্রামের কৃষক আতিক মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদীতে পানি না থাকায় খাবার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া মাঠ-ঘাট ফেটে যাওয়ায় কোন ফসল ঠিকমত ফলানো যাচ্ছে না।
প্রবীন শিক্ষাবিদ আবুল কাশেম বলেন, ক্ষিরাই নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক বছরে এ এলাকার ফসল উৎপাদন কমে গেছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে তিনি মনে করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম শুকিয়ে যায়। এর পর থেকে প্রতি বছরই শুঙ্ক মৌসুমে এ অবস্থা চলে আসছে। এ মৌসুম এলেই নাব্য হারিয়ে গড়াই মৃত নদীতে পরিণত হয়।
শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীর দুই পাড় হয়ে যাচ্ছে দখল। যে যার মতো নদ দখল করে চাষাবাদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নিজ সম্পত্তির মতো ভোগ করছে।
নদী বিশেষজ্ঞদের কথা, মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও নিবিড়। মাটি ও মানুষের স্বার্থে নদী বাঁচানোর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার হলেও সবচেয়ে এটি অবহেলার শিকার হয়েছে বরাবরই।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এখন একরকম বিরক্ত হয়। তাদের সাফ কথা শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট তো থাকবেই। চলতি শুষ্ক মৌসুমে সেচনির্ভর বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন