এক
প্রেম-ভালবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এসব মানবিক গুন আছে বলেই এখনো টিকে আছে এ নশ্রব পৃথিবী। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রুম : ২১)। ভালবাসার অভাবে মানুষ নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। ভালবাসাশূন্য মানুষটির কাছে কেউই নিরাপদ নয়। সত্যিকার ভালোবাসার অভাবে সৃষ্টি হয় হিংসা-বিদ্বেষ, গুম, খুন ও ধর্ষণের মতো অসংখ্য অপরাধ। ভালবাসা ছাড়া পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। তাইতো পরম মমতা ও ভালবাসার নিয়ে রসুল (সা.) এসেছিলেন এ ধরাতে। আল্লাহ তায়ালা রসুল (সা.) কে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশে^র জন্য করুণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে বিশ^বাসীর জন্য ভালবাসা ও রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)।
ভালবাসা দিবস খ্রীস্টান সংস্কৃতি
ভালবাসা উদযাপনের জন্য ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ এর উৎপত্তি খ্রীস্টীয় ৩য় শতকে রোমক সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনামলে। এসময় ক্লডিয়াস একটি বিধান জারী করেন যে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না, কারণ বিবাহ সৈনিকদের যুদ্ধক্ষেত্রের দৃঢ়তাকে ব্যাহত করে। এ সময় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেন এবং গোপনে সৈনিকদের বিয়ের কাজে সহযোগীতা করতে থাকেন। এর পরিণতিতে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল ও উপহার দিত। জনৈক কারারক্ষীর এক মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভ্যালেন্টাইনের বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি তার অন্তিম চিঠিটি ছিল ‘Love from your velentine’। স্ত্রীর প্রতি ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও ভ্যালেন্টাইনের প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা চলে যায় সম্রাটের কানে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে খ্রীস্টীয় ২৭০ শতকের ১৪ই ফেব্রুয়ারী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। এরপর খ্রীস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ১৪ ই ফেব্রুয়ারির এই দিনটিকে ঐ পাদ্রীর নামে নামকরণ করে ভালবাসার উৎসব দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। খ্রীস্টানদের একটি ধর্মীয় উৎসব কালক্রমে রূপান্তরিত হয়েছে জৈবিক কামনা ও যৌনতার উৎসবে।
যদিও দিবসটি ছিল বিবাহিতদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি প্রয়াস কিন্তু এখন অবিবাহিতরাই এই দিনটিকে ভালবাসা প্রদর্শনির উপলক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। যাদের বিবাহের সামর্থ আছে তারা বিবাহ পরবর্তী ভালবাসা গোপনে উদযাপন করতেই পারে। কিন্তু জনসমক্ষে যৌনাচারে মেতে উঠা নিতান্তই সভ্যতার পরিপন্থী। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর ভালবাসা দিবস উদযাপনের নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুকরণ করছে তা সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ও হারাম। বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালবাসা যা ইসলামের নীতি ও আদর্শবহির্ভ‚ত।
ভালবাসা দিবসে মুসলমানদের করণীয়
মুসলিম ভ্যালেন্টাইনরা যাদের অনুকরণে এ দিবস উদযাপন করে, তাদের কাছে ভালবাসা হল নিদারুণ যন্ত্রনা, জটিলতা, সংকট ও নৈতিক মুল্যবোধ বিসর্জন দেবার নাম। তারা ভালবাসার মানুষটিকে পোষোকের মত পরিবর্তন করে নতুন সঙ্গীর সন্ধানে অস্থীর থাকে। তাদের এ বেলেল্লাপনা পরিবর্তনের ধারা চলতে থাকে আজীবন। তাদের সংসার জীবন হল একেকটা আগেড়বয়গিরি। তাদের পারস্পিরিক সম্পর্ক লেলিহান শিখার মত দাউ দাউ করে জ্বলছে। যে আগুনে ছারখার হচ্ছে তাদের সাজানো সকল সুখ-শান্তি। তাদের সে ভালবাসাবিহীন যন্ত্রণাকাতর জীবনে ভালবাসার একটু উপলব্ধি সৃষ্টির জন্যই মূলত তারা তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন