রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

খতমে নবুওয়াত ইসলামের মৌলিক আকীদা

শাহ মাহমুদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১১ এএম

এক 

ইসলামের মৌলিক আকীদা
তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত, নামায, রোজা, হজ¦, যাকাত, কোরআন, কেবলা ইত্যাদি বিষয় যে পর্যায়ের অকাট্য ও সন্দেহাতীত দলিল দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত, খতমে নবুওয়াত তথা মুহাম্মদ (স.) এর শেষ নবী হবার আকীদাও অনুরূপ দলিল দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। এজন্যই তাওহীদ, রেসালাত, আখেরাত, নামায, হজ, যাকাত, কুরআন ইত্যাদির অস্বীকারকারী যেমন স্পষ্ট কাফের, তেমনিভাবে খতমে নবুওত অস্বীকারকারী এবং অবিশ্বাসীরাও কাফের। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রসুল-এ বিশ্বাস যেমন অকাট্য তেমনি তিনি শেষ নবী, তাঁর পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী নেই এ বিশ্বাসও অকাট্য। খতমে নবুওয়াত সরাসরি অস্বীকার করা হোক কিংবা অপব্যাখ্যার অন্তরালে করা হোক সর্বাবস্থায় তা কুফর বলে গণ্য। এজন্য ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) নবুওতের দাবীদার মুসাইলামা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। যদিও তারা মৌলিকভাবে তাওহীদ ও রেসালাতে বিশ্বাসী ছিলো। শুধু নবুওতের দাবী তোলার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম তাদের বিরুদ্ধে জেহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেছেন।
বর্তমান যুগে কাদিয়ানীরা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পরে ভিন্ন এক নবীর অস্তিত্ব স্বীকার করে। সুতরাং তাদেরকে মুসলমান বলার অর্থ হবে এটা মেনে নেওয়া যে, ইসলামে নতুন নবী আসার এবং তার উপরও ঈমান আনার সুযোগ রয়েছে। কোনো মুমিনের পক্ষে এমন বিভ্রান্তিকর কুফরী আকীদা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, খতমে নবুওতের বিষয়টি যুগপরস্পরায় প্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনস্বীকৃত আকীদা এবং ইসলামের মৌলিক বিষয় ।
খতমে নবুওয়াতের দলীল
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির প্রয়োজনানুপাতে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও শুভ পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা নবী-রসুল প্রেরণের ধারা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী।’ (সূরা আহযাব : ৪০)। খতমে নবুওয়াতের ব্যাপারে রসুল (সা.) থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি ঘর অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু ঘরের এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত! আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’ (বুখারী : ৩২৭১; মুসলিম : ৪২৩৯)। রসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘অন্যান্য নবীর মুকাবিলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে,’ তার মধ্যে দুটি বিষয় হলো, ‘আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রসুলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’ (মুসলিম : ৫২৩)। এরূপ অসংখ্য কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদা এই যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না।
কাদিয়ানীদের আকীদা
কাদিয়ানীদের বই পত্রের মাঝে কাদিয়ানীকে যারা নবী হিসেবে স্বীকার করে না তাদেরকে কাফের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হাকীকাতুন নুবুওয়াহ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মির্জা গোলাম আহমদ ঐ অর্থে নবী, যে অর্থে পূর্ববর্তী হযরত মুসা ও ঈসা আলাইহিমুস সালাম নবী ছিলেন। যেমনিভাবে কোনো একজন নবীকে অস্বীকারকারী কাফের, তেমনিভাবে মির্জা গোলাম আহমদের নবুওত অস্বীকারকারীও কাফের।’ এভাবে কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে ধোকা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে ইসলামের নামে একটি নতুন ধর্মমতের প্রচারণা চালিয়ে সমাজে অশান্তি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন