শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মেসিতে মুগ্ধ যখন প্রতিপক্ষ শিবির

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ৬:০৪ পিএম

‘মেসি, মেসি’ স্লোগানে মুখরিত পুরো স্টেডিয়াম। ন্যু ক্যাম্পের খুবই পরিচিত দৃশ্য এটি। তবে রোববার রাতে এমনই এক দৃশ্যের মঞ্চায়ন হলো রিয়াল বেটিসের মাঠ বেনিতা ভিয়ামারিনে। লা লিগা ম্যাচে আর্জেন্টাইন তারকার জাদুকরী ফুটবল শৈলীতে প্রতিপক্ষ স্বমর্থকরা এতটাই মুগ্ধ হলেন যে, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের নামে রব তুলে অভিবাদন জানাতে একটুও কার্পন্য করেননি তারা। ম্যাচ শেষে যে ঘটনাকে ‘অভাবনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন বার্সেলোনা অধিনায়ক।
আগের ম্যাচে তার জাদুকরী নৈপুণ্যেই লিঁওকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে ওঠে বার্সা। দুটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান দুই গোল। সেই পারফম্যান্সই যেন বয়ে নিয়ে যান বেটিসের মাঠে। সঙ্গে জ্বলে ওঠেন লুইস সুয়ারেজও। স্বাগতিকদেরও ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথম লেগে হারের প্রতিশোধ নেয় আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। মৌসুমের শুরুর দিকে ন্যু ক্যাম্পের প্রথম লেগের সেই ম্যাচে মেসির জোড়া গোলের পরও ৪-৩ গোলে হেরেছিল বার্সা।
সেই হিসাব মেটাতেই যেন এবার আরো বিধ্বংসী রূপ নেন মেসি। তাকে আটকাতে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের কোন পরিকল্পনাই কাজে আসেনি। শুরুটা করেন ম্যাচের ১৮তম মিসিটে ২৬ গজ দূর থেকে চোখ ধাঁধানো এক ফ্রি-কিকে। তার বুলেটগতির শট যে পথ ধরে জালে আশ্রয় নেয় তা ফেরানোর উপায় লোপেজ কেন, কোনো গোলরক্ষকেরই জানার কথা নয়। লিগ মৌসুমে যা ছিল তার চতুর্থ ফ্রি-কিক গোল।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সুয়ারেজের অসাধারণ ব্যাকহিল পাস থেকে করেন দলের ও নিজের দ্বিতীয় গোল। একঝাঁক ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বাঁ পায়ের নিঁখুত শটে ব্যবধান ২-০ করে দেন ৩১ বছর বয়সী। আর ৮৫তম মিনিটে পাঁচবারের বর্ষসেরার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করা গোলটি ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। ইভান রাকিটিচের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে প্রায় ১৮ গজ দূর থেকে চিপ শটে ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে বল ভাসিয়ে দেন জালে। শৈল্পীক এই গোলে প্রতিপক্ষ শিবির পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে যায়। গ্যালারিতে তোলেন ‘মেসি, মেসি’ রব। প্রতিপক্ষের মাঠে এমন সম্মান পেয়ে মুগ্ধ মেসিও, ‘আমি খুবই কৃতজ্ঞ। এমনটা আমার ক্ষেত্রে কখনোই হয়নি। আমরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও তারা সবসময় আমাদের দারুণ সমাদর করে।’
লিগে মেসির গোল সংখ্যাও হয়ে গেল ২৯টি, আর মৌসুমে ৩৯টি। দুই হিসাবেই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। ক্যারিয়ারে এটি ছিল তার ৫১তম হ্যাটট্রিক, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সমান। তবে একটা জায়গায় এখনো পর্তুগিজ তারকা এগিয়ে। লা লিগায় এটি ছিল মেসির ৩৩তম হ্যাটট্রিক, রোনালদোর চেয়ে যা একটি কম।
তবে হ্যাটট্রিক করে নয়, মেসি খুশি মূলত তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেই, ‘এটা আমাদের জন্য দারুণ একটি জয়। গোলগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩ পয়েন্ট অর্জন করতে পারা। আমরা ভালো সুযোগ নিয়ে এগিয়ে গেছি। তারা বল পায়ে রেখে দারুণ খেলেছে। তবে সৌভাগ্যবশত আমরা এক মুহূর্তও সংগ্রাম করিনি। আমরা খুব সংগঠিত ছিলাম। মাঝে মধ্যে আমাদের প্রতিপক্ষ অনুযায়ী নিজেদের স্টাইলে মানিয়ে নিতে হয়। ম্যাচের বিশেষ মুহূর্তে আমাদের সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
মেসির কথায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। পুরো ম্যাচে দাপটের সঙ্গেই খেলে আগের ৬ ম্যাচে ৫ জয় ও একটিতে ড্র করা বেটিস। ম্যাচে ৪৩ শতাংশ বলের দখল ছিল বার্সার অনুকূলে। ২০০৪-০৫ মৌসুমের পর এই প্রথম লিগে বলের দখলে পিছিয়ে ছিল কাতালান দলটি। ব্যবধান গড়ে দেয় মূলত আক্রমণভাগ। আক্রমণভাগের বাজে ফিনিশিংয়ের কারণেই জালের দেখা পেতে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাদের। ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য লিখে দিয়েছেন মেসি।
সুয়ারেজও ছিলেন দুর্দান্ত। অবশ্য দুই দু’বার মেসির পাস থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে শট নেন উরুগুয়ান তারকা। তবে ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে ৩২ বছর বয়সী যে গোল করেন তাতে আগের দুই সুযোগ হাতছাড়ার বিষয়টি ক্ষমা করা যায়। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে একাই তিন ডিফেন্ডারকে পরাস্থ করে দারুণ ক্ষিপ্রতায় মৌসুমের ১৮তম লিগ গোলটি করেন তিনি। এই গোল দিয়ে লা লিগায় ডিয়েগো ফোরলানকে টপকে সর্বোচ্চ উরুগুয়ান গোলদাতা বনে যান সুয়ারেজ (১২৮)।
শিরোপার আরো কাছে চলে গেল বার্সেলোনা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে এখন তাদের ব্যবধান ১০ পয়েন্টের। তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের পিছিয়ে ১২ পয়েন্টে। ১১টি করে জয় ও পরাজয়ে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে আটে রিয়াল বেটিস।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন