রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অস্তিত্ব হারাচ্ছে বংশাই নদী

আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

জমি দখল আর বালু উত্তোলনের কারণে মানচিত্র থেকে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বংশাই নদী। নদী যে দিকে যাবে সে দিকেই খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই সুযোগে প্রভাবশালীদের দখলের চাপে মরা খালে পরিণত হয়েছে টাঙ্গাইলের বংশাই নদী। কিন্তু সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ যেন দেখেও না দেখার ভান করছে।
গবেষকদের ধারণায় ১৮০৫ সালে বড় কোন ভ‚মিকম্প থেকে এই বংশী (বর্তমানে বংশাই) নদীর উৎপত্তি হয়েছে। ১৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে শুরু হয়ে জামালপুর-টাঙ্গাইল-গাজীপুর দিয়ে তুরাগ নদীতে মিশে গেছে। এই নদীটির টাঙ্গাইল অংশে রয়েছে ৭৬ কিলোমিটার, যার প্রায় পুরোটাই দখল ও মরাখালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীটিতে কিছুদিন পানির প্রবাহ থাকলেও বছরের বাকী সময়টুকু ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলে ধনবাড়ী হয়ে মধুপুর দিয়ে বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে বংশাই নদী। নদীর পাশে থাকা বাজার এলাকাগুলোতে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তৈরি করছে বহুতল ভবন। এমনকি নদীর ওপর দিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যরে ব্রীজ নির্মাণ হওয়ায় ব্রীজের দুপাশ দিয়ে দখলের সুবিধা নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। যা বর্তমানে আইনী জটিলতার কারণে দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনাররা। কিন্তু বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী পরিষদ (বেলা)’র কর্তৃপক্ষরা জানালেন একমাত্র ভ‚মি অফিসের কর্মকর্তাই পারে এই নদীটি বাঁচাতে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী পরিষদের টাঙ্গাইল জেলা সিনিয়র গবেষক সোমনাথ লাহিরী বলেন, এই নদীর টাঙ্গাইল অংশ রয়েছে বিশাল এরিয়া, তারমধ্যে মধুপুর বাজার ও ওই উপজেলার শশ্মানঘাট বিশাল জায়গা দখল করে আছে। এই দখল বাণিজ্য আজ থেকে না বহুদিন ধরে করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বংশাই নদীর চিহ্ন থাকবে না, যেমন নেই বানার নদীর। নদীর প্রস্থ হচ্ছে ১৭৫ ফুট, সেখান থেকে কমতে কমতে জায়গা রেকর্ড করেছে। এটা ভ‚মি অফিসের উদাসীনতা এবং দায়িত্বহীনতার কাজ বলে আমি মনে করি। সুপ্রীম কোর্ট ২০০৯-২০১১ সালে বেলার মামলার রায় দিয়েছে। যেখানে সকল শাখা নদী, ছোট নদী ও উপ নদী রয়েছে সকল নদীর সিএস খতিয়ান ধরে উদ্ধার করতে হবে এবং নদীর প্রবাহ গতীর মান বাড়াতে হবে। সে কাজটা হচ্ছে না শুধু দখল বাণিজ্য ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে। ভূমি অফিসের সহযোগিতার সিএস দাগ ধরে এই রক্ষা করা সম্ভব, তাছাড় সম্ভব না। আর ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করেই প্রভাবশালীরা এই কাজগুলো করে থাকে।
নদী কিনারাবাসী বলেন, এই বংশাই নদীর অনেক পাশ ছিলো, ধীরে ধীরে দুইপাশ ভরাট হয়ে জমিতে পরিণত হয়ে গেছে। তাই নদীতে পানি থাকে না। নদীর এক পাশ ভাঙ্গে আর একপাশে চর উঠলেই এলাকার প্রভাবশালী লোকজন গাছ লাগিয়ে ও নতুন করে বাঁধ দিয়ে কিছু মাটি ফেলে নিজেদের জমি বলে দাবি করে। এতে অনেকেই ভ‚মিহীন হয়ে পরছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও মিলছে না ভালো পরামর্শ। খুব শিঘ্রই এ নদীকে সরকার যেন রক্ষা করে এটাই দাবি এলাকাবাসীর।
মধুপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল হক বলেন, আমরা নদীর জায়াগা ঘুরে দেখেছি, এখানকার দখলদারদের উচ্ছেদ করতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তার আগে জেলার একটু সাপোর্ট লাগবে, জেলার সাপোর্ট পেলেই কাজ শুরু করবো। আমরা অনেক আগেই এখানে এডি লাইন টানার বিষয়ে কথা বলেছি এবং খুব তাড়াতাড়ি হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। এডি লাইন টানা হলে আইনগন কোন জটিলতা থাকবে না।
তিনি বলেন, যারা ইতিমধ্যে দখল করে আছে, তাদেরকে উচ্ছেদ করতে গেলে আইনগত জটিলতা রয়েছে। যারা নতুন করে দখল নিতে যাচ্ছে তাদের আমরা বাঁধা দিয়েছি এবং বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট চালাচ্ছি।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, নদী ভাঙা ও চর জাগা এডি নাইন টেনে খাস চিহ্নিত করা হচ্ছে প্রথম কাজ। তারপরেই এদেরকে খুব তাড়াতাড়ি উচ্ছেদ করতে পারবো।
প্রাচীনতম বংশাই নদীটিকে বাঁচাতে নদীর দুপাশ রক্ষা করে নদী কিনারার জমির মালিকদের ন্যায্য পাওনা ও অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে নদীকে রক্ষা করে জীবন দান করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন