বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে একটি প্যানেলই আশা করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি। এ ব্যাপারে কিছুদিন আগে তিনি মিডিয়াতে বলেছিলেন, যোগ্য সংগঠকদের রেখে সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হলে দেশের হকির এগিয়ে যাবে। সমঝোতার কথা বলেছিলেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়তো আর হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সমঝোতা নয়, নির্বাচনের পথেই হাঁটছে দেশের হকি। ব্যালটের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হতে পারে বাহফে নির্বাচনের। এমন আভাস স্পষ্ট হলো রোববার দু’পক্ষের মনোনয়নপত্র জমাদানের মধ্যদিয়ে। এদিন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে সাজেদ এ এ আদেল-আবদুস সাদেক পরিষদ। অন্যদিকে আবদুর রশিদ শিকদার ও আলহাজ্ব একেএম মমিনুল হক সাঈদরা নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্যানেলের নাম ঘোষণা করেননি। জানা গেছে, ৩ এপ্রিল আনুষ্ঠিনিকভাবে নিজেদের প্যানেলের নাম ঘোষণা করবেন তারা।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মোহামেডান ও আবাহনী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দু’দল। এবার বাহফে নির্বাচন নিয়েও দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে তারা। দু’ক্লাবের সমর্থন নিয়ে পৃথক প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুস সাদেক ও আলহাজ্ব একেএম মমিনুল হক সাঈদ। সাদেক আবাহনীর সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক হলেও নির্বাচনে কাউন্সিলর হয়েছেন এনএসসি থেকে। অন্যদিকে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি সাঈদ নির্বাচন করছেন মোহামেডানের কাউন্সিলর হয়ে। রোববার দু’পক্ষ ২৮টি পদের বিপরীতে ৬৭টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বাহফে’র অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা সভাপতির বরাবর নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপরেই বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ এবং ঢাকা মহানগর হকি ক্লাব সমর্থিত সাজেদ-সাদেক পরিষদ ২৮টি পদে ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা দেয় এনএসসি’তে। এই প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে আছেন সাজেদ এ এ আদেল, ড. মাহফুজুর রহমান, জাকি আহমেদ, মোস্তফা জামান ও ইউসুফ আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুস সাদকে, যুগ্ম সম্পাদক পদে মাহবুবুল এহছান রানা ও মোহাম্মদ ইউসুফ। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কাজী মইনুজ্জামান পিলা এবং বাকী ২১ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। মনোনয়নপত্র জমাদানের পর আব্দুস সাদেক বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হলে জাতীয় সিনিয়র দল, অনূর্ধ্ব-২১ ও ১৮ দল নিয়ে কাজ করতে চাই। রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে হকির উন্নয়নে কাজ করবো। তাছাড়া সব জেলায় হকি চালু করার চেষ্টা করবো এবং নারী হকিকে আরও বেগবান করতে চাই।’
একই দিন রশিদ শিকদার ও মমিনুল হক সাঈদ পরিষদ ২৮ পদের বিপরীতে ৩৭টি মনোনয়নপত্র জমা দেয়। যার মধ্যে সহ-সভাপতি পদে আবদুর রশিদ শিকদার, প্রতাপ শংকর হাজরা, সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, সারওয়ার হোসেন, মাহমুদ রিবন ও নুরে আলম খোকন। সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদ ও আবদুর রশিদ শিকদার। যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমত, বদরুল ইসলাম দিপু ও আনোয়ারা সরকার এবং কোষাধ্যক্ষ হাজী মো. হুমায়ুন। বাকী ২৫টি সদস্য পদের জন্য মনোয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে একেএম মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘নির্বাচিত হতে পরলে আন্তর্জাতিক ভাবে হকিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো। তার আগে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে হকি টার্ফ বসাবো। চার বছরের জন্য বর্ষপঞ্জি দিব। যেখানে বিভিন্ন ঘরোয়া আসর ও লিগের সময়সূচী থাকবে। পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দলগুলোর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হবো। দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প হবে।’
দু’প্যানেলের বাড়তি মনোনয়নপত্র ৪ এপ্রিল প্রত্যাহারের শেষ দিন তুলে নেয়া হবে। বিভিন্ন সূত্র মতে, সোম ও মঙ্গলবার দু’প্যানেলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলবে। সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত ব্যালটের লড়াইয়ে নামবে দুই পক্ষ। বাহফে নির্বাচনে ৮ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। এতে ৮৬ জন কাউন্সিলর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন