দেশের হকিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব একেএম মমিনুল হক সাঈদ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত বাহফে’র নির্বাচনে তিনি প্রমাণ করেছেন একাগ্রতা ও আর কাজ করার স্পৃহা থাকলে সব কিছুই সম্ভব। সাঈদ দেশের তৃতীয় বৃহৎ ক্রীড়া ফেডারেশনের ১৬তম সাধারণ সম্পাদক। বলা চলে নির্বাচনে জিততে তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নির্বাচনের প্রায় ছয়মাস আগে থেকেই দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন জেলার হকি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে একের পর এক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। দেশের হকির জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় আড়াই বছর ধরে। সদ্য সমাপ্ত বাহফে নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ছিল বেশ শক্তিশালী। সাজেদ-সাদেক প্যানেলকে যেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের কর্তারা সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সেখানে রশিদ-সাঈদ প্যানেলের ভরসা ছিল বেশীরভাগ ক্লাব ও জেলার কাউন্সিলরদের উপর। রশিদ-সাঈদরা নির্বাচনের আগে জয় পেতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। নিজেদের প্রচারণায় শুধু নয় জেলায় জেলায় হকিকে চাঙ্গা করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন একের পর এক জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। প্রতিটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মৃতপ্রায় দেশের হকিকে কিভাবে বাঁচানো যায়। তারপরও একটি পক্ষের লক্ষ্য ছিল রশিদ-সাঈদরা যেন নির্বাচনে জয়ী হতে না পারেন। প্রয়োজনে নির্বাচন বন্ধ রাখার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। কিন্তু কোন কারসাজিই কাজে লাগেনি। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে গণতন্ত্রের। গণতান্ত্রিক উপায়েই কাউন্সিলররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন শতভাগ। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকেই বেছে নিয়েছেন।
একদিন আগে শেষ হওয়া নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন,‘দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় ধরে হকি ফেডারেশনের নির্বাচন হয়নি। একটি পক্ষ খেলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। কিছু ক্লাবকে শক্তি প্রদর্শন করে ব্যক্তি ইচ্ছার উপর নির্ভর করে রেখেছিল। ফেডারেশনে কাউকে সম্পৃক্ততা না করার কারণেই হকি ঝিমিয়ে পড়েছিল। ফলে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে একটি আশংকার তৈরী হয়। তবে সব কিছু পেছনে ফেলে ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকটি স্বচ্ছ্ব নির্বাচন উপহার দিয়ে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এই নির্বাচনের মাধ্যমে সকল ক্রীড়া ফেডারেশনের কাছে গণতন্ত্রের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। আমি মনে করি ঝিমিয়ে পড়া সংগঠকরাও নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজ শুরু করবেন। যদি ক্রীড়াঙ্গণ এগিয়ে য়ায়, তাহলে যুব সমাজ সঠিক পথে পাড়ি দেবে। একটি দেশ পূনর্গঠিত হবে।’
সাঈদ জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। তার কথায়,‘আমি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জিং কাজ আমার পছন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুব লীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং যার আদর্শে আমি প্রতি নিয়ত চলছি সেই ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আমাকে চ্যালেঞ্জ নিতে সহায়তা করেছেন। তাই আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।’
সাঈদ আরো বলেন,‘নির্বাচনে অংশ নেয়া দু’প্যানেলের প্রার্থীই জয়লাভ করায় ভালো হয়েছে। আমরা মিলে-মিশে কাজ করবো। প্রতিপক্ষ প্রার্থী যিনি সম্পর্কে আমার চাচা (আবদুস সাদেক) তার সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি বলেছি, প্রয়োজনে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিম) আপনাকে (আবদুস সাদেক) প্রধান উপদেষ্টা করে নিয়ে আসবো। আপনার অভিজ্ঞতাকে পাশে নিয়ে আমি চলতে চাই। তিনিও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
বাহফে’র নতুন সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই কাউন্সিলরদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই তারা ভালো কিছু করতে চাইবেন। তিনি বলেন,‘ভোটের আগে প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের কাছে ওয়াদা করেছেন যে, নির্বাচিত হলে তারা দেশের হকির উন্নয়নে কাজ করবেন। ভোটারদের কাছে জবাবদিহীতা রয়েছে সবার। আমরা যখন একাট টিম হিসেবে কাজ করবো, তখন সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।’
আমি একজনের নয়, সবার সাধারণ সম্পাদক হতে চাই। বাংলাদেশের সকল হকিপ্রেমির দায়িত্ব আমি নিয়েছি। সারাদেশে সম্ভাবনার হকিকে পুণর্জাগরনের জন্য কাজ করবো।’
সাঈদ জানান,ফেডারেশনের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর প্রথমেই বর্ষপঞ্জি তৈরি করবেন। এরপর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিম) করতে চান তিনি। ইশতেহার বাস্তবায়নের শতভাগ চেস্টা থাকবে তার। ২০২৬ সালের হকি বিশ্বকাপে যেন বাংলাদেশ খেলতে পারে এ লক্ষ্যে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে চান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন