রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তুষার থেমে নদীকে দিলো কান্না

আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। আমি বের হতে পারছি না। এখান থেকে বের হতে পারবো কিনা তাও জানি না। তোমরা আমাকে এখান থেকে বের করো। আমাকে সাহায্য করো।’
রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারের আগ্নিকান্ডে আটকা পড়ার পর নাহিদুল ইসলাম তুষার তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে এভাবেই জীবন বাঁচাতে সাহায্য চান। কিন্তু তার বাঁচার এমন আর্তনাত কেউ সাড়া দিতে পারেনি। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে আগুন চিরতরে নিভিয়ে দেয় তুষারের প্রাণ।
জীবনে বড় হয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন ছিলো তুষারের। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে। চাকরির পাশাপাশি খেলাধুলাও ছিলো তার জীবনের বড় একটি অংশ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামে তার বাড়ি। বাবা এছাক আলী, মা নূরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও ছোট ভাই শিশির। চার বছর আগে মাহমুদা আক্তার নদীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় তুষারের। দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও তাদের কোন সন্তান ছিলো না। বিয়ের পর থেকে মাহমুদা আক্তার নদী ও তুষারের জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিলো। অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার সংসার ছিলো তাদের। নদীর অনেক স্বপ্ন ছিলো তুষারকে ঘিরে। কিন্তু এফ আর টাওয়ারের দশ তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পাল্টে যায় নদীর জীবন।
তুষারের সাথে দেখা নদীর সব স্বপ্ন আর ভালোবাসা ওই আগুনে এক মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায়। ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় অন্যদের সাথে তুষারের জীবন প্রদীপও মূহূর্তের মধ্যে কেড়ে নেয়। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আগে স্ত্রী নদীর কাছে ফোন করে শেষ কথা বলে যান তুষার।
স্ত্রীর কাছে বলা শেষ কথাগুলো, ‘আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলো। আমাকে মাফ করে দিতে বলো।’ এরপরই বন্ধ হয়ে যায় কথা। নদী মোবাইলে বার বার হ্যালো বললেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো শব্দ আসেনি। শব্দ আসবে কি করে? শব্দের মেশিন যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
স্বামীকে এভাবে হারিয়ে নদীর কান্না থামছে না। কথা বলার সময় স্ত্রীর কাছে তুষারের আর কোন কিছু চাওয়ার ছিলো না। কিন্তু নদী তার স্বামীর অকাল মৃত্যু কোনভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না। তার বিশ্বাস তুষার তাকে ফোন করবে। কিন্তু তার মোবাইলে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব অনেকের ফোন আসে। তবুও তুষারের ফোন আসে না।
এফ আর টাওয়ারের আগুন নদীর পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে। এখন তার আগামীর দিন কি হবে তা শুধুই তুষার ও নদীর পরিবারের সদস্যরাই ঠিক করতে পারে। তুষারের বাড়িতেই অবস্থান করছেন নদী। শ্বশুর বাড়ির লোকদের কথা, অকালে স্বামী হারানোর শোক নদী কতদিনে কাটিয়ে উঠতে পারবে তা কেউই বলতে পারে না। এখন শুধু নদীর ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষায় থাকতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Shohel Rana ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
অগ্নিকান্ডে নিহত সকলকে আল্লাহ জান্নাত নসীব করুন, শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আল্লাহ স্বান্তনা প্রদান করুন, আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, আমিন।
Total Reply(0)
Mahafuz Alam Sarker ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও যদি প্ল্যান পাশ করাতে যায়, উনাকেও ঘুষ দিয়েই পাশ করাতে হবে
Total Reply(0)
Muhtasin Mezban ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
দুবাইতে ৪০ তলা ভবনে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের পর খবর পাই একজন আহত হয়েছে এবং সে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। তারপরও নিজেদের ডিজিটাল দাবি করেনা । অথচ আমার দেশের দুর্নীতিবাজরা ডিজিটালের দোহাই সুর ছাড়ে ! জুতা মারতে ইচ্ছে করে এদের মুখে ।
Total Reply(0)
মবিন মবিন ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
বাম্বি বাকেট দিয়া পানি আনার বুদ্ধি আছে আমাদের কিন্তু নিচে নেট বা কাপড় দিলে যে অনেকগুলা জীবন বাচতো সেই বুদ্ধি নাই
Total Reply(0)
Nazirul Islam ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনায় "মহান আল্লাহ্ তায়ালা'র সাহায্য প্রার্থনা করছি। একই সাথে আশা করছি আহতরা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
Total Reply(0)
Mohammad Uddin ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
কি লিখব? কাকে দোষ দিব? কার কাছে বিচার দিব? আমি কি আসলেই নির্বাক হয়ে গেছি? দুইটা মাস না যেতে আবার আরেক ট্রেজেডি ওহ নিতে পারি না
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাত নাসিব করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন