(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ডঞঙ সদস্যদের মধ্যে তিন চতুর্থংশেরও অধিক দেশ স্বল্পউন্নত এবং অর্থনীতির বাজারে পরিবর্তনশীল বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত। ২০১৫ সালের ডঞঙ কর্তৃক প্রকাশিত এবং ইন্টানেটে প্রচারিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, তার ১৬৪টি সদস্য রাষ্ট্র থেকে শুধুমাত্র ত্রিশ শতাংশ দেশ উন্নত এবং বাকিগুলো অনুন্নত। উরুগুয়ে রাউন্ডের অষ্টম বছরের ষাট শতাংশের ও অধিক দেশ স্বাধীনভাবেই বাণিজ্য সহজীকরণ কর্মসূচি (খধঁহপযবফ রহ ঢ়ঁহঃধ ফবষ ঊংঃব রহ টৎঁমঁধু) বাস্তবায়নের সপক্ষে। একই সময়ে পূর্ববর্তী রাউন্ডের তুলনায় উরুগুয়ে রাউন্ডের আলোচনার মধ্যে উন্নয়শীল দেশগুলো বেশি সক্রিয় ও প্রভাবশালী ছিল। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য মর্মে যে ধারণা প্রচলিত ছিল তার অবসান ঘটে।
ডঞঙ এর ব্যবস্থাপনায় স্বল্পউন্নত দেশগুলোকে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় প্রদান এবং সামগ্রিক উন্নয়নে এর সক্রিয় ভূমিকা অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞাদের নিকট সমাদৃত। গ্যাট এর পূর্বেকার চুক্তিগুলোও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্যিক কল্যাণে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
উরুগুয়ে রাউন্ড শেষে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য পালনীয় বাধ্যবাধতাসমূহ উন্নয়নশীল দেশগুলোও নিজেদের জন্য গ্রহণ করতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু কার্যনির্বাহী সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে স্বল্প উন্নত দেশগুলোর দরিদ্রতাকে বিবেচনায় এনে দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ প্রদান করা হয়। যাতে সেসব রাষ্ট্র মূলনীতির আলোকে অর্পিত বাধ্যবাধকতার সাথে সময়ের সমন্বয়পূর্বক নীতিমালা বাস্তবায়নে সক্ষমতা লাভ করতে পারে। উক্ত রাউন্ডে আরও একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, শিল্পোন্নত দেশগুলো স্বল্পউন্নত দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি পণ্যের দ্রæততর প্রবেশাধিকার বাস্তবায়নে ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করবে। এই ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরত্বপূর্ণ দিক হলো, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট পন্যের মান বজায় রাখা। কোন কিছু আবিষ্কার, উদ্ভাবন, নতুনত্ব আনয়ন, গবেষণা, নকশা, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, রেকর্ডিং, বই, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও অনলাইনে সেবার ক্রয় বিক্রয় (তথ্য ও সৃজনশীল সংশ্লিষ্ট) পরীক্ষামূলক বিষয়াদি মেধাস্বত্বের অন্তর্ভুক্ত। উদ্ভাবকগণকে তাদের উদ্ভাবন ও সৃষ্টিকর্মের অপব্যবহার প্রতিরোধে যথাযথ অধিকার দেয়া উচিত, যাতে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়। ব্র্যান্ড নাম বা পণ্য লোগো ট্রেডমার্ক হিসেবে উদ্ভাবন পেটেন্টে নিবন্ধিকরণ ও মেধাস্বত্ব আইনের আওতাভুক্ত। এই চুক্তি দ্বারা কপিরাইট, পরিসেবার বাণিজ্যিক চিহ্ন, ভৌগলিক সুনাম, শিল্প ডিজাইন, পেটেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এর ডিজাইন বিন্যাস (ঃড়ঢ়ড়মৎধঢ়যরবং) সহ ট্রেডমার্ক ও অপ্রকাশিত তথ্যের গোপানীয়তা সংরক্ষণ করে।
ডঞঙ এর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত (উরংঢ়ঁঃব ংবঃঃষরসবহঃ ইড়ফু-উঝই) একটি বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র। এর উদ্দেশ্য সদস্য দেশগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য নিশ্চিত করা ও চুক্তিভুক্ত শর্তসমূহ পুননিরীক্ষণ এবং ক্ষতিগ্রস্থ দেশকে অভিযুক্ত দেশ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সাহয়তা দান। এছাড়া ও উঝই চুক্তির বিধান বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ প্রদান এবং যেসব দেশ বিধি বহির্ভুত কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
ডঞঙ এর ব্যবস্থাপনায় বিরোধ নিষ্পত্তির সম্পূর্ণ দায়ভার উঝই এর উপর ন্যস্ত। এতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী প্যানেল রয়েছে, যা আপীলের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রত্যাখ্যানের বিষয় বিবেচনা করে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্যানেলের একক কর্তৃত্ব বা পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে, এ বিষয়ে ডঞঙ এর ব্যবস্থাপনা পূর্বসূরি এঅঞঞ এর চেয়ে আরো শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বয়ংক্রিয়। উঝই এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এর অকার্যকারিতায় পুরো ডঞঙ ব্যবস্থাপনায় ধবংশ নেমে আসতে পারে; একইভাবে তা অন্তঃসারশূণ্য হিসেবে ও পরিলক্ষিত হয়।
এ সংস্থার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৪ সাল পযন্ত গত ২০ বছরে প্রায় ৪৮৮ টি দাবি উত্থাপিত হয়েছে, এই বিশাল সংখ্যা হতে আংশিক বিরোধ মীমাংসিত হয়েছে। ডঞঙ বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা খুব ব্যয়বহুল, একটি মামলার আপীল পর্যায়ের পরামর্শের ক্ষেত্রে আর্থিক ও মানবিক প্রস্তুতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, এতে (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত) তিন বছরের একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। নিচের সারণিতে এ বিচার প্রক্রিয়ার সময়সাপেক্ষিকতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। উপরন্ত, স্থানীয় আইনি দক্ষতার অভাবে এই ক্রমবর্ধমান জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ায় বেগ পেতে হয়, যার ফলে বিকল্প না থাকায় অনেক উন্নয়নশীল দেশকেই পেশাদার বিশেষজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ করতে হয়।
বিগত বিরোধ নিষ্পত্তির অভিজ্ঞতা নিম্নের বিষয়াবলি নির্দেশ করে: ১। উঝট তে বিশেষাধিকার মূলক বিভিন্ন বিধান এখনও পর্যন্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি ২। এই বিশেষাধিকারমূলক বিধান বিষয়ে কোন বাস্তবায়ন কার্যবিধি না থাকায় উন্নয়নশীল দেশ যে সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে: ৩। বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমান অংশগ্রহণ সহজতর করার জন্য বিশেষাধিকারমূলক মূলনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সীমিত উন্নতি সত্তে¡ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে উন্নয়ণশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ এখনো উন্নত দেশগুলোর সমান হওয়া সমান হওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ডঞঙ বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত উন্নত এবং অনুন্নত দেশের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রদান করতে সক্ষম হয়নি। ডঞঙ এর উপরোল্লিখিত মূলনীতি ও চুক্তিগুলোর ব্যাপারে ইসলামী আইনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ইসলাম পূর্ব আরব উপদ্বীপে মুক্ত ব্যবসা বাণিজ্য ও অবাধে পণ্য বিনিময় ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। পবিত্র কুরআনের সূরা কুরাইশে উল্লেখ করা হয়েছে ঃ নিশ্চয়ই কুরাইশরা অভ্যস্ত ছিল,তারা অভ্যস্থ ছিল শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের প্রতি। অতএব, তাদের এই কাবার রবের ইবাদত করা উচিত, যিনি তাদেরকে ক্ষুধামুক্ত করে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এবং ভীতিমুক্ত করে নিরাপত্তা নিশ্চত করেছেন।
কুরাইশরা ছিল এক ঐক্যবদ্ধ জাতি, তারা তাদের গতানুগতিক বাণিজ্যের উদ্দেশ্য শীতকারে ইয়ামেনে ও গ্রীষ্ম কালে সিরিয়ার নিরাপত্তার বেষ্ঠনীতে সফরে বের হতো আরব বিশ্বের যে অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা পেত তা ছিল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। সে সময় আরবে আদর্শিক ও স্বাধীন বাণিজ্যের ব্যাপক পরিচিতি ও প্রচলন ছিল। কুরআনে অবাদ বাণিজ্যের বিপক্ষে কোন বিধান অবর্তীর্ণ হয়নি, বরং মানবতার সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তাকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঐসব বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেখানে উৎপাদন বা পণ্যের লেনদেন মানবকল্যাণ তথা গোটা সমাজের অর্থব্যবস্থার অন্তনিহিত স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। মহান আল্লাহ বলেন: হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, কেবলমাত্র তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় (তা বৈধ), আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।
তৎকালীন আরব ভূখন্ডে বা কাছাকাছি ভৌগলিক এলাকায় অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্যে কোন প্রকার বাধা বা বিধিনিষেধ ছিল না। ইসলাম ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতি স্বাধীনতা এবং উদারতার নীতি অনুমোদন করে, স্বয়ং মুহাম্মদ স. এই পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অবাধ ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন সূরা আল জুমুআয় আল্লাহ বলেন: অতঃপর সালাত শেষে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (অর্থ্যাৎ জীবনোপকরণ) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। অর্থ্যাৎ নামাজ শেষে জীবিকা উপার্জনের জন্য কর্মবব্যস্ত হতে হবে, পাশাপাশি যাবতীয় লেনদেন, ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া বিধিনিষেধ অনুসরণ করলে লাভবান বা সফলকাম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এখানে আরদ বা জমিন শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট কোন ভূখন্ডকে বুঝায় না বরং সারা বিশ্বকে বুঝায়।
পৃথিবীর একচতুর্থাংশ বিচরণশীল ভূমি ও বাকি তিন চতুর্থাংশ পানি তথা বিশাল সমুদ্র। অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের সিংহভাগ সমুদ্রনির্ভর। এই সমুদ্র সীমাতে ও ব্যবসা বাণিজ্য করার ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে। সমুদ্র কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য ও লেনদেনের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন: দুটি সমুদ্রের জলের বহমান দু ধরণের, কখানো সমান হয় না, একটি মিষ্টি ও তৃষ্ণা নিবারক এবং অন্যটি লোনা, উভয়টি থেকেই তোমরা তাজা গোশত (মাছ) আহার করে থাক, ব্যবহার্য অলংকারাদি আহরণ কর, তুমি তাতে তার বুক ছিরে যানবাহন (সমুদ্রে চলমান জাহাজ) চলতে দেখ, যেন তোমরা তার অনুগ্রহ অšে¦ষণ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
ব্যবসা বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়। কেননা ইসলাম সামগ্রিকভাবে সমাজের সর্বস্তরে আদল, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়। ব্যবসা বাণিজ্যের অংশীদার হিসেবে অন্য ধর্মে বিশ্বাসীকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে না। পাশাপাশি অংশীদারের মধ্যে ব্যবসায়িক কোন দ্বন্ধ বা বিরোধ সৃষ্টি করার বা আচরণে বৈষম্য দেখানোর অধিকার ইসলামী মূলনীতি অনুমোদন করে না। মুসলিম ব্যবসায়ীকে অমুলিমদের সঙ্গে কৃত চুক্তি সে রূপেই সম্পাদন করতে হয়। বরং ইসলামী মূলনীতি প্রতিটি চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার নির্দেশ করে। কোন দল, মত, গোত্র, ধর্ম, জাতি, বর্ণ, এ ক্ষেত্রে কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না। এই বিষয়টি ও কুরআনের অনেক আয়াত ও রাসূল স. এর হাদীস দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যেমন মহান আল্লাহ বলেন: যদি তোমাদের একে অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়, তার উচিৎ অন্যের আমানত পরিশোধ করা এবং স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করা। একই বিষয়ে সূরা নিসাতে ও বলা হয়েছে: নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন মানুষের মধ্যে কোন বিচার মীমাংসা করবে তখন মীমাংসা করো ন্যায়ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদেরকে সদুপদেশ দান করেন।
রাসূল স. নিজেও মুশরিক ও অমুসলিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তাঁর পরিচালিত ব্যবসায়িক লেনদেনে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, ব্যবসায়ী ও পন্যের প্রতি বৈষম্যহীন ন্যায়সঙ্গত আচরণের ওপর ভিত্তি করেই এ বিষয়ক মূলনীতিসমূহ প্রণীত হয়েছে।
প্রচলিত ডঞঙ এর মূলনীতি বৈষম্যহীন অবাধ বানিজ্য, সুষম ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতমূলক বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করে; কিন্তু কখনো সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার নিশ্চয়তা দেয় না। অন্যদিকে শরীয়াহ আইনে ব্যবসায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি একাধিপত্য ও ডাম্পিংসহ সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিকর বিষয়ে প্রতিরোধমূলক কঠোর ব্যবস্থার বিধান আরোপ করে। একাধিপত্য নীতি, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যের প্রতিবন্ধক, যা শরীয়াহ আইনের সাথে সামঞ্জ্যহীন। রাসূল স. এ নীতি নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলে: যারা পণ্য কুক্ষিগত করে রাখে, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী।
উঁসঢ়রহম হচ্ছে বাজার দখলের লক্ষ্যে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে অবৈধ্য উপায়ে পণ্য রপ্তানি, যা অবাধ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রতিবন্ধক। যদিও পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সরাসরি ডাম্পিং সংক্রান্ত কোন বিধিবিধান নেই, কিন্তু শরীয়াহ মূলনীতির সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী তা অবশ্যই অনৈতিক ও মানব কল্যাণের প্রতিবন্ধক। একদা ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাব রা. বাজার পর্যবেক্ষন করেছিলেন। তিনি দেখলেন, এক ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের কম মূল্যে কিশমিশ বিক্রয় করছে। তৎক্ষণাৎ তিনি ব্যবসায়ীকে নির্দেশ দেন, হয়তো পণ্যের দাম বাড়ায়, নয়তো বাজার ত্যাগ করো। এই মূলনীতি বা সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোন সাহবী, এমনকি অদ্যাবধি কোন ইসলামি চিন্তাবিদ কোন প্রকার আপত্তি করেননি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তির আওতায় ডাম্পিং নিন্দা করা হয় কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়নি।
শরীয়ার মূলনীতি বা বিধানের মধ্যে চুক্তি বা লিখিত দলিলের মাধ্যমে পূর্বানুমান খুবই সুচারু রূপে উল্লেখ রয়েছে। শুল্ক বা মাসুল সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিশ্রæতি বা ঘোষণা, যেটি চুক্তি হিসেবে মর্যাদা পায় না, সেসব প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণার শরীয়াহর আলোকে অঙ্গীকার বা চুক্তির ন্যায় সম্পাদন করার বিধান রয়েছে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন