১লা মার্চ থেকে ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশসহ সকল ধরণের মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও মানছেন না লক্ষীপুরের রামগতি-কমলনগরের জেলেরা। জটাকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগাম ও লক্ষীপুসহ বিভিন্ন জায়গায়। এ ছাড়াও রামগতি উপজেলার বাংলাবাজার মাছঘাট, স্লুইজগেট, পাটারিপাড়া, আলেকজান্ডার, গাবতলী কমলনগর উপজেলা সদর হাজিরহাট, করুনানগর, চরলরেন্স, করইতলা ও তোরাবগঞ্জসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে ব্যবসায়িরা। আবার অনেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করছেন ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বিচারে মাছ শিকার দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন প্রশাসন। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কোস্টগার্ড মৎস্য বিভাগ প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও আড়ৎদারদের সাথে আঁতাত করে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করেন। তারা নদী থেকে আসার পর আবার আগের নিয়মে মাছ ধরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারের কর্তা ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করেই মাছ শিকার করা হচ্ছে বলে জানান- জেলে ও আড়ৎদাররা। সরকার ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সকল ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও কে শুনে কার কথা। যার কারনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও অলিগলিতে অবাধে চলছে মাছ বিক্রি।
জানা যায়, চাঁদপরের ষাটনল থেকে রামগতির আলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার এলাকা পানি লবনাক্ত থাকার কারণে সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ার জন্য এ এলাকায় প্রবেশ করে। এর জন্য এ এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও জেলেরা মৎস্য অফিস ও কোস্টগার্ডকে ম্যানেজ করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছে। কিছু জেলে আড়ৎদার ও প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের লোভের কারণে মাছশূণ্য হওয়ার শঙ্কা রয়েছে মেঘনায়। আসছে ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ সংরক্ষণের জন্য রাজনৈতিক দলীয় কিছু লোকজনের সহযোগিতায় দাদনদার, আড়ৎদার ও মাছঘাট ব্যবসায়িরা জেলেদের মাছ শিকারে বাধ্য করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, আড়ৎদার দাদনের দেনার কারণে তাদের কথামত নদীতে মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছি। দাদনের টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কথা তারা শুনতে হবে।
পাটারিরহাট মাছঘাট ব্যবসায়ি ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এমরান হোসেন মঞ্জুর জানান, মৎস্য অফিসারকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন লুধুয়াঘাটের ৩০টি বাধাজাল নদীতে মাছ ধরতে যায়। তিনি মাঝে অভিযান দিয়ে জাল ধরে; আবার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। এ বাধাজালের কারনে নদীতে মাছশুন্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লধুয়া মাছঘাট ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মেম্বার জানান, অভিযানের কারণে এ ঘাট থেকে কারেন্ট জাল এখন আর নদীতে যায় না। বাধাজাল দীঘদিন থেকে এ ঘাটে মাছ ধরে আসছে। হঠাৎ অভিযানের হওয়ায় দু-একটা বাধাজাল মাঝে মাঝে নদীতে যায়। তারা মাছ ধরে ঘাটে আসে না। মাছ ধরে মাটের বাইরে বিক্রি করে বলে জানান ওই মাছঘাট সভাপতি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুছ জানান, মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযান দিয়ে এ পর্যন্ত ৬টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে এবং আনেকগুলি বাধাজাল পোড়ানো হয়েছে। যাদের জাল ও নৌকা জব্দ করছি তারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। তাছাড়া কোস্টগার্ড যদি আরেকটু তৎপর হতো তাহলে আমাদের আরও সফল হতো।
উপজেলা কোস্টগার্ড কন্টিজেন্ট কমান্ডার মো. রেজাউল করিম জানান, আমিতো নতুন এসেছি। আমি আসার পর নদীতে নৌকা শূণ্য হয়েছে। সরকারের মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে কোস্টগার্ড সব সময় অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন